1. arif.arman@gmail.com : Daily Coxsbazar : Daily Coxsbazar
  2. dailycoxsbazar@gmail.com : ডেইলি কক্সবাজার :
  3. litonsaikat@gmail.com : ডেইলি কক্সবাজার :
  4. shakil.cox@gmail.com : ডেইলি কক্সবাজার :
  5. info@dailycoxsbazar.com : ডেইলি কক্সবাজার : Daily ডেইলি কক্সবাজার
গৃহকর্মীর প্রতি ধারণায় আসুক পরিবর্তন - Daily Cox's Bazar News
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:১১ পূর্বাহ্ন
নোটিশ ::
ডেইলি কক্সবাজারে আপনার স্বাগতম। প্রতি মূহুর্তের খবর পেতে আমাদের সাথে থাকুন।
সংবাদ শিরোনাম ::
কট্টরপন্থী ইসলামী দল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ: এসএডিএফ কক্সবাজারের আট তরুণ তরুণীকে ‘অদম্য তারূণ্য’ সম্মাননা জানাবে ঢাকাস্থ কক্সবাজার সমিতি Job opportunity বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়না, নাকি স্বপ্নের দেশ! আল-আকসা মসজিদে ইহুদিদের প্রার্থনা বন্ধের আহ্বান আরব লীগের পেকুয়ায় পুলিশের অভিযানে ৮০ হাজার টাকার জাল নোটসহ গ্রেফতার-১ পেকুয়ায় অস্ত্র নিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল : অস্ত্রসহ আটক শীর্ষ সন্ত্রাসী লিটন টেকনাফে একটি পোপা মাছের দাম হাঁকাচ্ছেন সাড়ে ৭ লাখ টাকা ! কক্সবাজারের টেকনাফে র‍্যাবের অভিযানে ইয়াবাসহ আটক-১ নিউ ইয়র্কে মেয়র কার্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ নিয়ে কনসাল জেনারেলের আলোচনা

গৃহকর্মীর প্রতি ধারণায় আসুক পরিবর্তন

ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৬
  • ৩৬৪ বার পড়া হয়েছে

Tanjina Yasmin_editedতানজীনা ইয়াসমিন।। সদ্য কলেজ পেরিয়েছি। বাসায় ফরমাস খাটার মতো কেউ নেই। রান্না আর অন্যসব কাজের জন্য আসা মাঝবয়সী গৃহকর্মী সরকারি ডুপ্লেক্স বাসার উপর-নিচ ছোটাছুটি করে কুলোতে পারে না। তখনও বাসায় গৃহকর্মীর এত আকাল পড়েনি। আমার মেঝ ফুপুর বাসার ড্রাইভার তার ছোট ভাইকে দেবে এই অপেক্ষায় আছি। কী এক অসুখে পড়ে বেশ লম্বা সময় অপেক্ষা করিয়ে সে এলো।

