উখিয়ায় কোমলমতি শিশুদের মান সম্পন্ন শিক্ষা ও মেধা বিকাশের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের মাথা বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কে.জি স্কুলের শিক্ষার্থীরা বই প্রকাশনীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিম্নমানের বই শিক্ষার্থীদের হাতে জোরপূর্বক তুলে দিচ্ছে এমন অভিযোগ সচেতন অভিভাবকের।
খোজখবর নিয়ে জানা যায়, উখিয়া উপজেলার সদর স্টেশন, কোটবাজার, রুমখাঁ বাজার, মরিচ্যা, থাইংখালী, পালংখালী, রাজাপালং, সোনারপাড়া, নিদানিয়া, ইনানী, গয়ালমারা, মনখালী, বটতলী, ভালুকিয়া, পাতাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় ২৩টির অধিক কে.জি এন্ড কিন্ডারগার্ডেন স্কুল রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার। আর এসব কে.জি স্কুলের শিক্ষকরা তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার কুমানসে বিভিন্ন গ্র“পে বিভত্ত হয়ে ৩টি এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করে। আবার এসব এসোসিয়েশনের বৃত্তি পরীক্ষার নামেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে মোটা অংকের টাকা।
গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, নতুন শিক্ষা বর্ষ শুরু হওয়ার সাথে সাথে কে.জি স্কুলের শিক্ষকরা তাদের কোমলমতি শিশুদের মাথা বিক্রির প্রতিযোগীতায় নামে। অখ্যাত প্রকাশনীর সাথে গোপন আতাঁত করে তাদের ছাপানো নিম্নমানের বই শিক্ষার্থীদেরকে পড়তে বাধ্য করা হয়। বিনিময়ে প্রতি ছাত্রের মাথা পিছু ২শ টাকা হারে হাতিয়ে নিচ্ছে মহান পেশায় নিয়োজিত সেই শিক্ষকরা। ২৩টি কে.জি স্কুলের শিক্ষকরা চলতি ২০১৬ সালের নতুন শিক্ষা বর্ষে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা বই প্রকাশনী কোম্পানীর কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে।
নির্ভর যোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের রহমানিয়া লাইব্রেরী ও বিদ্যাসাগর লাইব্রেরী নামক দু’টি লাইব্রেরী হচ্ছে জেলার শিক্ষার্থীদের মাথা বিক্রির অন্যতম সিন্ডিকেট। ঢাকা বই প্রকাশীর কোম্পানীর সাথে যোগসাজশ করে ওই দু’টি লাইব্রেরী ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই উখিয়ার ২৩টি কে.জি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষকে লক্ষ লক্ষ টাকা বিতরণ করে। শিক্ষার্থীদের মাথা বিক্রি করে টাকা আদায়কারীর কে.জি স্কুলের অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক জোরপূর্বক ভাবে তাদের মনোনিত ও চিহ্নিত বই ক্রয় করতে বাধ্য করা হয়। অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, উখিয়ার ফ্রেন্ডস লাইব্রেরী সকল কে.জি স্কুলের সাথে চুক্তিবদ্দ হয়ে অখ্যাত প্রকাশনী কোম্পানীর নিম্নমানের বই উচ্চ দামে ক্রয়-বিক্রির এজেন্ট হিসাবে দায়িত্বপালন করছে। মাস্টার মুছা প্রতিটি কে.জি স্কুলে মোটা অংকের টাকা বিতরণ করায় সকল ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবক ফ্রেন্ডস লাইব্রেরী নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে। ঢাকা বাংলা বাজারের বিদ্যাধারা প্রকাশনী, জ্ঞানধারা প্রকাশনী, আফনান প্রকাশনী, আইডিয়াল প্রকাশনী, মেট্রো প্রকাশনী ও বিদ্যা গুরু প্রকাশনী নামক বেশ কয়েকটি প্রকাশনী ২০ থেকে ৩০ টাকার মূলের বই ২শ থেকে ২শ ৫০ টাকা পর্যন্ত মূল্য হাকিঁয়েছে। সচেতন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, তাদের কোমলমতি ছেলেদেরকে মান সম্পন্ন লেখা পড়া ও মেধা বিকাশের জন্য কে.জি স্কুলে ভর্তি করা হলেও শিক্ষমন্ডলীরা শিক্ষার্থীদের মাথা বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিম্নমানের বই পড়তে ও ক্রয়-করতে বাধ্য করা খুবই দু:খজনক। ক্ষুদ্ধ অভিভাবকগণ জানান, ৩০ টাকা মূল্যের একটি বই ১শ ৭০ টাকা থেকে ২শ টাকায় ক্রয়-করতে হচ্ছে। কারণ শিক্ষকরা ওই কোম্পানীর নিকট হতে লক্ষ লক্ষ টাকা আগেই হাতিয়ে নিয়েছে। সে টাকা অভিভাবকগণের নিকট হতে কৌশলে আদায় করা হয়। এমনকি পালং পাবলিক কে.জি স্কুল নামক একটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নিজেই শিক্ষার্থীদেরকে বই বিক্রি করে থাকে। শুধু তাই নয় মাওলানা রাহামত উল্লাহ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাথা বিক্রি করে ফাঁয়দা লুটার জন্য রুমখাঁ বাজার ও কোটবাজার নামক স্থানে পাশা-পাশি একই নাম দিয়ে পালং পাবলিক কে.জি স্কুল খুলে বসেছে।
সুশীল সমাজের মত, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাথা বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে কে.জি স্কুলের শিক্ষকরা নিম্নমানের বই অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে ক্রয়-করতে বাধ্য করা বিষয়টি খুবই হতাশ ও উদ্বেগ জনক। এধরনের অনৈতিক ও গর্হিত কর্মকান্ড করায় পুরোশিক্ষক সমাজকে কলংকিত করেছে এরা।