কক্সবাজারে আইনজীবীদের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সংগঠন জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল শনিবার। এই নির্বাচন ঘিরে গত দুই সপ্তাহ ধরে সরগরম রয়েছে আদালত পাড়া। মর্যাদার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কার গলায় ‘জয়মাল্য’ উঠবেÑ এ নিয়ে চলছে সরব আলোচনা। শেষ মুহুর্তে এসে প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে নানা কৌশলে প্রচারনা চালাচ্ছেন। প্রচারপত্র বিলির পাশাপাশি ধর্ণা দিচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে-দ্বারে। মুঠোফোনে যোগাযোগ রেখে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন প্রার্থীদের অনেকেই।
আইনজীবীদের একটি অংশ বলছেন, এবার নবীন ও প্রবীনদের সমন্বয়ে গড়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত মোহাম্মদ ইসহাক- আ জ ম মঈন উদ্দীন পরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে বিজয়ী হবে। অপর একটি অংশ বলছেন, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আবুল কালাম সিদ্দিকী-তাওহিদুল আনোয়ার পরিষদের প্রার্থীদের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে আনা কঠিন হবে। লড়াই হবে সমান প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত পরিষদের সভাপতি প্রার্থী মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে আমরা শতভাগ জয় প্রত্যাশা করছি। কারণ আমাদের পরিষদ থেকে যারা এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের সকলের পরিচ্ছন্ন ইমেজ রয়েছে। আমার বিশ্বাস, ভোটাররা এমন প্রার্থীকেই বেছে নেবেন। ভোটাররা জানে কারা বিজয়ী হলে আইনজীবীদের স্বার্থ রক্ষা এবং অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখবে।’
যোগাযোগ করা হলে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোঃ তাওহিদুল আনোয়ারও প্রায় একই প্রত্যাশার কথা জানান। তাঁর বিশ্বাস ওই পরিষদই সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে বিজয়ী হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালত প্রাঙ্গন ঘুরে দেখা গেছে, আদালত প্রাঙ্গন ও আশপাশের এলাকা প্রার্থীদের ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে। চারদিকে ভোট উৎসবের আবহ। আইনজীবীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নির্বাচন। চায়ের কাপে চুমুক দিতে-দিতে আইনজীবীরা পরস্পরের সাথে প্রার্থীদের বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। দল-মতের উর্ধ্বে উঠে ‘স্বচ্ছ ইমেজের’ প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ভোটারদের অনেকই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইনজীবী বলেন, ‘এখানে দলীয় মোড়কে নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি, নির্বাচনে দলের চেয়েও বড় কথা হলো ব্যক্তি নির্বাচন। যারা নির্বাচিত হলে আইনজীবীদের স্বার্থ রক্ষা হবে তাদেরকেই ভোট দেবো।’ জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ১৭টি পদের বিপরীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত দুইটি পরিষদ থেকে ১৭ জন করে মোট ৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ‘সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’ কর্তৃক মনোনীত পরিষদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, সভাপতি পদে মোহাম্মদ ইসহাক, সহ-সভাপতির ২টি পদে বদিউল আলম সিকদার ও মোহাম্মদ জাকারিয়া, সাধারণ সম্পাদক পদে আ.জ.ম মঈন উদ্দীন (শাহেদ), সহ-সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) পদে এ.কে ফজলুল হক চৌধুরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) পদে শুভেন্দু বিকাশ সাহা (বিক্রম), পাঠাগার সম্পাদক পদে আবুল হোছন, আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মো. শামশুল হক। এছাড়াও ৯টি সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পীযুষ কান্তি চৌধুরী, আমজাদ হোসেন, কপিল উদ্দীন চৌধুরী, ইকবালুর রশিদ আমিন, ফাহিমা আকতার, এ.কে.এম এরশাদ উল্লাহ, চৌধুরী ফাহাদ বিন ফিরোজ, মোহাম্মদ রাশেদ নেওয়াজ ও রফিকুল আলম।
অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ‘জাতীয়তাবাদী, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সমমনা আইনজীবীদের মনোনীত পরিষদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, সভাপতি পদে আবুল কালাম ছিদ্দিকী, সহ-সভাপতির ২টি পদে এস.এম নুরুল ইসলাম ও ইব্রাহিম খলিল, সাধারণ সম্পাদক পদে মো. তাওহীদুল আনোয়ার, সহ-সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) পদে ছলিমুল মোস্তফা, সহ-সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) পদে এ.কে ফিরোজ আহমদ, পাঠাগার সম্পাদক পদে মো. মিজানুর রাশেদ, আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নুরুল হুদা। এছাড়াও ৯টি সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সব্বির আহমদ, মো. ফরিদ উদ্দিন ফারুকী, মো. আবু তাহের (২), এ.কে.এম ইলিয়াছ, ফিরোজ আহমদ, নাজিম উদ্দিন, আবু হুরাইরা, ছরোয়ার আলম ও ইমাম হোসেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম শাহজাহান জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত একটানা জেলা আইনজীবী সমিতির নিজস্ব ভবনে ভোট গ্রহন চলবে। এপর চলবে ভোট গণনা। নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ হবে এক বছর। এবার মোট ৫৫২ জন আইনজীবী ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির গতবারের নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ও সমমনা পরিষদ মনোনীত সৈয়দ আলম-গোলাম ফারুক খান কায়সার প্যানেল থেকে মোট ১৩ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত একেএম আহমদ হোসেন-আ.জ.ম মঈন উদ্দিন প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ৪ জন প্রার্থী। তখন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত প্যানেলের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একেএম আহমদ হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জাতীয়তাবাদী, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ও সমমনা পরিষদ মনোনীত প্যানেলের গোলাম ফারুক খান কায়সার।