তীব্র গরমের কারণে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো কক্সবাজারের বাসিন্দারাও বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। আর অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কৃর্তপক্ষ।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারের তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এক মাসের বেশি সময় জুড়ে দিনে ৩৪ ডিগ্রি এবং রাতে ৩০-২৮ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে তাপমাত্রা। তবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সোমবার ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের দেয়া তথ্য মতে, গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া, ভাইরাস জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রচণ্ড গরমের কারণে শিশু-বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষই আক্রান্ত হচ্ছেন এসব রোগে। ফলে গত কয়েকদিন ধরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ডায়রিয়া ও ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের অনেকে সিট না পেয়ে মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওয়ার্ডের ভিতরের মেঝেতেও জায়গা না হওয়ায় অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দায় বা করিডোরে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বেশি রোগী দেখা গেছে ডায়রিয়া, শিশু, পুরুষ ও নারী ওয়ার্ডে।
তবে ওয়ার্ডের বাইরে মেঝেতে থাকা রোগীদের মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রচণ্ড গরম। ওয়ার্ডের বাইরে বৈদ্যুতিক বাল্ব থাকলেও ফ্যানের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে গরমের দুঃসহ যন্ত্রণা ছাড়ছে না রোগীদের। যন্ত্রণা কিছুটা কমাতে হাতপাখা দিয়ে তাদের বাতাস করছে স্বজনরা। গরমের কারণে রোগে আক্রান্ত অনেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেক রোগীর অবস্থা খারাপ পর্যায়ে থাকায় চিকিৎসা নিতে ভর্তি হচ্ছেন।
সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্তব্যরত এক নার্স জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে এ ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এখানে রোগীর শয্যা আছে ২০টি। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী ওয়ার্ডে ভর্তি থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন রোগী ওয়ার্ডে নতুন করে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হচ্ছেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবারও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নতুন করে ২০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ ওয়ার্ডে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৯ জন রোগী। এর আগের দিন ভর্তি ছিলেন ৪২ জন। প্রতিদিনই শয্যার অতিরিক্ত রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) সুলতান আহমদ সিরাজী জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে ডায়রিয়া, ভাইরাস জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন শতাধিক রোগী। আড়াইশ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসাধীন রয়েছে সাড়ে চার শতাধিক রোগী। এছাড়া বহির্বিভাগে অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে রোগীদের এ চিত্র দেখা যাচ্ছে।
তিনি জানান, পুরুষ ওয়ার্ডে রোগীর শয্যা রয়েছে ৩৫টি। কিন্তু এ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ৭৭জন। এদের বেশিরভাগই প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। একই চিত্র হাসপাতালের শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে। গরমের কারণে শিশু-বৃদ্ধ সব বয়সী লোকজনই বিভিন্ন রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ২১ মাস বয়সী শিশু আয়েশা আক্তারের মা মরিয়ম বেগম বলেন, বাচ্চার হঠাৎ করেই বমি ও ঘন ঘন পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এরপর দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করেছি।
একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন কক্সবাজার শহরের বাদশাঘোনা এলাকার কেফায়েত উল্লাহর ছেলে রাহামত উল্লাহ (৬০)। তিনি বলেন, দু’তিনদিন আগে বমি, ঘন ঘন পায়খানা ও জ্বর শুরু হয়। ওইদিনই আমি চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হই।
বমি, জ্বর ও মাথা ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন রামুর মন্ডল পাড়ার মৃত মুফিজুর রহমানের ছেলে নুরুল আলম সাগর (১৯)। তিনি জানান, হঠাৎ প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা ও বমি শুরু হয়। সঙ্গে জ্বরও আসে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল আলম জানান, গরমের অসুস্থ হয়ে গত কয়েকদিন ধরে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসছেন অনেক রোগী। বাইরের পচা-বাসি খাবার আর দূষিত পানির কারণে লোকজন ডায়রিয়া ও জন্ডিসসহ বিভিন্ন মৌসুমী রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। গরমে অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়ায় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে।