লবণ পানিতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক। কোনো সুরক্ষা ছাড়াই উপকূলীয় এলাকা থেকে ট্রাকে মহাসড়ক দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে লবণ। এ সময় ট্রাক থেকে লবণপানি পড়ে পিচ্ছিল হয়ে যায় সড়ক। ফলে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ঘটছে দুর্ঘটনা। একই সঙ্গে বিটুমিন ওঠে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি।
এ প্রসঙ্গে দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তোফায়েল মিয়া বলেন, ‘গত বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কের মেরামত কাজ সবেমাত্র শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে লবণপানি পড়ে মহাসড়কের কার্পেটিং ওঠে যাচ্ছে। পানি ঢুকে সড়কের বিটুমিনাসের নিচের স্তর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে পুরো সড়কের আয়ুস্কালও কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ একটি সড়কের আয়ু তিন বছর থাকলে তা এক বছরে নেমে আসছে।’
তিনি জানান, ট্রাকে পলিথিন দিয়ে লবণ পরিবহনের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও এখনো সুফল মিলেনি।
কক্সবাজার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুরুল আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘লবণ মাঠের পাশে থাকা আমাদের সড়কগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ ট্রাকের নিচে পলিথিন না দেওয়ায় পরিবহনের শুরুতেই লবণমিশ্রিত পানি বেশি পড়ে সড়কে। এতে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে।’
জানা গেছে, প্রতিবছর লবণ উত্তোলনের মৌসুমে এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সড়কপথে লবণ পরিবহনে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় জেলা প্রশাসনের আদেশের ওপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। নীতিমালা না থাকায় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। একেক সময় একেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসে বিষয়টি অনুধাবন করতেই সময় পার হয়ে যায়। আর এরই মধ্যে সড়কের ক্ষতি হয়ে যায়।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কক্সবাজারমুখী যাত্রীবাহী গাড়িগুলো সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। লবণ পরিবহনের কারণে বিকেল থেকে রাতে এবং খুব ভোরে এই মহাসড়ক সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মহাসড়ক পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেশের অন্যপ্রান্ত থেকে আসা চালকরা অবহিত নন। এই কারণে একই গতিতে চলতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িগুলোও দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে লবণ উত্পাদননির্ভর কক্সবাজার জেলা প্রশাসন গতমাসে মাসিক আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি আলোচনা করে তদারকির সিদ্ধান্ত নেয়। একইসাথে মোটা পলিথিন দিয়ে লবণ পরিবহন নিশ্চিত করতে সব উপজেলা প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘এখন কক্সবাজার সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথেই সড়ক নষ্ট হওয়ার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছি। এ জন্য আমি আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি চকরিয়ার লবণ ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভা আহ্বান করেছি। প্রথমে তাঁদের সচেতন করা হবে। এতে কাজ না হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিরাপদ পরিবহন নিশ্চিত করা হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার থেকে ট্রাকে বেশির ভাগ লবণ আসে পটিয়ার ইন্দ্রপুলের লবণ মিলগুলোতে। ট্রাকে কিছু লবণ যায় বোয়ালখালীর কারখানায়। সড়কপথে নিরাপদ লবণ পরিবহন নিশ্চিত করতে পটিয়া উপজেলা প্রশাসন ১০ দিন আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বেশ কিছু জরিমানাও করেছে।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মোনাফও লবণ পানির কারণে সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কথা স্বীকার করে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বহুবার এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হলেও ট্রাকে লবণ পরিবহন বন্ধ হচ্ছে না। ট্রাকে শুধু পটিয়া পর্যন্ত লবণ পরিবহন হয়। চট্টগ্রাম শহর ও এর আশপাশে লবণ পরিবহন হয় বোটে। ফলে সেই এলাকার ওপর নজর দিলেই সমাধান সম্ভব।’