উখিয়ার কোটবাজাস্থ রত্নাপালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হস্ত কুঁটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় অশ্লীল কর্মকলাপ বন্ধ হচ্ছেনা। যার ফলে দিন দিন ফুসে উঠতে শুরু করেছে স্থানীয় অভিভাবক, সুশীল সমাজ, সচেতন জনগন। এদিকে মেলায় এহেন অবৈধ কর্মকান্ডের কারনে আয়োজক কমিটির ২ সদস্য পদত্যাগ করেছে বলে সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা গেছে। স্থানীয় এলাকাবাসি মেলার প্যান্ডেলের পার্শ্ব থেকে অবৈধ কার্যকলাপের লিপ্ত হওয়া আলামত সম্বলিত যুবক-যুবতীদের পরিহিত আপত্তিকর বস্ত্র সামগ্রী উদ্ধার করেছে স্থানীয় এলাকাবাসি। এতে করে জনসাধারণের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের এনিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই।
বিভিন্ন লোকজনের অভিযোগে জানা গেছে, মেলার নামে ভয়াবহ অবৈধ জুঁয়ার আসর, লটারী, ব্রাইটি-শো, নর্তকির নগ্ন নাচ গান সহ অশ্লীল অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ করার প্রতিবাদে ও এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদের ভবষ্যিত চিন্তা করে মেলা উদযাপন কমিটির ২জন কো-চেয়ারম্যান স্ব-ইচ্ছায় পদত্যাগের কথা জানান সাংবাদিকদের। পদত্যাগকারীরা হলেন চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মিন্টু ও মাহাবুবুল আলম মাহাবুব।
অশ্লীল নাচ গান, জুঁয়ার আসর ও প্রচন্ড শব্দ দুষণে অতিষ্ঠ হয়ে মেলা বন্ধ করার দাবীতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহলের ব্যানারে প্রশাসনকে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল সহ বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষনা করার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গত ১৮ জানুয়ারী মেলার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও আয়োজক কমিটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গত বুধবার থেকে পুনরায় হস্ত কুঁটির মেলা পুনরায় শুরু করলে পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও সুশীল সমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারী এস.এস.সি পরীক্ষা শুরু। খেলার মাঠে মেলার নামে অশ্লীল গান বাজনা, নর্তকির নাচ ও জমজমাট জুঁয়ার আসরের মাইকের বিকট শব্দ দুষনের কারনে পরীক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার ভবিষ্যত নিয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়েছে অভিভাবকমহল।
বর্তমানে উখিয়ার রত্নাপালং ও হলদিয়াপালং ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রতিরাতেই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেড়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে হলদিয়ার মৌলভী পাড়া ফরিদ আলমের বাড়িতে ডাকাতি সংঘঠিত হয়েছে। এছাড়াও একই গ্রামের ছানাউল উদ্দিনের বাড়ী থেকে মটর সাইকেল চুরি হয়। দিনের বেলায় কোটবাজার ষ্টেশনে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ভালুকিয়া হাতির ঘোনা সড়কে চুরিকাঘাত করে টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মিন্টু বলেন, এমন কোন রাত নেই হাঁস-মুরগী থেকে শুরু করে গরু-ছাগল চুরি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধু মেলায় লটারীর নামে জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য এসব চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে অবৈধ জুঁয়া খেলার আসর ও লটারী নামে সাধরণ নিরহ জনগণের কাছ থেকে পুরস্কারের নামে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলেও আইনশৃংখলা বাহিনী সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক ভাবে নিরবভূমিকা পালন করছে এমন অভিযোগ সচেতন মহলের। তবে প্রতি রাতেই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে শক্তিশালী জুঁয়াড়ির সিন্ডিকেট প্রকাশ্য মাইক যোগে জুঁয়া, ব্রাইটি-শো ও নর্তকির নাচ গান এবং অশ্লীল বেহায়পনা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
নাগরিক সমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, আর কয়েকদিন পর এস.এস.সি পরীক্ষা। পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বিকাল ৪টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত একটানা ব্রাইটি-শো, নর্তকির নাচ, বি-চিত্র অনুষ্ঠানে অশ্লীল নৃত্য ও অশ্লীল বেহায়াপনা জমজমাট আসর চলে থাকে। ১০/১৫টি মাইকের প্রচন্ড শব্দ ও গানের আওয়াজে পুরো এলাকাবাসীর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। মেলার গান বাজনার ও নর্তকির নৃত্যের আওয়াজে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার লেখা পড়া মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছে। প্রতিদিন ২০টির অধিক রিক্সা, টমটম, সিএনজি ও পিকআপ যোগে মাইক বেঁধে লাকী কুপন বিক্রি করছে গ্রামগঞ্জে। চলছে চাকা উঠছে টাকা আইয়ো-মাইল্লেপাইবা, আইয়ো বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষকে ফুতুর করে ফেলছে।
মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হুদা মেলার নামে অশ্লীল নাচ-গানের কথা অস্বীকার করে বলেন, দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য আমরা বিভিন্ন বিনোদন মূলক সার্কাস, খেলাধূলা আয়োজন করেছি। এখানে অশ্লীল কোন কিছু হচ্ছেনা।
স্থানীয় সচেতন মহল মেলার প্যান্ডেলের পার্শ্বস্থ থেকে মেলায় আগত নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশায় লিপ্ত হওয়া আপত্তিকর চিহ্নিত পরিহিত বস্ত্র সামগ্রী উদ্ধার করেছে। যাহা নিয়ে স্থানীয় সুশীল সমাজের মাঝে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈনুদ্দিন বলেন, কোটবাজারের কুঠির শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় অবৈধ কর্মকান্ডের ব্যাপারে আমি এখনো নিশ্চিত নয়, তবে এ ধরনের কোন কার্যকলাপ চলতে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।