অবশেষে ২৫০ শয্যার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু হচ্ছে। ২২ মার্চ ছয় শয্যার আইসিইউ ইউনিটটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে। সংকটাপন্ন পর্যটকসহ স্থানীয় জটিল রোগীদের সেবা দিতে প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ করে ২০০৮ সালে হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হয়। দেওয়া হয় জীবন রক্ষাকারী আধুনিক সব সরঞ্জাম। কিন্তু জনবলের অভাবে এত দিন ইউনিটটি চালু হয়নি।
ইউনিটটি চালু না হওয়ায় সংকটাপন্ন রোগীদের প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেত হতো। দ্রুত পৌঁছানো যায় না বলে পথেই অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক পু চ নু জানান, সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আটজনের জনবল নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে চারজন চিকিৎসক ও চারজন নার্স। যদিও আইসিইউ স্থাপনের জন্য দরকার ৪০ জনের জনবল। তিনি জানান, আইসিইউ ইউনিটে নিয়োগপ্রাপ্তদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই সরকারি হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) ও আইসিইউ স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
সিসিইউ স্থাপনের জন্য একটি বহুতল ভবন প্রস্তুত করা হলেও সেটি কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হওয়ায় সেখানে আর সিসিইউ চালু হয়নি। একই সময়ে হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ছয় শয্যার আইসিইউ স্থাপনের জন্য তখন দেড় কোটি টাকার অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি বরাদ্দ করা হয়। অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা হয় আরও দেড় কোটি টাকা। কিন্তু জনবলের কারণে এত দিন এই ইউনিটটি চালু হয়নি।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান জানান, জেলার কোথাও আইসিইউ চালু না থাকায় ভ্রমণে আসা পর্যটক, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও স্থানীয় সংকটাপন্ন রোগীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে ১৫০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পথে অনেকে মারা যাচ্ছেন। আইসিইউ স্থাপিত হলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কক্সবাজারে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, জেলার সবচেয়ে বড় এই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদ রয়েছে ২৪১টি। এসব পদের অনুকূলে রয়েছেন ১৪৮ জন। আরও ৯৩টি পদ খালি রয়েছে। এমনকি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সাতজন চিকিৎসকের স্থলে আছেন মাত্র চারজন।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল কাদের চৌধুরী এবং কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দীপক শর্মা জানান, সরকারি এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু বিপুলসংখ্যক রোগীর সেবা দিতে গিয়ে মাত্র চারজন চিকিৎসককে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ৩০ জনের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকে দেড় শতাধিক শিশু। তা ছাড়া আইসিইউ চালু না থাকায় গত আড়াই মাসে শহরের অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক পদে উন্নিত হওয়া রতন চৌধুরী বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ছয় শয্যার আইসিইউ কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জনবল বাড়লে শয্যা সংখ্যাও বাড়ানো হবে। আর হাসপাতালের খালি পদে জনবল নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে লেখালেখি চলছে।