গেল ১৯ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপি’র ৬ষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলে কোথাও ছিলেন না বিএনপি’র যুগ্ন মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ। জীবিত অবস্থায় তিনি ভারতে থাকলেও দেশে তাঁর অসংখ্য ভক্ত ও নেতা-কর্মীরা সম্মেলন, কাউন্সিল অধিবেশন, কেন্দ্রিয় কার্যালয়সহ পুরো ঢাকার কোথাও তাঁর একটি ছবিও দেখতে পাননি। কোন পোষ্টার, ফেষ্টুন, ব্যানার, ছবি কিছুই প্রদর্শন করতে পারেনি তাঁর নিজ জেলা থেকে ঢাকায় যাওয়া নেতারা। অথচ কয়েক বছর ধরে সিলেটের নিঁেখাজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর অনেক পোষ্টার, ফেষ্টুন, ব্যানারে ছেয়ে গেছে ঢাকা শহর। শুধু ইলিয়াস আলী নন, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলের নেতাদের ছবি সম্বলিত ছবি, পোষ্টার, ব্যানার, ফেষ্টুন ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়ে সবচেয়ে নির্যাতিত ও ৬২ দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর ভারতে নির্দিষ্ট এলাকায় বন্দি এ জাতীয় নেতার কোন ছবি, পোষ্টার, ব্যানার, ফেষ্টুন সম্মেলনে না দেখে হতাশ ও ক্ষুব্দ হয়েছেন তৃনমূলের নেতারা। নির্যাতিত ও সম্ভাবনাময়ী সালাহউদ্দিনের মতো একজন জাতীয় নেতাকে জাতীয় সম্মেলনে যথাযথভাবে তুলে ধরতে না পারাটা কক্সবাজারের জেলা পর্যায়ের নেতাদের চরম ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
তৃনমূলের বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপি’র ৬ষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে অংশগ্রহনের জন্য কোন প্রস্তুতি নেয়নি জেলা বিএনপি। কতো জন নেতা কিভাবে সম্মেলনে যাবেন বা সেখানে কি করতে হবে এমন কোন প্রস্তুতি ও নির্দেশনা ছিল না। হয়নি কোন প্রস্তুতি সভাও। যার কারণে তৃণমূলের নেতারা বিচ্ছিন্ন ভাবে যে যার মতো করে ঢাকায় পৌঁছেন। সেখানে গিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। এতে জাতীয় নেতা কক্সবাজারের সন্তান ভারতে নির্বাসিত বিএনপি’র যুগ্ন মহাসচিব সালাহউদ্দিনকে স্মরণ করার মতো কোন নেতা ছিল না। ছিল না কোন আয়োজনও। তৃণমূলের নেতারা জানান, সালাহউদ্দিন আহমেদ আজ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারলে হয়তো শত শত নেতা ‘কার আগে কে’ ভিত্তিতে ছবি, পোষ্টার, ব্যানার, ফেষ্টুন ইত্যাদি টাঙ্গিয়ে সম্মেলন স্থল, কেন্দ্রিয় কার্যালয়সহ পুরো ঢাকার দেয়াল রঙ্গিন করতো। এখন আর এসবে কার দায় পড়েছে।
সালাহউদ্দিন ভক্তরা জানান, এসব প্রচারের প্রয়োজনীয়তা হয়তো বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের নাও থাকতে পারে। কিন্তু পুরো দেশে কক্সবাজারকে ছোট করেছেন জেলা পর্যায়ের নেতারা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নেতাদের ছবি, পোষ্টার, ব্যানার, ফেষ্টুন ইত্যাদি প্রচার সামগ্রীতে সম্মেলন স্থল ও এর আশ-পাশ, কেন্দ্রিয় কার্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান সয়লাব হয়ে গেলেও সেখানে জীবনবাজি রেখে কঠিন সময়ে বিএনপি’র হালধরা জাতীয় নেতা সালাহউদ্দিনকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারেনি কক্সবাজারের নেতারা।
এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ মুক্তি পরিষদের সদস্য সচিব এম খাইরুল আমিন বলেন, কেন্দ্রীয় সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমদ মুক্তি পরিষদের পক্ষ থেকে সালাহ উদ্দিন আহমদের ছবি যুক্ত একাধিক উড়ন্ত বেলুনসহ অর্ধশতাধিক ব্যানার ফেস্টুন উপস্থাপনের আয়োজন থাকলেও অসুস্থতার কারনে যাত্রাপথ থেকেই আমি ফিরে আসি। পরে যাদের ওই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সেই সহকর্মীরা যথাযথ ভাবে তা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হন।
সালাহউদ্দিন আহমদ মুক্তি পরিষদের আহবায়ক আমিনুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘নেতা থাকলে সবাই নেতাকে দেখানোর জন্য এসব আয়োজন করেন, কিন্তু আজ নেতা নেই তাই এমন অবস্থা। আমরা কাকে কি বলবো।’
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে মর্মাহত করেছে। শুধু সম্মেলন স্থল কেন, কেন্দ্রিয় কার্যালয়সহ পুরো ঢাকা শহরের কোথাও সালাহউদ্দিনের কোন ছবি, ফেষ্টুন, ব্যানার দেখা যায়নি। অথচ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নেতাদের ছবি সম্বলিত প্রচারে ছেয়ে গেছে পুরো ঢাকা।’ তিনি বলেন, ‘এরপরও আমি স্বেচ্ছাসেবকদলের পক্ষে মঞ্চের কাছাকাছি একটি ব্যানার টাঙ্গিয়েছিলাম।’
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী গতকাল রাতে বলেন, ‘নেত্রীর নির্দেশ ছিল কারো ছবি, ব্যানার, পোষ্টার এসব না টাঙ্গাতে। এছাড়া কক্সবাজার থেকে ঢাকায় গিয়ে আমরা কি বা করতে পারি। সেখানে থাকা-খাওয়া নিয়েও সমস্যা। সব মিলিয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতা ছিল।’