ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক :
একাত্তরের পর বাংলাদেশ সবচেয়ে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে চলেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধকালে এবং যুদ্ধপরবর্তী কঠিন সময়টা সততা, প্রাজ্ঞতা ও নেতৃত্বগুণে সামলেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজকের এই কঠিন সময়ের মুখোমুখি তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাকে আওয়ামী লীগের চামচা মনে হলে হোক, কিন্তু আমার কাছে এটাই সত্য যে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের যোগ্যতম নেতা তিনি। সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া এনাদের চেয়ে অনেকবেশি যোগ্য তিনি। আর এদের বাইরেও বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিকল্প এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি।
এখন বাংলাদেশে যেটা হচ্ছে সেটা বৈশ্বিক ইসলামী জঙ্গিবাদের অংশ। শেখ হাসিনা শক্তভাবে বিশ্বের সব পক্ষের শক্তিকে তোয়াক্তা না করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। এর বিরুদ্ধে একটা চক্র হয়ত শক্তি সঞ্চয় করে প্রতিশোধমুখী হবে। বর্তমান আওয়ামী লীগকে সেটা বুঝে আরো কৌশলী ও আরো দৃঢ়চেতা হতে হবে।
এখন যদি বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনে থাকতো তাহলে এ ধরনের আক্রমণ হয়ত হত না। হয়ত দেশ আপাতভাবে ভালোই থাকত দেশ। কারণ ধর্মীয় জঙ্গিরা তাদের মিত্রপক্ষকেই ক্ষমতায় পেত। তারা তখন রাষ্ট্র-ক্ষমতার সাহায্য নিয়ে নির্বিঘ্নে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতো। এখন সেটি হচ্ছে না বলে নানা ধরনের হামলা, গুপ্ত হামলা হবে।
এখন ক্ষমতাসীন দলের উচিত হবে দলীয় ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা না করে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করা। তাতে হয়ত অনেক সময় দলীয় স্বার্থ রক্ষা হতে না। সুবিধাভোগীরা কিছুটা সুবিধা বঞ্চিত হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব তো বটেই সেইসঙ্গে বাঙালি জাতীয়তাবাদ সমুন্নত রাখার জন্যে একাত্তরের সেই আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। মাননীয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এখন সেই একাত্তরের আওয়ামী লীগ চাই। এই আওয়ামী লীগের ব্যর্থতাকে বড় করে তুলে তার পতন চেয়ে লাভ নেই। তাহলে মৌলবাদেরই জয় হবে। কারণ ক্ষমতাসীন দলের পতন মানেই কিন্তু ফের বিএনপি-জামায়াত জোটের উত্থান। তারা অনেকদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে আরো বেশি উগ্র হয়ে কামব্যাক করবে।
তাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ : জাতি এখন আপনার মুখ চেয়ে আছে। আমরা আপনার প্রতি আস্থাশীল। আপনার দলে অনেক দুর্নীতিপরায়ণ নেতা আছে, চোর-বাটপারও নেতা হয়েছে, বদমায়েশ-নেশাখোর আছে দলীয় ছাত্র সংগঠন বা অঙ্গ সংগঠনে, অন্যদলের নীতিভ্রষ্ট-সুবিধাভোগীরা নয়া আওয়ামী লীগ হয়েছে। আপনি কঠোর হোক। ওরা আপনাকে ক্ষমতায় রাখবে না। প্রমাণ, তারাই আপনাকে প্রতিদিন একটু একটু করে ডোবাচ্ছে। আপনাকে ক্ষমতায় এনেছে জনগণ, ক্ষমতায় টিকিয়েও রাখবে জনগণ। আপনি জনগণের প্রতি আস্থাশীল হোন। আপনি ভোটের জন্য সব ধরনের মতাদর্শ বা চরিত্রের মানুষদের তোষামোদ করেন না, তাহলে প্রকারান্তরে আপনার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
তনু হত্যা, ব্লগার হত্যা, পুরোহিত হত্যা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, বাবুল আক্তারের কেস– এগুলো নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা বা ধামাচাপা দেয়া মানেই আপনি আপনার শক্তি ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন..আপনি যাদের সঙ্গে আঁতাত করছেন (যদি করে থাকেন?) তারা তাদের সবচেয়ে ধারালো অস্ত্রটা আপনার জন্য শাণিত করছে। ..Be yourself, Be the real Daughter of the Father of the Nation.
দেশের সাধারণ মুসলমান জনগণকে বলি। যদি আপনারা প্রকৃত পস্তাবেই মুসলমান হোন, ইসলামকে বিকৃত হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে চান, তাহলে আপনারা ইসলামের নামে যে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তার বিরুদ্ধে সরব হোন। প্রতিবাদী হোন। নাস্তিক-অন্য-ধর্মাবলম্বী খুন করছে বলে নীরব থেকে মৌন সম্মতি দিয়েন না। আপনারা ভালো করেই জানেন, এটা প্রকৃত ইসলাম না। এটা মহানবীর (সাঃ)-এর আদর্শ না। এই জঙ্গিবাদে পশ্চিমাদের মদদ আছে। এটা নামে ইসলামী হলেও আরব দেশের জঙ্গিবাদ না। আমেরিকার-ইসরায়েলি জঙ্গিবাদ। যদি ইসলামের পক্ষে আপনি থাকেন, তবে ইসলামী জঙ্গিবাদের বিপক্ষে আপনাকে দাঁড়াতেই হবে।
নাস্তিক খুন হচ্ছে বলে, অন্যধর্মের মানুষ কতল হচ্ছে বলে, পানশালা বা নাইট ক্লাবে হামলা হলে, মনে রাখবেন মসজিদ-মাদ্রাসাও বাদ যাবে না। বৈশ্বিক ইতিহাস তার প্রমাণ। এখন জাতীয় ঐকমত ছাড়া এই বৈশ্বিক জঙ্গিবাদের মোকাবেলা করা সম্ভব না।
লেখক-মোজাফফর হোসেন