গাজীপুরের জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের খুনের প্রায় এক যুগ পেরিয়ে গেছে। এখনো এ আওয়ামী লীগ নেতার হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
১১ বছর আগে এ মামলায় দেওয়া বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এখন হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিলের শুনানি চলছে।
তবে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি আশা করছেন চলতি মাসে হাইকোর্টে বিচার সম্পন্ন হতে পারে।
বিচার প্রক্রিয়া
২০০৪ সালের ৭ মে সন্ত্রাসীরা গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করে।
এ হত্যকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল বিচারিক আদালত বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। দণ্ড প্রাপ্তদের মধ্যে দুই জন মারা গেছেন, ১৭ জন কারাগারে, বাকি ৯ জন পলাতক রয়েছেন।
পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল আসে।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি থেকে এ মামলায় হাইকোর্টে আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মামলার শুনানি গ্রহণ করছেন। হাইকোর্টে এ মাসে শুনানি শেষ হতে পারে।
এ মামলায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রোনা নাহরীন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মনজু নাজনিন।
আসামিদের পক্ষে শুনানি করছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ কয়েকজন আইনজীবী।
রোনা নাহরীন জানান, ২১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ কার্যদিবস প্রথামিক শুনানি হয়েছে। রোববার থেকে চূড়ান্ত শুনানি শুরু হবে। আশা করছি চলতি মাসেই শুনানি শেষে হতে পারে।
এক নজরে আহসান উল্লাহ মাস্টার
১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর গাজীপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ মাস্টার । ১৯৭০ সালে ডিগ্রি পাস করার পর তিনি টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
এর আগে ৬ দফা, ১১ দফাসহ বাঙালির মুক্তির আন্দোলনেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি।
১৯৮৩ ও ১৯৮৮ সালে দুইবার পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এছাড়াও জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আহসান উল্লাহ মাস্টার গাজীপুর-২ আসন থেকে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালের ৭ মে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত হন আহসানউল্লাহ মাস্টার। এ ঘটনার পরদিন তার ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ২০০৪ সালের ১০ জুলাই পুলিশ অভিযোগপত্র দায়ের করে। ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল ২২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। খালাস দেন দুই আসামিকে।