কক্সবাজার শহরে শিক্ষা উপকরণের দাম চড়া, হিমশিম খাচ্ছে অভিভাবকরা
ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
আপডেট সময়
সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৬
৩৯৮
বার পড়া হয়েছে
কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি কামাল উদ্দিন জানান, আমার ১ মেয়েকে বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমিতে ৮ম শ্রেণিতে এবং আরেক মেয়েকে আমেনা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি করতেই আমার স্ত্রীর কানের দোল বিক্রি করতে হয়েছে। এখন তাদের জন্য কাগজ-কলম ব্যাগ আর স্কুল ড্রেস কিনে দিতে মনে হচ্ছে না খেয়ে থাকতে হবে। বাজারে গিয়ে দেখা গেছে সব শিক্ষা উপকরনের দাম বেড়েছে কয়েক গুন। তিনি বলেন, যে কাগজ আগে প্রতি দিস্তা ১০ টাকা কিনতাম সে কাগজ এখন ১৭ টাকা বলছে। আর একটা স্কুল ব্যাগ ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা বলছে। দোকানদাররা নিজেরাই বলছে ১৫ দিনের মধ্যে সব শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েছে কয়েক দফা।
শহরের গাড়ীর মাঠ এলাকার গ্যারেজ শ্রমিক আকতার আলম বলেন, অনেক ইচ্ছা থাকা সত্বেও মেয়েকে কেজি এন্ড মডেল স্কুলে টাকার অভাবে ভর্তি করাতে না পেরে সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছি। এখন মেয়ের জন্য স্কুল ড্রেস সেলাই করতে আর খাতা কলম আর ব্যাগ কিনতেই নাকি ৩ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এর পরে আমার আরো ২ ছেলে পড়ে হাজী ছিদ্দিকিয়াতে সেখানেও তাদের খরচ জোগাড় করতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছি। মোটকথা লেখাপড়া ভাল করে করতে চাইলে যে বেশি পরিমান টাকা দরকার সেটা নিঃসন্ধেহে। আসলে গরীবের জন্য কোন ভাল লেখাপড়া নেই। আর সরকার মেয়েদের জন্য ফ্রি লেখাপড়া করার যে ঘোষণা সেটা কোথায় আমরা বুঝি না।
এ ব্যাপারে শহরের কালুর দোকান রিদুয়ার ট্রেডার্সের মালিক আবদুল খালেক বলেন, সম্প্রতি সব ধরনের কাগজের দাম বেড়েছে। এখন নিউজ প্রিন্টও বিক্রি হচ্ছে দিস্তা প্রতি ১০ টাকা। আর কিছুটা উন্নত কাগজের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০/২২ টাকায়। এদিকে কলম পেন্সিলের দাম আগের মতই আছে। তবে এটা ঠিক প্রতি বছর শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ছে। বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষ জন্য খুবই সমস্যা হচ্ছে, অনেক খেটে খাওয়া মানুষ এসে টাকার অভাবে শিক্ষা উপকরণ কিনতে পারছে না, দেখে নিজেরই খারাপ লাগে কক্সবাজার শহরের পৌর সুপার মাকেটের ব্যবসায়ি আবদুল আজিজ বলেন, আমরা পাইকারী কাগজ কলম স্কুল ব্যাগসহ সব কিছু বিক্রি করি। এটা সত্যি যে চলতি বছর বেশ কিছু শিক্ষা উপরণের দাম বেড়েছে। আর কাগজের দাম বেড়েছে ১৫ দিনের মধ্যে কয়েক দফা। এতে সমাজের গরীব মানুষ জনের বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। একটা ভাল স্কুল ব্যাগ নিতে গেলে ১০০০ টাকা লাগছে। আর ২ মাসের কাগজ-কলম নিতেও অনেক টাকা লাগছে। আর যাদের ২/৩ াট ছেলে মেয়ে স্কুলে পড়ে তারা এক বারেই বিপদগস্ত হয়ে পড়েছে।
শহরের সালাম মার্কেটের ব্যবসায়ি ফরিদ বলেন, কিছু দিন আগে এক অভিভাবক দোকানে এসে ছেলের জন্য স্কুল ব্যাগ কিনতে চেয়ে দরদামে মিলতে না পারায় তার চোখের পানি দেখে আমি নিজেকে সামলাতে পারি নি। পরে কিনা দামের চেয়ে কম দামে তাকে ব্যাগটি দিয়েছি। সাধারণ মানুষ আসলেই শিক্ষা উপকরণ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। সবার সামর্থ এক নয় আর স্কুলগুলো যেহারে ভর্তি এবং নানান ভাবে বাণিজ্য শুরু করেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
শহরের আমেনা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সামিনা কাশেম পান্না বলেন, আমাদের স্কুলে বেশির ভাগই স্বল্প আয়ের পরিবারের মেয়ে। ভর্তি হওয়ার সময় তারা অনেকে যে সামান্য টাকা নেওয়া হচ্ছে সেখান থেকে মওকুফ করিয়ে ভর্তি হয়েছে। এখন পুরো দমে ক্লাস শুরু হয়েছে কিন্তু অনেকে শিক্ষা উপকরণ নিয়ে আসতে পারছে না কারন জানতে চাইলে বলছে টাকার অভাবে সব কিনতে পারে নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারিভাবে মেয়েদের উপবৃত্তি দেওয়া হয়। কিন্তু উপবৃত্তি পাওয়ার কিছু নিয়ম আছে সেগুলো মেনে চললে উপবৃত্তি পায়।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর এম এ বারী বলেন, বাংলাদেশের গড় দারিদ্রতার হার এখনো অতিমাত্রায় সেটা বিবেচনা করা দরকার। এটা ঠিক সাধারণ মানুষ শিক্ষা উপকরন যোগাড় করতে চরম হিমশিম খাচ্ছে । যার ফলে ঝরে পড়ার প্রবনতাও বাড়ছে ।