বাচ্চা একটা ছেলে , ৮-৯ বছর হবে। আমরা আঁতকে উঠলাম। এই বাচ্চা কী কাজ করবে? ছেলের ভাই ‘না-না’ করে উঠলো। বাড়িতে অভাব। মা খাটো। তাই ভাই ছোটখাটো। আসলে ছেলে ছোট না, কাজে পাকা! ইত্যাদি ইত্যাদি।
গত্যন্তর নেই দেখে রেখে দেওয়া হলো। আমরা নিশ্চিত এই ছেলে রাতেই বাড়ি যাব বলে কান্নাকাটি করে বাড়ি মাথায় তুলবে। আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে এক সপ্তাহর মাথায় সেই ছেলে দেখি গান গাইতে গাইতে আমাদের বাড়ির একতলা দোতলা দৌড়ে কাজ করে বেড়াচ্ছে। বাসার সুইচ বোর্ড, উঁচু বেসিন কিছুই নাগাল পায় না, তাতে কী? পিঁড়ি নিয়ে সারাক্ষণ ছুটে বেড়ায়।
আমি একদিন ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই তোমার বাড়ির জন্য খারাপ লাগে না? আসার সময় কান্নাকাটি করোনি?’
– খারাপ লাগছে , কিন্তু কান্দি নাই।
– কেন?
– আমার কান্দনে কার কিতা হইবো? হুদা আমার নিজেরই চোখের পানি মাটিত ফরবো।
একটা শিশুর এই কঠিন দর্শনে আমি হতভম্ব।
ছেলেটি তার সততা, নিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা দিয়ে খুব সহজে আমাদের ঘরের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে গেল। ধীরে ধীরে কৈশোর পেরিয়ে গেলে তার উন্নত ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাকে আমার ছোট ফুপুর ক্লিনিকে কাজে দেওয়া হলো। প্রথম সে বাসার বাইরে থাকতে খেতে অভ্যস্ত হতে লাগলো। কিন্তু এই জীবন তার জন্য উপযুক্ত ছিল না। হোটেলের খাবার তাকে কঠিন জন্ডিসে ভুগিয়ে লিভার নষ্ট করে মৃত্যুর কোলে ঢেলে দিয়েছিল।
ছেলেটার নাম ছিল নাসির। বাড়ি ছিল নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আমার বড় ছেলে শিশুবেলায় জানতো তার দুজন মামা, একজন আমার একমাত্র ভাই, অন্যজন নাসির মামা।
জাপানে চলে আসার পর ঢাকার আমার নিজের বাড়ির গৃহকর্মী আর কোথাও কাজ করতে পারেনি। আমার বাসার মতো স্বাধীনতা আর ভালবাসা পায়নি বলে। আমাকে মহানুভব ভাবার কোনও কারণ নেই। কারণ, আমার ভালবাসার পেছনে অনেক বড় স্বার্থ ছিল। আমি কর্মজীবী মা, আমার দুই শিশুপুত্র এবং শ্বাশুড়ি তাদের হাতের ওপর বলা যায়। আমার অনুপস্থিতিতে তাদের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। কাজেই, ভালবাসাটা অবশ্যই দুইতরফা হতেই হবে, তা-ই ছিল।
জাপানে এসে আমি অনেক খুঁজে একজন নারী অধ্যাপকের কাছে পিএইচডির জন্য গিয়েছিলাম। কারণ আমি যেই বিষয় নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম সেটা ছিল বাংলাদেশে ডোমেস্টিক এইডদের সমস্যা। ভাগ্য মন্দ কিংবা আমার নিষ্ঠার অভাব ছিল, আমি বিষয়টা নিয়ে এগুতে পারিনি।

কারণও ছিল, আমাদের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড মূলত পদার্থবিদ্যা এবং অ্যাডভান্স টেকনোলজি। সেসব বাদ দিয়ে শুধু আমার এমবিএ’র ডাবল মেজরের একটা ছিল হিউম্যান রিসোর্স। এর ওপর ভরসা করে একেবারে অজানা একটা বিষয়ে এগুতে অধ্যাপক হয়তো খুব আস্থা পাননি।

খুব বেশি দূর নয়, যে যার ঘরের নানি-দাদীর ঝাঁপি খুলেই বের করতে পারবেন। গৃহকর্মী মেরে লাশ ফেলে দেওয়া খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। আঁতকে ওঠার কিছুই নেই।

