ডেইলি কক্সবাজার রিপোর্ট :
কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাশিয়ার পদ শুন্য রয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে ওই অফিসের কম্পিউটার অপারেটর। তিনি একাধারে কম্পিউটার অপারেটরের পাশাপাশি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অফিসে ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। সরকারী জনগুরুত্বপূর্ণ অফিসের তিনটি পদে একজন ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি অফিসগুলোকে দুর্নীতি আর অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করেছে।
চাকুরীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বেশ কয়েকজন স্থানীয় ঠিকাদারের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারে ঠিকাদারী করে প্রতি বছর সরকারী কয়েক কোটি লোপাট করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ নিয়ে শহরের টেকপাড়া এলাকার মোঃ সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ইতোমধ্যে কম্পিউটার অপরেটর আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রধান প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অদিদপ্তর ঢাকাসহ বিভিন্ন দপ্তরে গত ২ জানুয়ারী একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা যায়, কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ২০০৩ সালের দিকে মোঃ আসাদুজ্জামান কম্পিউটার অপারেটর পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে এ অফিসের ক্যাশিয়ার বদলি জনিত কারণে পদটি শুন্য হয়ে পড়ায় তার কপাল খুলে যায়। অফিসের কম্পিউটার অপারেটর পদটি পাশাপাশি লুপে নেন ক্যাশিয়ারের পদটিও। এরপর থেকে নিয়মিত অফিস না করেই সরকারী কর্মচারীর চাকুরীবিধি লঙ্গন করে ঠিকাদারী ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
এই অফিসের বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে যৌথভাবে গভীর নলকুপ, স্যানিটেশন প্রকল্প ও বর্তমানে পিইডিপি প্রকল্পের আওতায় ওয়াশ ব্লক (সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সবুজ টয়লেট নির্মাণ) প্রকল্পের কাজ করেন। উখিয়া ও সদর উপজেলায় ইতোমধ্যে ৩০টি গভীর নলকুপ স্থাপন শেষ হয়েছে। প্রতিটি স্থাপন ব্যয় হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। এলাকা এই দু’টি উপজেলায় ওয়াশ ব্লক নির্মিত হয়েছে ৩৫টি। ওয়াশ ব্লকের প্রতিটির ব্যয় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। গভীর নলকুপ এবং ওয়াশ ব্লক নির্মাণের বেশির ভাগ কাজ তিনি কতিপয় ঠিকাদারদের সাথে যৌথ ভাবে সম্পন্ন করেন।
অভিযোগে আরো প্রকাশ, জেলা অফিস ও উপজেলা অফিসের নলকুপ মেকানিক ও কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ভাতার ভুঁয়া বিল ভাউচার তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করে আসছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ঠিকাদার জানিয়েছেন, এই কম্পিউটার অপারেটর আসাদুজ্জামান বেপরোয়া হয়ে ওয়াশ ব্লক ও গভীর নলকুপ স্থাপন কাজ শেষ না করেই কতিপয় ঠিকাদারের সাথে গোপন আতাঁতের মাধ্যমে সরকারী বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের সহযোগীতা দিচ্ছে।
তারা আরো জানান, কম্পিউটার অপারেটর আসাদুজ্জামান কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ক্যাশিয়ার পদে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে মঙ্গল ও বুধবার চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরেও ক্যাশিয়ার পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছে। দুইটি জেলা অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনেকটা জিম্মি করে রেখেছেন তিনি। তার এতোই প্রতাপ আর দাপটের পেছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
একটি সুত্র জানান, ঢাকা প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) পদে রয়েছেন তার চাচা জামাল উদ্দিন মিয়া নামের এক ব্যক্তি। এই চাচার দাপট দেখিয়ে ওই দুইটি অফিসের কর্মচারীদের জিম্মি করে রেখেছে। তার চাচার কথাটি অত্যন্ত গৌরবের সাথে জনসম্মুখে প্রচার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে আসাদুজ্জামান।
কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া এলাকার মোঃ সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ইতোমধ্যে কম্পিউটার অপরেটর আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রধান প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ঢাকাসহ বিভিন্ন দপ্তরে গত ২ জানুয়ারী একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, একযুগেরও বেশী সময় একই অফিসে কর্মরত থাকায় তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদের মালিকও হয়েছে। ইতোমধ্যে শহরতলির চন্দ্রিমা সমিতিতে প্লট কিনেছে। ঢাকায় কিনেছে ফ্ল্যাট ও টাঙ্গাইল সদরে কিনেছে জমি। তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে লাখ লাখ টাকা জমা,এফডিআর ও ডিপিএস রয়েছে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসকে দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করেছে এবং অফিসগুলোর প্রধান নিয়ামক শক্তি হিসেবে নিজেকে জাহির করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে আরো স্পর্শকাতর বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ।
অভিযুক্ত কম্পিউটার অপারেটর কাম ক্যাশিয়ার মোঃ আসাদুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়গুলো অস্বীকার করে বলেন, যোগ্য ও অভিজ্ঞ সম্পন্ন মনে করায় অফিসই আমাকে তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করার দায়িত্ব দিয়েছেন।
কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনিয়ম আর দুর্নীতি করার কোন সুযোগ ক্যাশিয়ারের নেই। তবে কম্পিউটার অপারেটর আসাদুজ্জামান তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করার কথা স্বীকার করেন তিনি।