কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল ও সম্মেলন আগামী ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। শনিবার আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষে দলের সাধারণ স¤পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জেলা আওয়ামীলীগের এ সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। তবে ইত:পূর্বে আরো ডজনখানেক বার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তা অনুষ্ঠিত হয়নি। নতুন করে নির্ধারিত তারিখেও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে কীনা তা নিয়েও দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। তবু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে দলীয় নেতাকর্মীরা।
জেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এক যুগেরও বেশি সময় আগে ২০০৩ সালের ২০ ডিসেম্বর। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে একেএম মোজাম্মেল হক সভাপতি ও সালাহ উদ্দিন আহমদ সাধারণ স¤পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৫ সালের ২৭মে একেএম মোজাম্মেল হকের মৃত্যু হলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান প্রথম সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। পরে তিনি দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করলে তখন থেকে দ্বিতীয় সহ-সভাপতি এডভোকেট একে আহমদ হোসেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে ওই কমিটির মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ২ বছর ধরে ডজনখানেক বার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ তারিখ ছিল ২০১৫ সালের ২৮ নভেম্বর। পরে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ গত ডিসেম্বরের ৫ তারিখও সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ঘোষিত তারিখে সম্মেলন অনুষ্ঠান হয়নি। ফলে নতুন করে কেন্দ্র ঘোষিত তারিখেও আদৌ সম্মেলন অনুষ্ঠান হবে কীনা তা নিয়ে কাউন্সিলরদের মধ্যে সংশয় রয়েছে বলে জানান জেলা আওয়ামীলীগের একাধিক নেতাকর্মী।
জেলা শাখার কয়েকজন নেতা জানান, জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে নয় বছর আগে। কিন্তু এরপর দীর্ঘদিনেও সম্মেলন না হওয়ায় কোন্দল বেড়েছে দলে। নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে কয়েকটি দল-উপদলে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণার খবর পেয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝে আবারো চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে। জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সম্মেলনের এ নতুন তারিখ ঘোষণার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান মাবু জানান, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চান সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা কমিটির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে। কিন্তু জেলা কমিটির অনেক নেতা এতদিন সম্মেলন করতে রাজি ছিলেন না। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে আবারো সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা খুশি। ২৯৮ জন কাউন্সিলর ভোট দিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা জানান- দলের একটি অংশ চায় সম্মেলন না করেই কেন্দ্রের মাধ্যমে কমিটি করতে, যাতে তাদের নেতৃত্ব বহাল থাকে। তাদের মতে, সম্মেলন করে ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হলে দলের নেতৃত্ব কালো টাকার মালিকদের কাছে চলে যাবে। এতে জেলা আওয়ামীলীগের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার অপর অংশের মতে, সরাসরি ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হলে কাউন্সিলরদের মতামত প্রতিফলিত হবে। এতে দল লাভবান হবে। কারণ আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের নেতৃত্ব নির্বাচনে কখনও ভুল করে না।
ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের পক্ষে অধিকাংশ কাউন্সিলর। বিশেষ করে দলের তরুণ নেতারা। তবে প্রবীণরা চায় না সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন হোক।
জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সদস্য ও আগামী সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন- ‘তরুণ নের্তৃত্বই সবসময় দল ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে এসেছে। আর তরুণদের মাঝেই গণতন্ত্রের চর্চা বেশি পরিলক্ষিত হয়। এ কারণে আমরা তরুণরা সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব গড়ে উঠুক এমনটি দাবি করছি শুরু থেকে।
জানা যায়, দলের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচনের পক্ষে নন। তাদের মতে, ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতা নির্বাচন হলে দলে কোন্দল থাকবে। আর কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেয়া হলে সকলেই তা মেনে নিতে বাধ্য হবে। এছাড়া দলের নেতৃত্বও কালো টাকার প্রভাবমুক্ত থাকবে।
দলে যথাসময়ে কাউন্সিল না হওয়া এবং নতুন সম্মেলন সম্পর্কে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি বলেন- ‘দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকায় বিগত সময়ে ঘোষিত তারিখে সম্মেলন অনুষ্ঠান করা যায়নি। তবে কেন্দ্র ঘোষিত নতুন তারিখে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে একটি উপজেলা বাদে বাকী উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারী মহেশখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।’
জানা যায়, আসছে সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন- বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একে আহমদ হোসেন, বর্তমান সাধারণ স¤পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ, সাবেক সাধারণ স¤পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম স¤পাদক সিরাজুল মোস্তফা ও মহিলা আওয়ামীলীগে সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা আহমদ। আর সাধারণ স¤পাদক পদে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক স¤পাদক মাশেদুল হক রাশেদ ও জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য রাশেদুল ইসলাম প্রার্থী হচ্ছেন। ইতোমধ্যে তারা প্রচারণাও শুরু করেছেন।