কক্সবাজার পৌরসভায় চরম সংকট রয়েছে গণশৌচাগারের। যে কয়েকটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পরিচালিত গণশৌচাগার রয়েছে তাও চরম অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এদিকে কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃক শহরের কস্তুরাঘাট রাস্তা সংলগ্ন নতুন একটি কাগজে-কলমে গণশৌচাগার থাকলেও উদ্বোধনের পর হতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে নতুন গণশৌচাগারটি। অন্যদিকে যে কয়েকটি গণশৌচাগার রয়েছে তার মধ্যে নারীবান্ধব কোন ধরণের শৌচাগারের ব্যবস্থা না থাকায় রক্ষণশীল নারীদের জন্য অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় বলে জানিয়েছেন অনেকে।
পৌরসভা অফিস সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার পৌরসভার প্রায় ২ লাখ নাগরিকের জন্য রয়েছে শুধুমাত্র ৩টি পৌর গণশৌচাগার। এর একটি আইবিপি মাঠস্থ পাবলিক টয়লেট, আরেকটি বাস-টার্মিনালস্থ পাবলিক টয়লেট, অন্যটি সী-বীচ সংলগ্ন পাবলিক টয়লেট। এদিকে গত ৮ জানুয়ারি’২০১৪ ইং তারিখে কক্সবাজার পৌরসভার কস্তুরা ঘাট সংলগ্ন কক্সবাজার পৌরসভার বাস্তবায়নে সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল কর্তৃক জেলা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত একটি গণশৌচাগার উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু উক্ত গণশৌচাগার উদ্বোধনের পর থেকেই কার্যক্রম ব্যতিত পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে সাধারণ নাগরিকের সুবিধার জন্য নির্মিত গণশৌচাগারটি।
শহরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর মতে, ‘কক্সবাজার পৌরসভা পরিচালিত যে কয়েকটি গণশৌচাগার রয়েছে তা পৌরসভার জন্য অতি নগন্য। আইবিপি মাঠস্থ গণশৌচাগারটি পরিবেশ বান্ধব নয়। এর চারপাশে উদ্ভট দুর্গন্ধ। রাস্তা দিয়েও সাধারণ মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আর এর ভিতরে চরম অব্যবস্থাপনা। সাধারণ মানুষের আইবিপি মাঠস্থ গণশৌচাগারে গিয়ে কার্য-সম্পাদন করা সম্ভব নয়। এতে সবসময় ট্রাক-মিনিট্রাক-বাস শ্রমিকে পরিপূর্ণ থাকে। আমাদের মতো ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকের পয়ঃ ব্যবস্থার কোন সুযোগ নেই। শহর জুড়ে বেশ কয়েকটি পৌর গণশৌচাগারের প্রয়োজন থাকলেও তা না থাকায় প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ী সহ সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
কস্তুরা ঘাট এলাকার রাশেদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজার পৌরসভায় গণশৌচাগারের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। আর যা আছে তাও চরম অব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। অন্যদিকে যে কয়েকটি রয়েছে তার মধ্যে কস্তুরা ঘাট এলাকার নির্মিত গণশৌচাগারটি উদ্বোধনের পর থেকেই বন্ধ রয়েছে। সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল গত ২ বৎসর আগে কস্তুরাঘাট এলাকায় গণশৌচাগারটি উদ্বোধন করলেও এর প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা আজও স্থানীয় পৌর নাগরিক কিংবা শহরে আগত পর্যটক সংশ্লিষ্ট কেউ পায়নি। পরিত্যাক্ত অবস্থায় না রেখে নতুন পৌর গণশৌচাগারটি খুলে দিলে নাগরিক সুবিধা বাড়তো এবং পৌর কর্তৃপক্ষের রাজস্ব আদায়ে সুবিধা হতো।’
কক্সবাজার সৈকতে চন্দনাইশ থেকে বেড়াতে মাহাতি নামে এক পর্যটক বলেন, ‘বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত এলাকা হিসেবে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য গণশৌচাগার ব্যবস্থা অতি স্বল্প। যা সত্যিই বেমানান। খাওয়া-দাওয়া আধ ঘন্টা কিংবা এক ঘন্টা পরে করলেও সাড়া যায়। কিন্তু যা মুহুর্তের মধ্যেই সেরে ফেলতে হয় তার ব্যবস্থার কোন উন্নতি নেই। এই ব্যবস্থার উন্নতি হওয়া দরকার।’
বাস-টার্মিনাল এলাকার মনিরুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘বাস-টার্মিনালস্থ পৌর গণশৌচাগারের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সব সময় স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থায় থাকে। এখানে টার্মিনাল এলাকার শ্রমিক কিংবা স্থানীয়দের আনাগোনায় দীর্ঘ লাইনে সরগম থাকে। যার কারণে অনেক যাত্রীই প্রয়োজন হলেও এখানে দরকারি কাজ সারাতে যাননা।’
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার আইবিপি মাঠস্থ গণশৌচাগারটির চারদিকে দূর্গন্ধে সয়লাব। ভিতরের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এদিকে একই অবস্থায় রয়েছে বাস-টার্মিনালস্থ পৌর গণশৌচাগারটিও। জোড়াতালির মাধ্যমে চালানো হচ্ছে শৌচাগারটি। অন্যদিকে শহরের কস্তুরা ঘাট এলাকায় দীর্ঘ ২ বৎসর আগে নির্মিত গণশৌচাগারটিও বন্ধ থাকতে দেখা যায়। এছাড়া পর্যটক মৌসুম হওয়ায় সী-বীচ এলাকার গণশৌচাগারটিও রয়েছে জনাকীর্ন অবস্থায়।
এবিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার সচিব মোঃ সামছুদ্দিন জানান, ‘কক্সবাজার কস্তুরা ঘাট এলাকায় নির্মিত গণশৌচাগারটি কেউ লীজ না নেওয়ায় লীজ দেওয়া যাচ্ছে না।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘ভবিষ্যতে কক্সবাজার পৌরসভায় আরও নতুন গণশৌচাগার করার পরিকল্পনা রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষের।’