বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্র এলাকায় মাছধরার ট্রলার থেকে জব্দ হল ১০ লাখ পিস নিষিদ্ধ ইয়াবা। আর বৃহৎ এই চালানটির সাথে যুক্ত রয়েছেন কক্সবাজারেরই একজন গডফাদার। র্যাবের দাবি, এই ইয়াবা পাচার চক্রের গডফাদার হিসেবে রয়েছেন কক্সবাজার শহরের কলাতলীর মৃত জাফর আবেদীনের ছেলে জয়নাল আবেদীন (২৫)। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন ট্রলার মালিক মোহাম্মদ সৈয়দ আলম ও তার সহযোগী মো. রবিউল আলম।
এই চালান জব্দকালে ইয়াবা পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রথমে ৪ জন, পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর আরও ৪ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে একজন মিয়ানমারের নাগরিক ও ৭ জন কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা।
র্যাব সূত্রের দাবি, ধৃত এই চক্রটি সমুদ্রপথে ইয়াবা পাচারের শক্তিশালী চক্র। এরা দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা পাচারে জড়িত রয়েছেন।
চট্রগ্রামস্থ র্যাব-৭ এর সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) আমির উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম র্যাব-৭ এর গোয়েন্দা তথ্য ছিল সংঘবদ্ধ বেশ কয়েকটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় চালান মাছ ধরার ট্রলারে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। ওই চক্র এফবি ইমন নামের একটি মাছধরার ট্রলারে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালান নিয়ে মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রামের দিকে আসছে।
তিনি জানান, ওই তথ্যের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গর এলাকার গভীর সমুদ্রে অবস্থান করেন। ও্ই সময় এফবি ইমন-এফ,৯৬৪ নামের ফিশিং ট্রলারটিসহ ৪ জনকে আটক করা হয়। ওই সময় আটকদের মধ্যে আছেন কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার বড়ছড়া গ্রামের মৃত নাজির হোসেনের ছেলে মোঃ আব্দুস সালাম মাঝি (৫৫), মৃত রশিদ তালুকদারের ছেলে মোঃ শফিক (৩৫), আব্দুল করিমের ছেলে আব্দুর রহিম বার্মা (৩০) ও মিয়ানমারের সুলতান আহমেদের ছেলে মোহাম্মদ কামাল (৪২)।
লে. কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন জানান, ধৃত চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ট্রলারটির কোল্ড স্টোরের ভেতর রাখা ১০ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতরা র্যাবকে জানান, এই ইয়াবা চালানের ঘটনায় কক্সবাজারের একটি চক্র জড়িত। এদের দেয়া নাম ঠিকানা নিয়ে র্যাব-৭ এর কক্সবাজার কোম্পানির সহযোগিতায় কক্সবাজার শহরের কলাতলী মোড় থেকে আরও তিনজনকে আটক করা হয়।
কক্সবাজার শহর থেকে আটককৃতরা হলেন কলাতলীর মৃত জাফর আবেদীনের ছেলে জয়নাল আবেদীন (২৫), হিমছড়ির আবদুল গণির ছেলে সৈয়দ আলম (৩০) ও শহরের মোহাজের পাড়ার আবদুল মালেকের ছেলে রবিউল আলম (২৬)।
একই সময়ে ওই চক্রের আরেক সহযোগি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পুকুরিয়া এলাকার কামাল উদ্দিনের ছেলে মো. ইসলাম মামুনকে (২৭) চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাট এলাকার আজমির হোটেলের সামনে থেকে আটক করে র্যাব।
র্যাব সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই উদ্ধার হওয়া ইয়াবার মালিক জয়নাল আবেদীন (২৫), তার মাদক ব্যবসার অংশীদার এবং বোটের মালিক মোঃ সৈয়দ আলম (৩০) ও সহযোগী মোঃ রবিউল আলম (২৬)। তারা জয়নাল আবেদীনের মামাতো ভাই মোঃ মফিজের (৩০) (পিতা-মোঃ ফজল হক, সাং-দক্ষিণ কলাতলী) সহযোগিতায় ইতিপূর্বেও বহুবার মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালান নিয়ে এসেছেন।
ধৃতরা র্যাবকে জানান, ডিসেম্বর মাসের শেষ ১০ দিনে তারা দুই চালানে ১০ লাখ এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবার চালান চট্টগ্রামে এনেছে। মোঃ ইসলাম মামুন চট্টগ্রামে অবস্থান করে তা সরবরাহ করেন।
লে: কর্ণেল মিফতাহ আরো জানান, জয়নাল আবেদিন তার মামাতো ভাই মিয়ানমার নাগরিক মফিজের মাধ্যমে এদেশে ইয়াবা নিয়ে আসে। আর সৈয়দ আলম মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ইয়াবা পাচারে ভাড়া দেয় নিজের ট্রলার। দু’জনই এ কাজ করে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছে। তারা আরো জানিয়েছে, গত ডিসেম্বর মাসের ২১ থেকে ৩১ তারিখ এই দশ দিনে দু’টো চালানের মাধ্যমে তারা সাড়ে ১৪ লাখ ইয়াবা নিয়ে আসে চট্টগ্রামে, পাচার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
র্যাব সূত্র মতে, জয়নাল আবেদীন ও মোঃ মফিজের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ইয়াবা ও মাদক পাচারের মামলা রয়েছে।
প্রসঙ্গত: গত ২ ডিসেম্বর র্যাব–৭ কে দ্রুতগতিসম্পন্ন নৌ যান ‘সার্চ এন্ড রেসকিউ বোট’ দেওয়া হয়েছিল। বোটটি দিয়ে এটি তাদের প্রথম অভিযান, আর তাতেই সাফল্য এলো। আগে দেখা যেত এরকম খবর পেয়ে নৌযান ভাড়া করে যেতে দেরি হয়ে হতো। আর অভিযান নিষ্ফল হয়ে যেতো। এ চালানটি উদ্ধারের পেছনে নিজেদের পাশাপাশি র্যাব কর্মকর্তাগণ বোটটিরও গুণ গাইলেন।