আমার প্রস্তাবনাটা ছিল, আমাদের দেশে যেহেতু চাইল্ড কেয়ার হোমের ধারণা এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি, নির্ভরযোগ্যতারও প্রশ্ন আছে, তাই কর্মজীবী মায়েদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। দেশে একার রোজগারে সংসার চালানো খুব কঠিন এবং একটা মেয়েকে সুশিক্ষিত করতে পরিবারের বা সরকারের খরচ ছেলের চেয়ে কোনও অংশেই কম হয় না। কাজেই একজন মেয়েকে অবশ্যই তার জ্ঞান শুধু শিশুপালন আর সংসার পালনে ব্যয় করা একটা বিরাট অপচয়! কিন্তু বাইরে পা দিতেই সঙ্গত কারণে হাজারো চিন্তা গ্রাস করে তাকে ঘরে রেখে যাওয়া বাচ্চাটাকে নিয়ে। এতে কর্মক্ষেত্রে কর্ম সম্পাদনাও ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হয়।
অপরদিকে অনেক বছর ধরেই নিত্য অভিযোগ আমাদের দেশের ‘পোশাক শিল্প’ গৃহভৃত্যের সংকট তৈরি করছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? পোশাক শিল্পের বিশ্বের সর্বনিম্ন মজুরি যা দিয়ে বাড়ি ভাড়া, খাই-খরচা মিটিয়ে গ্রামের বাড়িতে বা নিজের পরিবারকে অর্থ যোগান দিতে ত্রাহী অবস্থা, এ ছাড়াও আছে মেয়েদের চূড়ান্ত অনিরাপত্তা, মৃত্যঝুঁকি, ভর্তুকি না পাওয়া, বেতন, বোনাস না দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি সমস্যার অন্ত নেই। এরপরও কেন তারা গৃহকর্মী হতে চায় না? মূল কারণ- ১। ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই ২। বন্দি জীবন ৩। শারীরিক নির্যাতন ৪। যৌন নিপীড়ন। ৫। তীব্র শ্রেণিবিভাজন এবং অসন্মান।
কাজেই আমি প্রস্তাব করেছিলাম, একইসঙ্গে নিরাপদ নির্ভরযোগ্য চাইল্ড কেয়ার হোম এবং ডোমেস্টিক এইড সরবরাহ কেন্দ্রের- যেখানে গৃহকর্মী অবশ্যই পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং নির্ভরশীল রেফেরেন্স এবং যাবতীয় যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে সদস্য হবে।
ঘণ্টাভিত্তিক, দিন ভিত্তিক, মাস ভিত্তিক বিভিন্ন প্যাকেজে গৃহকর্মী উক্ত সংস্থা থেকেই নিয়োগ পাবে বাড়িতে এবং দুই পক্ষের চুক্তিপত্রের মাধ্যমেই এবং অবশ্যই গৃহকর্মী কারও বাড়িতে থাকবে না।

অসুস্থ রোগীর রাত্রিকালীন সেবা কিংবা শিশুর রাত্রিকালীন সেবার প্রয়োজনে সেই সময়ের জন্য ভিন্ন গৃহকর্মী নিয়োগ নিতে হবে।
আজকে হঠাৎ কেন কী জন্যে সাড়ে ৫ বছর আগের এক অসফল প্রস্তাবনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো তার কারণ যারা পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছুটা হালনাগাদ খবর রাখেন তারা বুঝতে পারছেন।
একের পর এক নিন্মবিত্ত শিশু নির্যাতনের পাশাপাশি আরেকটি দগদগে পুরাতন ক্ষত আবারো উন্মোচিত হলো জাতীয় দলের ক্রিকেটার শাহদাতের বাড়ির গৃহকর্মী হ্যাপি নামের শিশুটির জন্যে। যদিও এই পাপ থেকে আমাদের দেশে কোনও দায়িত্বশীল পেশার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মিডিয়াকর্মী কেউই বাদ নেই।
তবুও আমি এখন লিখছি, কারণ, এখনও বাক স্বাধীনতা আছে। সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমের স্বাধীনতা এবং আধুনিকায়নের জন্য এই পাপ এখন সবাই জানতে পারছে।

পত্রিকার বীভৎস নির্যাতনের ছবি দেখেও পেটের জ্বালায় জঠর জ্বালা ছাপিয়ে বাবা মা হ্যাপির মতো শিশুকে মানুষরূপী পশুদের খাঁচায় ঠেলে পাঠিয়েই যাবে।

