বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা গণনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।শুক্রবার সকাল ১০টায় কক্সবাজারের পাহাড়তলী এলাকা থেকে প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়। রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি করতে কক্সবাজার জেলাকে ৪৯টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে।শুক্রবার থেকে শুরু খানা জরিপ বা পরিবারভিত্তিক তালিকা তৈরির কাজ। এটি চলবে ৫ দিন। আর ব্যক্তি গণনা চলবে মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে খানা তালিকার কাজ। মার্চে শুরু হবে চূড়ান্তভাবে শনাক্তকরণ কার্যক্রম। শনাক্তকরণে শেষে রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র দেবে বাংলাদেশ।
জানা যায়,মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে অবৈধভাবে আসা রোহিঙ্গায় ঠাসাঠাসি কক্সবাজার জেলা। সরকারি খাতায় এখন কক্সবাজারের দুটি ক্যাম্পে উখিয়ার কুতুপালং এবং টেকনাফের নয়াপাড়ায় বৈধ রোহিঙ্গার সংখ্যা ৩৩ হাজার। তবে এর বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ১০ লাখের বেশি বলে ধারণা করা হলেও বাস্তবে সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই কারো কাছে।
তাই এই রোহিঙ্গা শুমারীর উদ্যোগ। ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে পরিবারভিত্তিক তালিকা তৈরির পর, মূল শুমারী হবে আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে।
এই কার্যক্রম শুরুর আগে রোহিঙ্গা বসতিতে চালানো হয়েছে প্রচারণা। যেন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় সেজন্য তাদের ধারণা দেয়া হয়েছে শুমারী সম্পর্কে। এটাকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে রোহিঙ্গারাও। তিন ক্যাটাগরিতে এই শুমারী হবে। এই কার্যক্রমে সহায়তা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা।
আইএমও ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কর্মকর্তা আসিফ মুনীর বলেন, এই কার্যক্রম শেষে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের একটি পরিচয়পত্র দেয়া হবে। সেই পরিচয়টার জন্য এখানে কিছু বায়োমেট্রিক ডাটা থাকবে। আইএমও দ্বায়িত্ব নিয়েছে সরকারের পক্ষ্যে এই কার্যক্রম প্রণয় করার জন্য। কক্সাজার ছাড়াও এই শুমারী হবে তিন পার্বত্য জেলা এবং পটুয়াখালিতে। এতে খরচ হচ্ছে ২১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে অবস্থিত মিয়ানমার নাগরিকদের ওপর জরিপ চালানোর কাজ আগামী শনিবার শুরু হবে। এ জরিপের উদ্বোধন করা হবে কক্সবাজারে।
পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, সরকারের নিজস্ব টাকায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কক্সবাজার, বান্দরবান জেলায় এ জরিপ চালানো হবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা চাই তারা মিয়ানমারে ফেরত যাক এবং তার জন্য আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করছি। কিন্তু এ জরিপের উদ্দেশ্য তাদের ওপর কোনও চাপ প্রয়োগ করা নয় বরং আমাদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে তাদের কীভাবে ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানো যায় সেটার সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া।
এদিকে মিয়ানমার নাগরিকদের ওপর গঠিত জাতীয় টাস্কফোর্স এর বৈঠকে যোগদানের জন্য পররাষ্ট্র সচিব বৃহস্পতিবার কক্সবাজার যাওয়ার কথা আছে।
উল্লেখ্য, ধারণা করা হয় বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক বাস করে। এদের কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তা সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।