সার্ভার বিকল হওয়ায় গত ১৫ দিন ধরে অচল হয়ে আছে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এতে করে হাজার হাজার গ্রাহক ভোগান্তি ছাড়াও সরকারের কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে জানাগেছে। পাসর্পোট ডেলিভারী দিতে না পেরে শত শত প্রবাসী নাগরিকের ভিষা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়াগেছে।
এনিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিস কর্মকর্তার দৌড় ঝাপ থাকলেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার যোগ্যতা ও দক্ষতার। স্থানীয় এমপি, এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলাই দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন।
খবর নিয়ে জানাগেছে, গত ১৫ দিন ধরে বিকল হয়ে আছে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিসের সার্ভার। পাসর্পোট পাওয়ার অবেদন ও ডেলিভারী সবই বন্ধ রয়েছে। দুই হাজারের অধিক বই ডেলিভারীর অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে শত শত প্রবাসী এমন আছেন যারা পাসর্পোট ডিজিটাল করার জন্য দেশে এসেছেন। তাদের অনেকের ভিষার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেকের বিমান টিকেট কয়েকবার পরিবর্তন করেছেন। পাসর্পোট বই না পাওয়ায় তারা ফিরতে পারছেন না। এতে করে প্রবাসীরা বেশী ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন।
৪ এপ্রিল এই প্রতিবেদকের সামনেই ভারপ্রাপ্ত এডি শওকত কামালের কাছে টেকনাফের ইসমাঈল নামের এক মালয়েশিয়া প্রবাসী পাসর্পোটের জন্য আসেন। তিনি গত ৭ বছর ধরে সেখানে প্রবাসী। তার বই নং এফ ০৮৭৩৮২২৫। তিনি দু’বার বিমানের টিকেট পরিবর্তন করেছেন। আগামী ১০ এপ্রিল ২০১৬ ইং তিনি মালয়েশিয়া ঢুকতে না পারলে তার ভিষা নষ্ট হয়ে যাবে। আমার সামনেই এডির কাছে তার আকুতি আর মিনতির কোন শেষ ছিল না। ভারপ্রাপ্ত এডি শওকত কামাল অনেক চেষ্টা তদবীর করেও কোন সমাধান দিতে না পেরে ৬ এপ্রিল বুধবার তার সাথে দেখা করার কথা বলে তাকে বিদায় করেন। জানাগেছে এধরনের আরো অনেক বিড়ম্বনার শিকার প্রবাসীদের খবর। কিন্তু পাসর্পোট ডেলিভারী কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় অচল হয়ে আছে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিস। ভোগান্তি হচ্ছে হাজার হাজার জনগণের, প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।
ভারপ্রাপ্ত এডি শওকত কামাল জানালেন, গত এক বছরে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিস থেকে সরকার আট কোটি ৮০ লাখ টাকার রাজস্ব পেয়েছে। গত ১০ মাস আগে তিনি দায়িত্ব নিয়ে প্রায় ২০ (বিশ) হাজার বই ইস্যু করেছেন। ওই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। আর গত ১৫ দিনে সার্ভার বন্ধ থাকায় দু’ হাজার মত বই ডেলিভারী হচ্ছে না। এসময়ে নতুন আবেদন জমা নিতে না পারায় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, প্রায় ৫০ লাখ টাকা। তিনি আরো জানান, দু’ দিনের মাথায় তিনি সার্ভার ঠিক করে এনেছেন। এখন অবার নষ্ট হয়েছে সফ্টঅয়ার। এনিয়ে নাকি তিনি দৌড়ঝাপও কম করছেন না। কিন্তু তিন লক্ষাধিক হারিয়ে যাওয়া ডাটা উদ্ধার করতে নাকি সময় লাগছে।
কক্সবাজারের লাখ লাখ নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে এবং প্রতি মাসে হাজারো মানুষ আরো নতুন পাসর্পোট করছেন বিদেশ যাওয়ার জন্য। কক্সবাজার পাসর্পোট অফিস থেকেই সরকার প্রতি বছর ক্যাশ টাকার রাজস্ব পেয়ে থাকে প্রায় দশ কোটি টাকা করে। এসব প্রবাসীদের মাধ্যমে দেশে আসছে শত শত কোটি টাকা। এটি বিবেচনা করেই প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পাসর্পোট অফিসের দৃষ্টি নন্দন নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে হিলটপ সার্কিট হাউজের পাশেই। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও ওই ভবনে অফিস করছেন ভারপ্রাপ্ত এডি শওকত কামাল। শিগ্রীই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে জানান তিনি। কিন্ত বিকল হওয়ার অজুহাতে এই ধরণের একটি জনসম্পৃক্ত রাজস্ব বহুল অফিস ১৫ দিন ধরে অচল থাকবে, জনগনের এভাবে ভোগান্তি আর রাজস্ব ক্ষতি হবে তা মেনে নিতে পারছেন না কক্সবাজারবাসী।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বলেন, তিনি বিষয়টি একটু দেরীতে জেনেছেন। তবে সমস্যাটি দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর-রামুর এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে তিনি বলেন, দু’দিনের কাজ ১৫দিনেও হবে না, এটি অবিশ্বাস্য। হাজার হাজার জনগণের ভোগান্তি ও কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। এ ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না, পাসর্পোট ডেলিভারী কর্তৃপক্ষ।