তারিশি জৈন
ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক :
ঢাকার গুলশানে জঙ্গী হামলায় নিহত একমাত্র ভারতীয়, ১৯ বছরের তারিশি জৈনের অন্ত্যেষ্টি আজ দিল্লির কাছে গুরগাঁওতে সম্পন্ন হয়েছে।
এদিন দুপুরেই ঢাকা থেকে তার দেহ দিল্লি বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয়, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তা গ্রহণ করেন। সরকারের মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদরাও তারিশিকে শেষ বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন, তবে শোকার্ত পরিবারের অনুরোধে মিডিয়া শেষকৃত্য অনুষ্ঠান থেকে দূরেই ছিল।
নিহত তারিশিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে আজ বিদায় জানিয়েছেন, ভারত তার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
ঢাকা থেকে জেট এয়ারওয়েজের যে বিমান আজ বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ যখন দিল্লিতে এসে পৌঁছয়, তারিশি জৈনের বাবা-মা সেটিতে চেপেই নিয়ে আসেন মেয়ের মরদেহ।
তারিশিকে শেষ বিদায় জানাতে এয়ারপোর্ট ছিল লোকে লোকারণ্য – সঙ্গে মিডিয়ার অজস্র ওবি ভ্যান ও অসংখ্য সাংবাদিক। এমন কী রাষ্ট্রীয় চ্যানেল দূরদর্শনে তারিশির শেষ যাত্রার সরাসরি সম্প্রচারও করা হতে থাকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নিজে বিমানবন্দরে গিয়ে তারিশির কফিনটি গ্রহণ করেন। তবে মিডিয়ার এই বিপুল ভিড় দেখে তারিশির শোকসন্তপ্ত পরিবার কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতে থাকেন – সরকারকে তারা জানান তারিশির অন্ত্যেষ্টি যতটা সম্ভব নিভৃতিতে হোক, এটাই তাদের ইচ্ছা।
সেই ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে বেশির ভাগ মিডিয়াই গুরগাঁওতে তারিশির শেষকৃত্য অনুষ্ঠান কভার করা থেকে নিরস্ত থাকে। তারিশির পরিবারের পক্ষ থেকে একমাত্র তার সম্পর্কিত ভাই শিরিশ জৈন কথা বলেন।
এই ধরনের বোধশূন্য আচরণ – এগুলোর কথা আমরা সব সময়ই শুনছি বা পড়ছি, সারা পৃথিবীতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু তার পরেও এই বিপর্যয় যখন সরাসরি এসে আপনাকে বা আপনার পরিবারকে আঘাত হানে – তার ধাক্কাটা যে আসলে কত সাঙ্ঘাতিক তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
গুরগাঁওয়ের একটি কমিউনিটি সেন্টারে একটি বিকেলে তারিশির অন্ত্যেষ্টি অনুষ্ঠানে মূলত পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবরাই হাজির ছিলেন। সরকারের তরফে বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ও বিরোধী কংগ্রেস দলের নেতা গুলাম নবি আজাদ দিয়ে তারিশিকে শেষ বিদায় জানান।
এদিকে সকালে ঢাকা থেকে তারিশির দেহ রওনা করিয়ে দেওয়ার পর ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা বলেন, প্রধানমন্ত্রী হাসিনার আচরণ ভারতকে ছুঁয়ে গেছে।
মি শ্রীংলা বলেন, আমাদের মেয়ে তারিশিকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে বিমানবন্দর থেকে ফেরামাত্র আমি প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে কথা বলি। তিনি যে গোটা ঘটনায় গভীরভাবে বিচলিত বোধ করছেন সেটা আমাকে জানান, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁর শোক পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেন এবং বলেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইয়ের সঙ্কল্প অটুট থাকবে। সত্যি কথা বলতে জঙ্গী হামলায় নিহতদের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ব্যক্তিগতভাবে সম্মান জানিয়েছেন তাতে আমরা আপ্লুত।
তবে তারিশি জৈনের পরিবারের কাছে শোকের ধাক্কাটাই এখন এত বড় যে কোনও সান্ত্বনাই হয়তো কোনও অর্থ রাখে না। অন্ত্যেষ্টি অনুষ্ঠানের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারিশির বাবা-মাকে এদিন কিছুতেই ধরে রাখা যাচ্ছিল না – কিছুতেই থামছিল না তাদের অঝোর কান্না।
মাত্র উনিশ বছরেই নির্মমভাবে ঝরে গেল একটি তরতাজা প্রাণ – একজন প্রাণোচ্ছ্বল ও কৃতী ছাত্রী, দারুণ ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় – যার নাম তারিশি জৈন।