ইয়াবাসহ মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরতে কক্সবাজারসহ সারা দেশে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযান শুরু হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী নানা প্রচারণা চলবে।
গতকাল শনিবার বেলা একটায় কক্সবাজার শহরের বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে ‘দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান ও প্রচারণা’ উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ওই কথা বলেন। স্থানীয় লোকজন হাত তুলে তাঁর এই বক্তব্য সমর্থন করেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাসব্যাপী এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইন তৈরির কারখানা নেই। প্রতিবেশী দেশে তৈরি ইয়াবা-ফেনসিডিলে দেশ সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। ইয়াবা কারখানা বন্ধে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে কারা জড়িত তার অনুসন্ধানও চলছে। ইয়াবা চোরাচালান বন্ধে সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা কক্সবাজার শহর থেকে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী এ অভিযান শুরু করেছি। আমরা মাদকমুক্ত কক্সবাজার চাই। সুন্দর ও আলোকিত কক্সবাজার চাই।’
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান কক্সবাজার দিয়ে ইয়াবা পাচারের তথ্য তুলে ধরেন। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা কক্সবাজার থেকেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই এখান থেকেই প্রচারণা শুরু। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরতে চাই। পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর তালিকাগুলো সমন্বয় করে আরেকটি পূর্ণাঙ্গ ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজারের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার, আশেক উল্লাহ রফিক, আবদুর রহমান বদি ও মোহাম্মদ ইলিয়াছ, কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম ইস্ট জোন কমান্ডার এম শহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ।
সাংসদ মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, মিয়ানমারে ইয়াবা তৈরি হলেও সেখানকার কেউ তা খায় না। খোলা সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে প্রভাবশালীরা। ইয়াবা চোরাচালান বন্ধ করতে হলে ব্যবসায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘ইয়াবা পাচারের স্বর্গরাজ্য বলেই কক্সবাজার থেকে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী প্রচারণা শুরু হলো। এটা কক্সবাজারবাসীর জন্য লজ্জার ব্যাপার। আমাদের লজ্জা দূর করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা থেকে এখানে এসেছেন। আমরা আর মাদকের গ্রাহক হয়ে থাকতে চাই না।’
সাংসদ আবদুর রহমান বদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ইয়াবার যে তালিকা আপনার কাছে আছে, তা কে তৈরি করেছেন? বিড়াল ধরার জন্য আপনারা যাদের নিয়োগ দিয়েছেন, তারা টাকার বস্তা নিয়ে ইঁদুর ধরছে। তাই ইয়াবা পাচার বন্ধ হচ্ছে না।’
সাংসদ বদি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নন দাবি করে বলেন, ‘সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগরে ৪০ হাজার ইয়াবাসহ একজন টেলিভিশন সাংবাদিক ধরা পড়লেও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। কারণ থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ার ভয় আছে। আপনাকে (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।’
সাংসদ সাইমুম সরওয়ার বলেন, ইয়াবা ও মানব পাচারের নিরাপদ ঘাঁটি কক্সবাজার মাদকাসক্তদের অভয়ারণ্য। ইয়াবা ব্যবসার টাকায় অনেকে দানবীর সেজেছেন। যে সময় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখন মাদক দিয়ে দেশের তরুণ প্রজন্মকে শেষ করার পরিকল্পনা চলছে।
এর আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শুরু হওয়া বর্ণাঢ্য মাদকবিরোধী শোভাযাত্রা প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন।