বারবার দল গোছানোর কথা বললেও গত দুই বছরে মাঠ পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজের অর্ধেকও শেষ করতে পারেনি বিএনপি। এবার কেন্দ্রীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে আবার জেলা পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছে দলটি। ১৯ মার্চ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে সব জেলার সম্মেলন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্টে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত রাঙামাটি, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সৈয়দপুর, সিলেট, ঝিনাইদহসহ ১৪টি জেলার সম্মেলন বা নতুন কমিটি হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলা কমিটির সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। চলতি মাসেই আরও অন্তত ২৫টি জেলার সম্মেলন শেষ করতে চায় বিএনপি। যদিও এখনো সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হয়নি।
জানতে চাইলে দল পুনর্গঠনের সঙ্গে যুক্ত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, পৌর নির্বাচনের কারণে পুনর্গঠনের কাজে কিছুটা ধীর গতি এসেছিল। এখন আবার কাজ শুরু হয়েছে। এ মাসের মধ্যে তাঁরা গাইবান্ধা, রংপুর, মুন্সিগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নোয়াখালী, মেহেরপুরসহ ২০-২৫টা জেলা কমিটির সম্মেলন করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পর ওই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, দল গুছিয়ে তাঁরা আবার আন্দোলন শুরু করবেন। তাঁর ওই বক্তব্যের দুই মাস পর এপ্রিলে পঞ্চগড়, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, নওগাঁ, সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম উত্তর, ময়মনসিংহ উত্তরসহ বেশ কয়েকটি জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই ঘোষণা করা হয় ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও শাখা কমিটি এবং শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দুই মাসের মধ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপির সব ওয়ার্ড, থানা কমিটি করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আহ্বায়ক কমিটিকে। এখন পর্যন্ত একটি ওয়ার্ড কমিটিও হয়নি।
দল গোছানোর কাজ শেষ না করেই গত বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে আবার আন্দোলনে যায় বিএনপি। এরপর গত বছরের ৬ আগস্ট চিঠি দিয়ে আবার জেলা পর্যায়ের সব কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নভেম্বরের মধ্যে সব জেলা কমিটি চূড়ান্ত করে ডিসেম্বরে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন করার চিন্তা ছিল। এখন পর্যন্ত জেলা কমিটি পুনর্গঠনের কাজ অর্ধেকের বেশি বাকি। গত ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচনের ডামাডোলে পুনর্গঠনের কাজ থমকে যায়। অবশ্য বিভিন্ন সময় বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন, বিএনপি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করার পর পুনর্গঠন বাধাগ্রস্ত করতে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে। যে কারণে পুনর্গঠন কাজ সবখানে ভালোভাবে করা যায়নি।
এ ব্যাপারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রাহুল কবির রিজার্ভ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি জুলুমের প্রতিবন্ধকতা এখনো আছে। সেগুলো বিবেচনায় নিয়েই তাঁদের কাজ এগোচ্ছে। দল পুনর্গঠন সব সময়ের একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। এখন খুব দ্রুত গতিতে পুনর্গঠনের কাজ চলছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে বেশ কিছু জেলায় সম্মেলন হবে। বিশেষ করে যে জেলাগুলোর কমিটি অনেক দিন ধরে অকার্যকর, সাংগঠনিক কাজে স্থবিরতা এসেছে, সেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর ১০-১২টি জেলা কমিটি হয়েছিল।
বিএনপির সূত্র জানায়, সাধারণত কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে পর্যায়ক্রমে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা/উপজেলা, জেলা কমিটির সম্মেলন করা হয়। সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত নতুন নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলর হয়েছে যোগ দেন। কিন্তু এবার সব জায়গায় এটি করা সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে যাঁরা এখন দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁরাই কাউন্সিলর হিসেবে মনোনীত হবেন।