বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ আরও প্রকাশ্যে এসেছে। ক্ষোভ প্রশমন করতে জোটের বৈঠকের দুদিন পর গতকাল বুধবার এক আলোচনাসভায় বিএনপি নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা করেছেন জোট নেতারা। জোটের প্রভাবশালী নেতা কর্নেল (অব) অলি আহমেদ ২০ দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের দাবিও তুললেন। বিএনপি নেতারাও দলের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে মনে করেন। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আপস করে নির্বাচনে যাওয়ার অভিযোগও করা হয়।
গতকাল প্রেসক্লাবে এলডিপি আয়োজিত ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনাসভায় বক্তারা জোট নেতৃত্বের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। বিএনপির এমপিদের শপথগ্রহণ নিয়ে দল ও জোটের ভেতরে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা এবার সামনে আনলেন অলি আহমেদসহ কয়েক নেতা।
এলডিপি সভাপতি অলি আহমেদ বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, হয় আপনারা নেতৃত্ব দিন, নইলে আমাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করুন। খালেদা জিয়ার পক্ষে জেলে থেকে আমাদের নির্দেশ নেওয়া সম্ভব নয়। তারেক রহমানের পক্ষে লন্ডন থেকে
সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকা সম্ভব নয়। সুতরাং দেশের এই ক্রান্তিকালে আমাদেরই সেই দায়িত্ব নিতে হবে এবং আমি সেই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।
বিএনপি জোটকে শক্তিশালী করতে নিজের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে কর্নেল অলি বলেন, বিএনপি নেতাদের প্রতি অনুরোধ, সবাই এক জায়গায় একত্রিত হোন।
আমাদের হাতকে শক্তিশালী করেন। না হলে আপনাদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের বলুন, আমরা সেটা করতে রাজি আছি। আপনারা নতুনভাবে এটার নামকরণ করেন। বিএনপি সংসদে গিয়ে সরকারের বৈধতা দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি এ সরকারকে বৈধতা দিয়েছে, এটাই হলো বাস্তবতা।
তার অভিযোগ, জোট ও ঐক্যফ্রন্টের কোনো কোনো নেতা ২ কোটি
টাকা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিএনপি ও ২০ দলকে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে রাখার দায়িত্ব পালন করেন।
সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এ জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াত যদি সত্যিকার অর্থে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়, তা হলে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার কারণে তাদের পিতারা যে ভুল করেছেÑ সে জন্য জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে। খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভুল করছেন মন্তব্য করেন ডা. জাফরুল্লাহ।
এর আগে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মিয়া মোহাম্মদ গোলাম পারোয়ার বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে মুক্তির আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের সঙ্গে ছিল এবং থাকবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, নির্বাচনের দিন সকালে আমাদের এক নেতা কীভাবে বললেন ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে?’ কীভাবে বললেন, ‘সংসদে অংশগ্রহণ না করা আমাদের ভুল ছিল?’ এগুলো আমাদের আগে না বলে মাইকে কেন বললেন?
অলি আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ ও নিলুফার চৌধুরী মনি প্রমুখ।