এখন চুরিও ‘ডিজিটাল’ হয়ে গেছে! সেই ডিজিটাল চুরিতে বিদ্যুৎ চুরি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অভিনব পদ্ধতি। মিটারে বিশেষ যন্ত্র লাগিয়ে রিমোটের মাধ্যমে কন্ট্রোল করেই চুরি করা হচ্ছে বিদ্যুৎ! আর এই অভিযোগে কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ গত এক বছরে পর্যটনের একটি হোটেলসহ বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্টানকে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের তথ্য মতে, এই সময়ে অভিনব কায়দায় বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের আওতাভূক্ত ‘ভাড়া চালানো’ ব্যক্তি পরিচালনায় থাকা মোটেল লাবনীকে সর্বোচ্চ ২৪ লাখ ৩ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
সূত্র মতে, পর্যটন কর্পোরেশনের এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সাল থেকে অভিনব কায়দায় বিদ্যুৎ চুরি করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একই ভাবে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া এলাকায় অবস্থিত শাহ আল বরফ কলকে ২৪ লাখ টাকা, আহমদিয়া বরফ কলকে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, আমজাদিয়া বরফ কলকে ১৯ লাখ টাকা, সোহেল রানা বরফ কলকে ১৩ লাখ টাকা ও এন এ আইস প্ল্যান্টকে ৮ লাখ ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কক্সবাজারস্থ বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগে দেখা যেতো তার দিয়ে অবৈধ ভাবে সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ চুরি করতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে মিটারে বিশেষ যন্ত্র লাগিয়ে রিমোটের মাধ্যমে কন্ট্রোল করে বিদ্যুৎ চুরি করছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো।’
তিনি বলেন, ‘অভিনব কায়দায় এই বিদ্যুৎ চুরির বিষয়টি নজরে আসার পর কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, জরিমানা, বকেয়া বিল আদায় এবং ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে কারাদন্ডও দেয়া হচ্ছে।’
প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করেন, পর্যটন এলাকা হিসাবে কক্সবাজারে সবার সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়টাও নিশ্চিত করতে কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ কাজ করছে কক্সবাজার বিদ্যুৎ ভবন।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সুত্র জানান, কক্সবাজারে গত এক বছরে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ৮৫ লাখ টাকা বকেয়া বিলের বিপরীতে মামলা করা হয়েছে ১৭০টি। বিভিন্ন কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এক হাজার ৪৬৬টি।
সুত্র মতে, জেলায় মোট বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ১৬ কোটি টাকা। তার মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া রয়েছে কক্সবাজার পৌরসভার ৫২ লাখ টাকা, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ৩৩ লাখ টাকা, নিশান আইস নামের একটি বরফ কলে ৩৩ লাখ টাকা।
জানা যায়, প্রতিবছর লোডশেডিংয়ের কারণে পর্যটন শহর কক্সবাজারে বসবাসকারি প্রায় ২৩ লাখ মানুষের নাকাল অবস্থা সৃষ্টি হতো। পাশাপাশি অচল হয়ে পড়তো হোটেল মোটেল গেস্টহাউস, চিংড়ি উৎপাদনের হ্যাচারি, বরফ কলসহ কয়েক হাজার ক্ষুদ্র শিল্প, পোলট্রি খামার ও প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও গ্রামের অবস্থা হয়ে পড়তো অনেক বেশি শোচনীয়। রাতের বেলা শহরের অধিকাংশ এলাকা ডুবে থাকতো অন্ধকারে। এতে চুরি-ছিনতাই বেড়ে যেতো। অনেকেই এই লোডশেডিং থেকে বাঁচতে জেনারেটর ব্যবহার করেছেন। কিন্তু জেনারেটরের বিরক্তিকর শব্দের কারণে কক্সবাজার শহরবাসি এবং পর্যটকদের মাঝে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
সুত্র মতে, গ্রামে দৈনিক বিদ্যুৎ ছিল মাত্র ৪/৫ ঘন্টা বা তারও কম। কিন্তু সময় এখন পাল্টে গেছে। বর্তমানে কক্সবাজারে কোন লোডশেডিং নাই বললে চলে।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পিডিবির অধীনে কক্সবাজার শহরে ৩৮ হাজার ৬২৮ জন এবং পার্বত্য লামাসহ জেলার অন্যান্যস্থানে আরো প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এছাড়াও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনে রয়েছে আরো লক্ষাধিক গ্রাহক।
তিনি জানান, কক্সবাজারের সাত উপজেলায় প্রায় এক লাখ ২৩ হাজার গ্রাহকের দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৬৬ থেকে ৬৮ মেগাওয়াট। তার মধ্যে ৩৬ মেগাওয়াট পিডিবির অধীনে।
মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করছেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ ছাড়া পিডিবির অধীনে চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে কোন লোডশেডিং নেই।