কক্সবাজার-গুমধুম-দোহাজারী ১২৯ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।আর এই রেলপথ নির্মাণে গাড়ি কেনা হবে ৭৪টি। পাশাপাশি প্রতি মাসে ভাড়ায় চলবে আরো ১১টি গাড়ি।এতে ব্যায় হবে ৮২ কোটি ১৯ লাখ টাকা।আর পরামর্শক ব্যয় বেড়ে দাড়িয়েছে ৮১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে এভাবেই বাড়ছে গাড়ি বিলাস। কখনো বাস্তবায়নকারী সংস্থা ব্যবহার করছে এসব গাড়ি। কখনো আবার কেনা হচ্ছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য।গাড়িগুলোর জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণও চলে প্রকল্প থেকেই। কিন্তু বাস্তবায়ন শেষে অধিকাংশ সময়ই এসব গাড়ি জমা পড়ে না সরকারের রাজস্ব খাতে।
পরিকল্পনা কমিশনের এক পদস্ত কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের নামে অপ্রয়োজনীয় গাড়ি কেনায় সবসময়ই আপত্তি জানানো হয়।দোহাজারী-কক্সবাজার-গুমধুম প্রকল্পের গাড়ি কাটছাঁটের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব ফেরতও পাঠানো হয়েছে।তবে অনেক সময় দাতা সংস্থার শর্তে পরামর্শকের জন্য অধিক গাড়ি কেনার প্রস্তাব করে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো। এক্ষেত্রে দরকষাকষিতে সংস্থাগুলোর শক্তিশালী অবস্থান নেয়া উচিত।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, দোহাজারী-কক্সবাজার-গুমধুম রেলপথ নির্মাণে পরামর্শকদের জন্য কেনা হবে ১৯টি বিলাসবহুল জিপ। এছাড়া ডাবল কেবিন পিক-আপ কেনা হবে ৩৬টি, আট আসনের মাইক্রোবাস ১১টি ও চারটি কেনা হবে ১১ আসনের মাইক্রোবাস। সব মিলিয়ে ৭০টি গাড়ি কেনায় ব্যয় হবে ৭৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এর বাইরে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের জন্য একটি জিপ, দুটি ডাবল কেবিন পিকআপ ও একটি মাইক্রোবাস কেনায় ব্যয় হবে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গাড়িগুলো পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। এছাড়া ভাড়া গাড়িতে চার বছরে ব্যয় হবে মোট ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, শুধু গাড়িই নয়, দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনধুম রেলপথ নির্মাণে পরামর্শকের জন্য বাড়ি ও অফিস নির্মাণ, আসবাবসহ নানা ধরনের সুবিধা রাখা হচ্ছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রামে পরামর্শকদের প্রধান অফিস নির্মাণে ব্যয় হবে ১০ কোটি টাকা।
কক্সবাজার, চকরিয়া ও রামুতে অস্থায়ী অফিস ভাড়া বাবদ ব্যয় হবে আরো ৮ কোটি টাকা।আর এগুলোর আসবাব বাবদ ব্যয় হবে ২ কোটি টাকা। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণে খরচ করতে হবে আরো ১ কোটি টাকা।
পরামর্শকদের থাকার জন্য বাসভবন নির্মাণ ও আসবাব বাবদ ব্যয় হবে ৫০ কোটি টাকার বেশি। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও নির্মাণকালীন অস্থায়ী বাসভবন ভাড়া বাবদ আরো ৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
এর বাইরে রয়েছে বিদেশ সফর, সহায়ক স্টাফ, অন্যান্য লজিস্টিক সেবা ও সফটওয়্যার। এ তিন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৩৯ কোটি ৮৯ লাখ, ১৫ কোটি ৫০ লাখ ও ১৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় দোহাজারী-কক্সবাজার-গুমধুম রেলপথ নির্মাণে পরামর্শক খাতে ব্যয় বাড়বে। তবে প্রকল্পটি অর্থায়নকারী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) শর্তে নতুন বেশকিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। গত মাসে সংস্থাটির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে পরামর্শক ও অন্যান্য সেবা খাতে ব্যয় সমন্বয় করা হয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা গেছে,চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত গুনধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। প্রাথমিকভাবে এ খাতে ব্যয় ছিল ৭৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ পরামর্শক ব্যয় বেড়েছে ৭৩১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর বাইরে পরামর্শকদের জন্য অন্যান্য সুবিধা বাবদ প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ খাতে ব্যয় বেড়েছে ৮৭৬ শতাংশ।
উল্লেখ্য,দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনধুম রেলপথের বিভিন্ন খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)। ১২৯ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে ১৩৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
অথচ আখাউড়া-লাকসাম ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আওতায় ১৪৪ কিলোমিটার নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
প্রকল্পটির আওতায় দোহাজারী থেকে রামু ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার ১৩ কিলোমিটার ও রামু থেকে গুনধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রথম দফায় এ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে ১৬ হাজার ১৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ৮৮২ শতাংশ।