অনিয়ম-দুর্নীতিতে ছারখার অবস্থা কক্সবাজার নার্সিং ইনস্টিটিউটের। দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট করে নার্সিং ইনস্টিটিউটটি পরিচালনা করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের হাতে সব অনিয়মই এখানে নিয়ম। এর অংশ হিসেবে ২০১১-১২ সালে তৎকালীন হিসাব রক্ষক আবদুস সামাদ ইনস্টিটিউটের কর্মচারীদের বেতন ভাতা, উৎসব ভাতা, ছাত্রী বৃত্তিসহ মাস্টার রোলে কর্মরত কর্মচারীদের নামে ভূয়া বিল ভাউচার করে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই ঘটনায় গেল ৩১ ডিসেম্বর পৃথক ৭টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বর্তমানে আবদুস সামাদের মৃত্যুর পর সিন্ডিকেট পরিচালনার দায়িত্ব নেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক তুষার কান্তি পাল। আবদুস সামাদের ধারাবাহিকতায় নার্সিং ইনস্টিটিউটকে পুঁজি করে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কাজে লিপ্ত রয়েছে তুষার সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের দ্বিতীয় কর্তা ব্যক্তি হচ্ছেন খোদ নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনষ্ট্রাক্টর অসীমা রানী বৈদ্য। তিনি সিন্ডিকেট প্রধান ও সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক তুষার কান্তি পালের স্ত্রী। আর এ সিন্ডিকেটকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন চৌধুরী সরাসরি ইন্ধন দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, সদর হাসপাতালে কর্মরত শিক্ষানবিস নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়ার একমাত্র প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার নার্সিং ইনস্টিটিউট। সারাদেশের নার্সিং ইনস্টিটিউট গুলো বেশ কয়েক বছর আগে জেলা সদর হাসপাতাল থেকে পৃথক হয়ে গেলেও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সিন্ডিকেটটির চক্রান্তের কারণে আলাদা করা যায়নি কক্সবাজার নার্সিং ইনস্টিটিউটকে। ফলে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হচ্ছে নার্সিং ইনস্টিটিউট। আর ওই সিন্ডিকেটই নার্সিং ইনস্টিটিউটকে পুঁজি করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রতন চৌধুরীর সমর্থনে হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক তুষার কান্তি পালের নেতৃত্বে সিন্ডিকেটটি নার্সিং ইনস্টিটিউটে অনিয়ম-দুর্নীতিতে সক্রিয় রয়েছে। ওই সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নার্সিং ইনস্টিটিউটে এখন অনিয়মের মহোৎসব চলছে। সরকারী নিয়ম-কানুন নয় সিন্ডিকেটের নিয়মেই চলছে ইনস্টিটিউটের কর্মচারীরা। পুরনো অনিয়মের ধারাবাহিকতা চলছে সেখানে। কর্মচারীদের বেতন ভাতা, উৎসব ভাতা, ছাত্রী বৃত্তিসহ মাস্টার রোলে কর্মরত কর্মচারীদের নামে ভূয়া বিলসহ বিভিন্ন খাতে ভাউচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি চলছে। এছাড়া ইনস্টিটিউটে নির্ধারিত অফিস কক্ষ থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে সদর হাসপাতালেই অফিস করেন নার্সিং ইনস্টিটিউটের হিসাব রক্ষক রনজিত। প্রতিমাসে শুধু যেদিন বেতন পাশ করতে হয় সেই একদিনই ইনস্টিটিউটে অফিস করেন তিনি। বাকি দিন গুলোতে তিনি সদর হাসপাতালে কাজ করেন। নার্সিং ইনস্টিটিউটের হিসাব-নিকাশের কাজ সদর হাসপাতালে বসে করায় অনেক ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু এভাবে দিনের পর দিন নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে হাসপাতালে বসে অফিস করলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া সদর হাসপাতালের কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণার্থীদের দুটি কক্ষ দখল করে সেখানে স্বামী-সন্তানসহ সংসার নিয়ে থাকেন ইনস্টিটিউটের হাউজকিপার শিখা রাণী দে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নার্সিং ইনস্টিটিউটের এক ব্যক্তি জানান, কক্সবাজার নার্সিং ইনস্টিটিউটে অতীতে প্রশিক্ষণার্থীদের কৌটা ছিল ৪০ জনের। কিন্তু এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ জনের মতো। প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি অবকাঠামোগত সুবিধা। এই স্বল্প সংখ্যক কক্ষ থেকেও ২টি কক্ষ হাউজ কিপার অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। যার কারণে প্রশিক্ষণার্থীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, এর আগেও একবার তাকে নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় প্রায় ৩ বছর তিনি ভাড়া বাসায় ছিলেন। কিন্তু বর্তমান ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ যোগদানের পর শিখা রাণী দে পুণরায় ওই ইনস্টিটিউটের কক্ষ দখল করে নেয়। সেই থেকে অদ্যবধি তিনি স্বামী সন্তানদের নিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের কক্ষ দখল করে বসবাস করছেন। এছাড়া সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক তুষার কান্তি পালের বন্ধু পরিচয়ে শহিদুল্লাহ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি দীর্ঘ ১ বছর ধরে নার্সিং ইনস্টিটিউটের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে দু’টি গাড়ি পার্কিং করে আসছেন। যার কারণে ইনস্টিটিউটের সৌন্দর্য্যহানির পাশাপাশি প্রশিক্ষণার্থীসহ সকলের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
একজন কর্মচারী জানান, ওই শহিদুল্লাহ’র সাথে প্রধান সহকারীর ব্যবসা ও লেনদেন রয়েছে। তাই তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইনস্টিটিউটের জায়গা দখল করে তার ব্যবহৃত দু’টি প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং করে আসলেও তার বিরুদ্ধে কিছুই বলার সাহস নেই কারও। সূত্র জানায়, সদর হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের যাবতীয় কাজ নিয়ম মতো টেন্ডার না দিয়ে অনিয়মের মাধ্যমেই পেয়ে থাকেন শহিদুল্লাহ। আর তার সাথে ওই ব্যবসার অংশিদারিত্ব রয়েছে প্রধান সহকারী তুষারে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী তুষার কান্তি পাল বলেন, ‘কোন অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে না। নার্সিং ইনস্টিটিউটে আমার স্ত্রী চাকরি করেন। এসব বিষয়ে কোন রিপোর্ট করবেন না।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রতন চৌধুরী বলেন, ‘নার্সিং ইনস্টিটিউট আমি দেখাশুনা করি ঠিক আছে। কিন্তু কোন অনিয়মের খবর এ পর্যন্ত পায়নি।’