প্রথম ৩০টি চ্যানেলের মধ্যে বিদেশি কোনও চ্যানেল ও বাংলা সিনেমা না দেখানোর জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করছেন কক্সবাজারের ক্যাবল অপারেটররা। ফলে ডিস ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল মালিকরা। ক্যাবল অপারেটরদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে কক্সবাজারে প্রতিটি টিভির সম্প্রচার। টিভির প্রথম ৩০টি চ্যানেল টিউনের ২০টিতেই দেওয়া হয়েছে বিদেশি চ্যানেল।
ক্যাবল টিভি/ডিস অপারেটরদের ব্যবসায় সুশাসন ও বিদেশি চ্যানেলের অবাধ প্রচার নিয়ন্ত্রণে ২০০৬ সালে ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন পাশ করা হয়। আইন অনুযায়ী, সরকারের অনুমোদিত বেসরকারি চ্যানেলগুলো দেশীয় দর্শকরা যাতে দেখতে পারেন সেজন্য সরকারি চ্যানেলের পরপরই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্প্রচার করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু সেদিকে লক্ষ্য নেই কক্সবাজারের ক্যাবল অপারেটর ব্যবসায়ীদের।
কক্সবাজারের একটি ক্যাবল অপারেটর সংযোগ চ্যানেল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চ্যানেলের শুরুতে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) দিয়ে শুরু করে দশ নম্বর পর্যন্ত বাংলা চ্যানেল দেওয়া হলেও এগার থেকে ৩০ পর্যন্ত ২০টি চ্যানেলই ভিনদেশি চ্যানেল। এছাড়াও জনপ্রিয় চ্যানেল সময় টিভি, চ্যানেল ২৪, একুশে টিভি, ৭১ টিভি, বৈশাখী, মাইটিভি, মোহনা টিভি, বিজয় টিভি দেওয়া হয়েছে ৭৭ থেকে ৮৯ সিগনালে। এছাড়াও এনটিভি’র সিরিয়াল রাখা হয়েছে ৩১ নম্বরে।
অপরদিকে বাংলা সিনেমা সম্প্রচারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মেনে ২১ নম্বরে সিরিয়ালে সিডির মাধ্যমে চালানো হয় বাংলা সিনেমা। যার কারণে ভারতীয় চ্যানেলের আগ্রাসনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে বাংলা চ্যানেলে সম্প্রচারিত সংস্কৃতি।
কক্সবাজার শহরের বাসস্টেশন এলাকার বাসিন্দা জহিরুল মোস্তফা জানান, বর্তমানে ভারতীয় চ্যানেলের চাপে বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলে কোন দিন, কোন সময়, কোন নাটক কিংবা টিভি শো প্রচারিত হয় তা না জানলেও স্টার প্লাস, স্টার জলসা, জি টিভি, সনি কিংবা জি বাংলা চ্যানেলে কখন, কোন সিরিয়াল দেখানো হয়, তা ঠিকই জানে বেশিরভাগ দর্শক। ভিনদেশি এসব অনুষ্ঠানের প্রচার রোধে বাংলাদেশি চ্যানেলগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
কক্সবাজারে মূলত তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্যাবল চ্যানেলগুলো পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কক্সবাজারের ফ্রেন্ডস ক্যাবল অপারেটরের মালিক তপন দাস বাংলা ট্রিবিউনকে সাফ জানিয়ে দেন,‘আপাতত এরকমই থাকবে। এ বিষয়ে সরকারি কোনও নির্দেশনা তাদের কাছে আসেনি।’ কেন দেশি চ্যানেলগুলোর চেয়ে বিদেশি চ্যানেলগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে এবিষয়ে জানতে চাইলে ফোন সংযোগ কেটে দেন তিনি। অপর দুটি ক্যাবল অপারেটর প্রতিষ্ঠান ভিডিও প্যালেস নেটওয়ার্ক ও বেঙ্গল নেটওয়ার্কের কর্ণধারদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর ২৭ জানুয়ারি টিভি নেটওয়ার্ক ক্যাবল মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রথম ৩০টি চ্যানেলে বাংলা চ্যানেল রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ক্যাবল অপারেটরদের এ ধরনের অরাজকতার ফলে দেশীয় সংস্কৃতির সুস্থ বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দর্শকরা।