উখিয়ার পার্শ্ববর্তী জনপদ ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্র“ উচ্চমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (৮ম শ্রেণি পর্যন্ত) দপ্তরী-কাম নৈশ প্রহরী কর্তৃক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, ছাত্রীর পরীক্ষার খাতা চুরি করে পুড়িয়ে ফেলা সহ ওই ছাত্রীকে লেলিয়ে দিয়ে শিক্ষককে নাজেহাল করার ঘটনায় স্থানীয় অভিভাবকদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা।
রবিবার উত্তেজিত জনতা ও অভিভাবক মহল অভিযুক্ত নৈশ প্রহরীকে চাকুরিচ্যুত করার দাবি জানিয়ে গ্রামবাসী বিক্ষোভ করেছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনা নিয়ে অভিভাবক মহল চেয়ারম্যান, বান্দরবান জেলা পরিষদ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছে।
জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্র“ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী হোছনে আরা বেগম, রোল নং- ২৯ ও তার বোন ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রুনা আক্তার তানিয়া, রোল নং- ৩২ বিজ্ঞান পরীক্ষা দেওয়ার সময় স্কুলের সহকারি শিক্ষক মোঃ শাহজাহান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সহ হাতে নাতে আটক করে। পরে ওই ছাত্রীর জবানবন্দি অনুযায়ী স্কুলের দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী মোস্তাফা কামাল ওইসব প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেছে দাবি করে ছাত্রীর অভিভাবক লিখিতভাবে স্বাকারোক্তি প্রদান করেন। সহকারি শিক্ষক শাহজাহান জানান, এ ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানালেও তিনি অভিযুক্ত নৈশ প্রহরীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। যার ফলে ওই নৈশ প্রহরী প্রভাবিত হয়ে অভিযুক্ত ছাত্রী দিয়ে তাকে লাঞ্চিত করা হয়। এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শাহজাহানকে ছলে, বলে, কৌশলে অভিযুক্ত করার জন্য বিদ্যালয়ের একটি মহল গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এ ঘটনা নিয়ে গত শুক্রবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে এক সালিশী বৈঠকে আকষ্মিক মাষ্টার শাহজাহান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাকে প্রথমে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতাল ও পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিদ্যালয়ের একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা পরে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা এলাকায় আত্মপ্রকাশ করলে গ্রামবাসী ও অভিভাবক বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। গতকাল রবিবার বিকাল ৩টায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ তুমব্র“ বাজার প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনা মূল রহস্য উদঘাটন করে অভিযুক্ত নৈশ প্রহরী মোস্তাফা কামালকে চাকুরীচ্যুত ও শিক্ষককে লাঞ্চিত করার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রীকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা না হলে ছাত্র-ছাত্রীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাশ বর্জন করতে বাধ্য হবে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার হামিদুল হক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী কর্তৃক প্রশ্নপত্র ফাঁসের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সম্মত হয়েছেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু আহমেদ জানান, স্কুলের সুষ্ঠু পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংশা করার উদ্বেগ নেওয়া হয়েছে।