গত দুইদিন ধরে কালবৈশাখী ঝড় ও জলদস্যু আতংকে মাছ না ধরেই তীরে ফিরছে জেলেরা। গত দুইদিনে কক্সবাজারের নিকটবর্তী সাগরে কমপক্ষে ৪টি মাছধরার ট্রলার ডাকাতির শিকার হয়েছে। জলদস্যুরা ট্রলারের ইঞ্জিন ও মাছ লুট করে নিয়ে গেছে। এসময় মাঝিমাল্লাদেরও বেদড়ক মারধর করা হয়। এতে অন্তত ১৮ জেলে আহত হয়েছে। সেসাথে কালবৈশাখী ঝড়ে সাগরে মাছধরা দুরুহ হয়ে পড়েছে। একদিকে লুন্ঠন ও অপর দিকে ঝড়ো হাওয়ায় ট্রলারডুবির আশংকা, এ দুয়ের কবলে পড়ে তীরে ফিরছে মৎস্য শিকারীরা।
ট্রলার মালিক সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা না পড়া ও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এক মাসের বেশি সময় সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর গত বুধবার থেকে ধীরে ধীরে ট্রলারগুলো সাগরে যেতে শুরু করেছে। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ দিনের রসদ নিয়ে সাগরে যাওয়া জেলেরা এখন মাছ না ধরেই ঘাটে ফিরছে। একদিকে কালবৈশাখী ঝড়, অন্যদিকে ডাকাত আতংক; সাগরের মৎস্য আহরণে চরম প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে সামুদ্রিক মাছের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। জেলেদের পরিবারে পূনরায় নেমে এসেছে দূর্দিন।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ জানান, মাসাধিককাল মাছধরা বন্ধ থাকার কারণে আর্থিক অনটনে পড়া জেলে-বহদ্দাররা সুদে টাকা নিয়ে মাছের আশায় সাগরে গিয়েছিল। কিন্তু ডাকাতের ভয় ও প্রতিকূল আবহাওয়া, এ পেশার উপর নির্ভরশীল কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
তিনি জানান, কক্সবাজারের কূলবর্তী বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় শনিবার রাতে শহরের ফিশারীপাড়ার মোহাম্মদ সোলতান এর মালিকানাধীন এফবি জানেবা খালেদা, মহেশখালীর মায়ের দোয়া ও টেকনাফের ছৈয়দ আহমদের এফবি ইশা মনিসহ অপর দুটি ট্রলার জলদস্যুতার শিকার হয়েছে। জলদস্যুরা ট্রলারের ইঞ্জিন ও মাছ লুট করে। এসময় মাঝিমাল্লাদের বেদড়ক মারধর করে। এতে অন্তত ১৮ জেলে আহত হয়। জলদস্যুদের এ তান্ডবের আতংকের পাশাপাশি রবিবার রাত থেকে সাগরে কাল বৈশাখী ঝড় দেখা দেয়ায় বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবির আশংকা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় মাছ না ধরেই ফিরছে ট্রলারগুলো।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় প্রায় ৫ হাজার এবং সারাদেশে প্রায় ২৫ হাজার মাছ ধরার যান্ত্রিক নৌকা রয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ ট্রলার গত কয়েকদিনে সাগরে মাছ ধরতে যায়। মাছ ধরা ট্রলারগুলোর মধ্যে বিহিন্দি জালের বোট সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি এবং ইলিশ জালের বোট গভীর সাগরে মাছ ধরছিল। আর এসব ট্রলারের প্রতিটিতে নিয়োজিত রয়েছেন ১৬ থেকে ২২ জন করে জেলে।
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, উপকূলবর্তী সমুদ্রে মাছ ধরার বিহিন্দি জাল বা ‘খুঁড়ি জালের’ ট্রলারগুলো দিনে গিয়ে দিনেই মাছ ধরে ফিরে আসছে। মূলত এসব বোটগুলো সাগর থেকে এক প্রকার চিংড়ি ধরে। যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘করত্যা ইছা’ বলা হয়। সেসাথে এই ট্রলারের জালে আরো ধরা পড়ে রূপচান্দা, ছুরি, ফাইস্যা, মাইট্টা, গরুমাছ, লইট্টাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। আবার এক সপ্তাহ বা পক্ষকালের রসদ নিয়ে সাগরে যাওয়া ট্রলারগুলো ইলিশসহ অন্যান্য বড় প্রজাতির মাছগুলো ধরে থাকে। যা বাজারে দামে বিক্রি হয়ে থাকে।