এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, ডেইলি কক্সবাজার :
সাংবাদিকদের সবার মুখে একই কথা, কে হচ্ছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ( বিএফইউজে ) পরবর্তী সভাপতি? রাত পোহালেই শুরু হবে ভোট গ্রহণ। শুত্রকার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোতে ভোটগ্রহণ চলবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে ও বাইরে এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন ইউনিটে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যে রাত পযর্ন্ত সাংবাদিকের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্র ছিল আসন্ন বিএফইউজে’র উপ নির্বাচন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক সিনিয়ন সাংবাদিক বলেন, বিএফইউজের এবারের উপ-নির্বাচনে তিন প্রার্থীর মধ্যে এগিয়ে আছেন সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। দেশজুড়ে সুনাম তার। সাংবাদিকদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। তাই ভোটের মাঠে বুলবুলই এগিয়ে থাকবেন। তবে বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়াও ভোটারদের কাছে বেশ পরিচিত। তাই লড়াইটা হবে বুলবুল-জলিলেই। কিন্তু অনেকে এটা মানতে নারাজ।
অনেক সাংবাদিক বলেন, সাংবাদিক ইউনিয়নের রাজনীতিতে একেবারে অপরিচিত মুখ অশোক চৌধুরী। তবে তিনি সজ্জন ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত। তিনিও এবার সভাপতি পদে লড়ছেন। সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠনের নেতৃত্বে অশোক চৌধুরীকে ভোটাররা খুব একটা পরিচিতি না থাকলেও তিনি বুলবুল ও জলিলের জন্য বড়ো ফ্যাক্ট হয়েছেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাবান মাহমুদ সহ সাংবাদিকদের বিরাট একটি অংশ এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বেশির ভাগ সাংবাদিক আঞ্চলিকতার টানে অশোক চৌধুরী পক্ষে কাজ করছেন। তিনি ভোটযুদ্ধে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর সাথে সমান ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন।
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সাংবাদিকদের সর্ববৃহৎ সংগঠনটির প্রাণপ্রিয় নেতা আলতাফ মাহমুদের অকাল মৃত্যুতে শুন্য সভাপতি পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৯ জুলাই শুক্রবার। এই উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সভাপতি ও একুশে টিভির এডিটর ইন চিফ ও সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, সাবেক মহাসচিব ও ডেইলি স্টারের সিটি এডিটর আবদুল জলিল ভুঁইয়া এবং বৈশাখী টিভির বার্তা প্রধান অশোক চৌধুরী।
বিএফইউজের নির্বাচন নিয়ে তিন প্রার্থীকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ পুরো দেশে সাংবাদিকদের বিভিন্ন আড্ডাস্থলে। দুপুরে ডিআরইউ বাগান তো সন্ধ্যা রাতে প্রেস ক্লাবের ভেতরে জমে উঠছে আড্ডা, চলছে নির্বাচনী আলোচনা-সমালোচনা।
তিনজন প্রার্থীর পক্ষে বিপক্ষে ঝড় উঠছে চায়ের কাপে, চুমুকে চুমুকে। জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ডিআরইউ ক্যান্টিনে খাবারের টেবিলেও গুরুত্ব পাচ্ছে বিএফইউজে’র উপ নির্বাচন। জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ডিআরইউ ছাড়াও সাংবাদিকদের আনাগোনা হয় যেসব জায়গায় সেখানেও আলোচনায় ঠাঁই পাচ্ছে বিএফইউজে’র নির্বাচন প্রসঙ্গটি।
২৯ জুলাই বিএফইউজের উপ-নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়া তিনজনের পক্ষে যারা কাজ করছেন দিন রাত তারা ছুটছেন বিভিন্ন মিডিয়া হাউস বা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। আর সাধারণ ভোটাররা নানা হিসাব কষছেন ওই তিন প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড নিয়ে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিন প্রার্থীর পক্ষে বিপক্ষে প্রচার-প্রচারণা চলছে সমানতালে। একইসঙ্গে তিন প্রার্থীর সমর্থকরা অভিযোগ পাল্টা অভিযোগও করছেন। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের নিয়ে ভোটারদের আলোচনা-সমালোচনা বেড়েই চলেছে। নির্বাচিত হলে কে সাংবাদিকদের রুটি রুজির আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন, পেশার দক্ষতা ও মান উন্নয়নে কে কাজ করবেন-এ ধরনের নানা হিসাব নিকাশ সাধারণ ভোটারদের মধ্যে।
২৯ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য বিএফইউজের নির্বাচনের ঢাকাসহ সারা দেশের চার হাজারেরও বেশি সাংবাদিক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা তিন হাজার। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, যশোর, রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নে বাকী ভোটাররাও একইদিনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের সর্ববৃহৎ এই সংগঠনটির হাল কে ধরেন সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে ২৯ জুলাই রাত পর্যন্ত ।
বিএফইউজে নির্বাচনে কোন বাধা নেই
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর সভাপতি নির্বাচন হতে বাধা নেই। এই নির্বাচন স্থগিত করে আদেশ দিয়েছিল চট্টগ্রামের প্রথম শ্রম আদালত।
বৃহস্পতিবার নিম্ন আদালতের আদেশ স্থগিত করে দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের ডিভিশন বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
ভোটার তালিকা সংশোধনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের প্রথম আদালত বিএফইউজের নির্বাচন স্থগিত করে গত ২৪ জুলাই আদেশ দেয়া হয়। এই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহম্মদ আবু তাহের।
এই আদেশের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এম আমিনুদ্দিন।
তিনি বলেন, একজনের ভোটারের জন্য নির্বাচন বন্ধ হয়ে থাকতে পারে না।
শুনানি শেষে হাইকোর্ট উপরোউক্ত আদেশ দেন।
এদিকে, নির্বাচন কমিশন সুত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে।
ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের মতো কক্সবাজার জেলায়ও শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কক্সবাজার প্রেসক্লাবে ভোটগ্রহণ চলবে।