ডিবিসি প্রতিবেদক.
বিশ্ব মহামারিতে রূপ নেয়া করোনার গণসংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন চলছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। লকডাউনের আওতায় রয়েছে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পও। ফরে রোহিঙ্গাদের চলাফেলা নিয়ন্ত্রণে কঠোরতা অবলম্বন করছে প্রশাসন। এর আওতায় ক্যাম্পে খাদ্য ও চিকিৎসা এবং অতি গুরুত্বপুর্ণ মানবিক সেবার বাইরে সকল কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সেবা কার্যক্রমে নির্দিষ্ট কর্মী ছাড়া দেশি-বিদেশি সকলের ক্যাম্পে যাতায়াত নিষিদ্ধ। এরপরও চরঘন বসতির রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সম্ভাব্য সংক্রমণ এবং ততপরবর্তী চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ক্যাম্পের হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশনের জন্য ৩০০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ আইসোলেশন শয্যা এক হাজারে উন্নীত করার কার্যক্রম চলছে বলেও জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি) অফিস।
লকডাউন ঘোষণার পর থেকে কক্সবাজারে সেনা-নৌ-র্যাব, পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা ও সচেতনতার ফলে রোহিঙ্গাদের চলাচল সীমিত রয়েছে। মানবিক সেবা কার্যক্রমে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে ক্যাম্পে হাইজিন প্রমোশন।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের সচেতন করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনাগুলো মিয়ানমারের এবং ইংরেজি ভাষায় ভিডিও ক্লিপ, পোস্টার, লিফলেড এর মাধ্যমে প্রচার অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক ও হাইজিন প্রমোটাররা সচেতন করার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
অন্যদিকে, করোনায় ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের আলাদা করে রাখার জন্য ক্যাম্পের হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশনের জন্য ৩০০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যা এক হাজারে উন্নীত করতে ক্যাম্পে আরো ৬টি স্থানে কার্যক্রম চলছে। ২৮০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে আইপিসির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের ৩৬ জন সদস্য ডব্লিউএইচও’র তত্ত্বাবধায়নে আইপিসির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ।
কুতুপালং মধুরছরা ক্যাম্পের সালামত খান বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঘর থেকে বাইরে না যাওয়া, সাবান দিয়ে হাত মুখ ধোয়াসহ পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি কারো সাথে না মিশতে বলা হয়েছে। আমরা তা মেনে চলার চেষ্টা করছি অন্যদেরও করাচ্ছি। খবর পাচ্ছি করোনা প্রতিদিন বিভিন্ন মানুষের জান কবস করছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী হতে অন্যজনে এটি দ্রুত ছড়ায়। আমরা ঘনবসতি। এখানে আল্লাহ না করুক, কারো হলে দ্রুত ছড়িয়ে যাবে। তাই ঘর থেকে বের হয় না। কোথাও আড্ডা দিই না। সন্দেহ হলেই সাবান দিয়ে হাত ধুই সবাই।
কুতুপালং লম্বাশিয়ার আমির আলী বলেন, শুরুর দিকে মাস্ক পরতে অস্বস্তি লাগত এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। ত্রাণ আনতে বা অন্য কোনো জরুরি কাজে ঘর থেকে বের হলে মাস্ক পরেই যায়।
বালুখালী ক্যাম্পের শামসুল আলম জানান, ঘনবসতির ক্যাম্পে ঝুঁকি থাকায় প্রশাসনের লোকজন তাদের ঘর থেকে বের হতে দেয় না। একটু পর পর বিজিবি-পুলিশ-আর্মির গাড়ি আসে। ক্যাম্পের মাঝিরাও সবাই ভালোমতো বুঝিয়েছেন, তাই বিনা কারণে আমরা ঘর থেকে বের হয় না।
ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) এর মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শুধুমাত্র অতি গুরুত্বপুর্ণ মানবিক সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। করোনাভাইরাসের বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণার কারণে রোহিঙ্গাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রোহিঙ্গারা অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পে আইসোলেশনের জন্য ৩০০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যা এক হাজারে উন্নীত করার কার্যক্রম চলছে। ২৮০ জন স্বাস্থ্য কর্মীকে আইপিসির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্তাবধানে সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের ৩৬ জন সদস্য আইপিসির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা (আরআরআরসি) মো. মাহবুব আলম তালুকদার জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশেষভাবে সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত বিদেশিদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়া-আসা নিষিদ্ধ রয়েছে। খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা ছাড়া সকল কার্যক্রম বন্ধ।
উল্লেখ্য, করোনার প্রাদূর্ভাব রোধে গত ৮ এপ্রিল বিকেল থেকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেহিঙ্গা ক্যাম্পসহ পুরো কক্সবাজার জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। এরপর থেকে সর্বত্র কঠোর নজরদারি জারি রেখেছে প্রশাসন ও শৃংখলাবাহিনী। ###