নইলে এই বর্বরতা আরও কত কদর্য এবং রীতিসিদ্ধ ছিল তা আগের দিনের ইতিহাসবিদদের লেখা হাতড়ালেই বেড়িয়ে আসবে। খুব বেশি দূর নয়, যে যার ঘরের নানি-দাদীর ঝাঁপি খুলেই বের করতে পারবেন। গৃহকর্মী মেরে লাশ ফেলে দেওয়া খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। আঁতকে ওঠার কিছুই নেই।
সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের অয়োময়, লীলাবতী উপন্যাসে উঠে এসেছে বীভৎস সেসব ইতিহাস।
আমি নিজেই জানি কতটা সত্য ছিল স্যারের লেখা সেইসব ইতিহাস আমার নিজের পারিবারিক জমিদারীর ইতিহাস থেকে পাওয়া আভাসে।
‘কী যুগ পড়েছে’ ‘ ঘোর কলিকাল’ হচ্ছে নিজের যুগের, কালের এবং নিজেদেরই গোপন পাপকে ভুলে থাকবার এবং ধামাচাপা দেওয়ার একটা হাস্যকর অপ্রাপ্তমনস্ক প্রয়াস। কোনও ইতিহাসই মুছে যায় না।
কাজেই, এ অপরাধ বন্ধ হবে না। সমাজের নানা অসঙ্গতির সাথে আরও উন্মোচিত হবে এবং বহুব্রীহির আসাদুজ্জামান নূরের চরিত্র যে আপ্তবাক্য শিখিয়েছিলেন, রাগ দমনের সবচেয়ে ভাল উপায় দুর্বলের ওপর ঝেড়ে দেওয়া, এই সত্য অতি নিষ্ঠুর সত্য।
সুতরাং, আমি তীব্রভাবেই চাই নিম্নবিত্ত শিশুদের জন্য পড়াশোনার ভাতা এবং পারিবারিক উপার্জন বৃদ্ধির ব্যবস্থা এমন হোক যে কোনও বাবা-মা অভাবের তাড়নায় তার কোল পেরুনো বাচ্চাটাকে এমন মানসিক বিকারগ্রস্ত জ্ঞানপাপীদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য না হোক। শিশুশ্রম আইন করে বন্ধ হোক। আইনের যথাযথ প্রয়োগ হোক এবং সেই সঙ্গে গৃহকর্মী সংক্রান্ত ধারণাতেও আসুক পরিবর্তন।
দাসপ্রথা নতুন মোড়কে নয়, একেবারেই বন্ধ হোক। গৃহসেবা দিতে যারা আসবে তারা অন্যান্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীর মতই আসবে।
নইলে যুগ পেরিয়ে যাবে, শিশুশ্রম চলতেই থাকবে। ঘরে, দোকান ঘরের পেছনে রাজন কিংবা গ্যারেজে কাজ করা রাকীবদের প্রতি বর্বরতাও বন্ধ হবে না। তেমনি বন্ধ হবে না গৃহকর্মী সংকটে মেয়েদের মেধার অপচয় অপরদিকে পোশাক শিল্পে মানবেতর ভাতা ও অব্যবস্থা।
পত্রিকার বীভৎস নির্যাতনের ছবি দেখেও পেটের জ্বালায় জঠর জ্বালা ছাপিয়ে বাবা মা হ্যাপির মতো শিশুকে মানুষরূপী পশুদের খাঁচায় ঠেলে পাঠিয়েই যাবে।
শিশুটিও যাবার জায়গা নেই বলে বিনাবাক্যে নিয়তির বিধান মেনে কাজ করতে আসবে। কারণ, সে জানে , ‘আমার কান্দনে কার কিতা হইবো? হুদা আমার নিজেরই চোখের পানি মাটিত ফরবো।’

লেখক: কলামিস্ট; সাবেক রিসার্চ ফেলো, কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়; বিভাগীয়প্রধান, বিজনেস প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্ট, স্মার্ট সার্ভিস টেকনোলজিসকো লিমিটেড, ফুকুওকা, জাপান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2020 Dailycoxsbazar
Theme Customized BY Media Text Communications