রাজধানীর কল্যাণপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৯ তরুণের মধ্যে সাব্বিরুল হক কণিক (২২) নামে একজন চট্টগ্রামের আনায়ারা উপজেলার বাসিন্দা বলে সনাক্ত করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়ার ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক চৌধুরী রাশেদের ছেলে। আজিজুল হক চৌধুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। আনোয়ারা থানা পুলিশের একটি দল গতকাল মধ্যরাতে সাব্বিরুল গ্রামের বাড়িতে গিয়ে খবর নিয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে সাব্বিরুলের পরিবার চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করে আসছে।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ বলেন, ‘ঢাকায় নিহত জঙ্গিদের একজন আনোয়ারার বাসিন্দা খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে আমরা বরুমচড়ায় আজিজুল হক চৌধুরী রাশেদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে আত্মীয়-স্বজনরা বিভিন্ন অনলাইনে পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেকে একজনকে সাব্বিরুল বলে সনাক্ত করলেও তার পরিবারের কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি।’
ওসি আরো বলেন, ‘সাব্বিরের পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরে থাকায় আমরা আজ বুধবার এ ব্যাপারে বিস্তারিত খবরা-খবর নেবো।’
ওসি আবদুল লতিফ বলেন, ‘অভিযানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক জঙ্গি হাসান নিহত ৯ জনের মধ্যে ৮ জনের নাম জানিয়েছে। তার বর্ণনায় সাব্বিরুল হক কণিকের নাম সাব্বির বলে উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নিহতদের ছবি প্রকাশ করে তাদের পরিচয় জানতে চেয়েছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারার বরুমচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক চৌধুরী রাশেদের ছেলে কণিক চার মাস ধরে নিখোঁজ ছিল। সন্তান বিপথগামী হয়েছে বুঝতে পেরে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরিও করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাব্বিরের পরিবারের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, নিহতদের মাঝে সাব্বিরের ছবি দেখে গতকাল রাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। তারা প্রকাশিত ছবির নিচের সারির মাঝেরজনকে সাব্বির বলে শনাক্ত করেন।
জানা গেছে, সাব্বিরুলের বাবা আজিজুল হক এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি সপরিবারে চট্টগ্রাম শহরে বাস করেন। চাকরি করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে। তার বড় ভাই মোজাম্মেল হক চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা। আজিজুল হকের সন্তান এভাবে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে, এলাকার মানুষের কাছে তা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল।
সাব্বিরুলের বাবা আজিজুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের পরিবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। এমন পরিবারের সন্তান হয়ে কণিকের বিপথগামী হওয়া ব্যাপারটি আমরা আঁচ করতে পারিনি। এটা আমার এবং আমার পরিবারের জন্য বড়ই কষ্টের। ভয়, শঙ্কা আর লজ্জায় এ ব্যাপারে এতদিন জিডি করেননি বলে জানান তিনি।
পারিবারিক সূত্র জানায়, কণিক আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি)ইকনোমিক অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র ছিল। গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে ২০১০ সালে এসএসসি এবং ২০১২ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে।
এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, সাব্বিরুল ছোটকাল থেকে ইসলাম ধর্মের প্রতি বেশি ঝোঁক ছিল। আনোয়ারা পশ্চিম পটিয়া এলাকায় ধর্মীয় প্রচারে মাইক ব্যবহার বিরোধী একটা গ্রুপ রয়েছে। সাব্বিরুল প্রথম দিকে সে গ্রুপের সমর্থক ছিল। পরে সে তাবলিগের কথা বলে মাঝে মাঝে সপ্তাহ-দশদিনের জন্য উধাও হয়ে যেত। বছরখানেক আগে একবার তিন মাসের জন্য নিরুদ্দেশ থাকার পর বাসায় ফিরে আসে।
সর্বশেষ চার মাস আগে রাউজানে এক বিয়েতে যাওয়ার কথা বলে বাবার কাছ থেকে পাঁচশ টাকা নিয়ে বের হয় বলে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেই থেকে সাব্বিরুল নিখোঁজ। দীর্ঘদিন কোনো খোঁজ না থাকায় সন্তানের আশা এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছিলেন বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা। সন্তান নিজে বিপথগামী হয়েছেন বুঝতে পেরে নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরি করারও প্রয়োজন মনে করেননি তারা।
সম্প্রতি ‘আইডি নাম্বার দুই’ নামে ফেইসবুকের একটি ভুয়া আইডি থেকে তার কিছু তৎপরতা স্বজনদের কাছে ধরা পড়ে। ওই আইডি থেকে জানান, তিনি বিয়ে করেছেন। কিন্ত কোথায় আছেন, কেমন আছেন কিছুই বলেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক নিকট আত্মীয় জানান, ২০০৮ সালে নাইনে পড়ার সময় ‘আমগো সাব্বির দা’ নামে একটি ফেইসবুক আইডি খুলে ব্যবহার করে। গত দুই বছর ধরে সেটি ইনেক্টিভ করে রাখে। দুই বছর আগে ‘আইডি নাম্বার দুই’ থেকে তার তৎপরতা দেখা যায়। এই আইডিটি ছিল কোরআন-হাদিসের আলোকে নানা স্ট্যাটাসে ভরা। পরে সে আইডিও অকার্যকর হয়ে যায়।