স্বাধীনতার চার দশক পর বদলে যাচ্ছে পর্যটন শহর কক্সবাজার। সার্বিক উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে বর্তমান সরকার। গঠন করা হয়েছে ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’। ইতোমধ্যে কিছু প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঘেরা কক্সবাজার ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে বহুল পরিচিতি লাভ করেছে। একটি আধুনিক ও উন্নতমানের পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আবাসন, হোটেল, মোটেল, রাস্তাসহ অন্যান্য সব নাগরিক ও পর্যটন সুবিধা পরিকল্পিতভাবে বাড়ানো প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে।’
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, বর্তমান সরকার কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন সুযোগ-সুবিধার সবই দিতে চায়। সরকার কক্সবাজারকেন্দ্রিক অনেক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে হাত দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে পর্যটনের উন্নয়নে পর্যটন করপোরেশনের মালিকানাধীন মোটেল শৈবালের ১২৫ একর জমিতে একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে একটি পাঁচতারকা মানের হোটেলও থাকবে। এছাড়া মোটেল প্রবালের ছয় একর জমিতে পর্যটনবিষয়ক একটি ইনস্টিটিউট তৈরি করা হচ্ছে।’
এদিকে টেকনাফের সাবরাং এলাকায় ১২০০ একর জমিতে বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে টেকনাফের নাফ নদীর জালিয়ারদিয়া নামের আকর্ষণীয় ছোট্ট দ্বীপটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত করা হচ্ছে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য ওই বিশেষ জোন তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে।
খোরশেদ আলম চৌধুরী আরো জানিয়েছেন, কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আসা-যাওয়ার প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কক চার লেনে উন্নীতকরণ, এবিসি (আনোয়ারা-বাঁশখালী-চন্দনাইশ) সড়ক সমপ্রসারণ এবং বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে একটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সমপ্রসারণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দরের কাজ শেষ হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘সমুদ্র, পাহাড় ও প্রাচীন নিদর্শনের জনপদ এই কক্সবাজার। কক্সবাজারকে সাজানোর জন্য এবার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগোচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পর্যটন শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি ওই খাত থেকে জাতীয় রাজস্ব আয়ও বাড়বে। দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ চলছে।’
তারকামানের লং বিচ হোটেলের ম্যানেজার মোহাম্মদ তারেক বলেন, ‘কক্সবাজারের পর্যটন বিকাশে অনেক বেশি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা পিছিয়ে রয়েছি এতদিন। তবে বর্তমান সরকার যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে হাত দিয়েছে তাতে অনেক দূর এগিয়ে যাবে কক্সবাজার। বদলে যাবে এই পর্যটন শহর।’
হোটেল কক্স-টুডের ফ্রন্ট ডেস্ক ব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, ‘বিদেশি পর্যটক কক্সবাজারের আনার জন্য সরকারের উদ্যোগগুলো অনেক বিলম্বে গ্রহণ করা হলেও তা প্রশংসার দাবি রাখে। এসব বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে কেবল কক্সবাজার নয় পুরো বাংলাদেশ বদলে যাবে।’