চকরিয়ায় রামপুর-বড়বিল কোদাইল্যা ভুমিহীন সমিতির ৫২০ পরিবারের দীর্ঘদিনের ভোগ দখলীয় প্রায় এক হাজার একর চিংড়িঘের ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বিস্তার করে একটি প্রভাবশালী মহল জবর দখলের পায়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দুটি পক্ষের সংর্ষের আশংকায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অভিযোগে জানা গেছে, রামপুর মৌজার প্রায় এক হাজার একর চিংড়ি প্রকল্প ১৯০৩ সাল হতে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে খাজনা পরিশোধ করে কোদাইল্লা ভুমিহীন সমিতি ভোগ দখলে রয়েছে। তৎকালীণ সময়ে বনবিভাগ ৫ বছরের জন্য মৎস বিভাগকে ঘেরটি ইজারা প্রদান করে। সেই সময়ে বিএনপি সরকারের কিছু প্রভাবশালীর নামে ঘেরটি বরাদ্ধ সরকার। এ লিজের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সাব জজ আদালতে কোদাইল্যা সমিতি মামলা দায়ের করে। পরে ১৯৮১ সালে অপর মামলা হিসেবে কক্সবাজার ২য় সাব জজ আদালতে মামলাটি স্থানান্তরিতও করা হয়। চট্টগ্রাম সাব জজ আদালত ১৯৭৯ তে উকিল কমিশন গঠন করে ওই কমিশন সমিতির পক্ষেই রায় ডিগ্রী প্রদান করে। ১৯৮৩ সালে কক্সবাজার ২য় সাব জজ আদালতে সমিতির পক্ষে চুড়ান্ত রায় ডিগ্রী প্রদান করে। ১৯৮২ সালে মেয়াদ মেষ হলেও মৎস বিভাগ নবায়ন না করে অবৈধভাবে ভোগ দখলে থেকে ১৯৮৫ সালে তৎকালীণ এরশাদ সরকারের ১১৩ নং সামরিক আইন এর আদেশবলে স্থায়ীভাবে মালিকানা লাভ করে। পরে ১৯৮৬ সালে কোর্টের রায় ডিগ্রী বাতিল করে ১০ বছরের জন্য ১০ একর করে অবৈধভাবে কিছু বঙ্গবন্ধুর আতœস্বীকৃত খুনি এবং মধ্যস্বত্বভোগিদের ঘেরটি লিজ দেয়া হয়।
সমিতির লোকজন জানান, এ ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ সালে ১৫ বছরের জন্য লিজও নবায়ন করা হয় এবং তা বিগত ২০১১ সালে মেয়াদ শেষ হয়। ইতিমধ্যে উচ্চ আদালত জিয়া এবং এরশাদ সরকারের সামরিক আইনের পঞ্চম এবং সপ্তম শংশোধনী বাতিল করে দেয়। ফলে ১১৩ নং সামরিক আইনের কোন কার্যকারিতাই এখন আর নেই। এ আইন বাতিল হওয়ার সাথে সাথেই মৎস অধিদপ্তরের মালিকানায় থাকা কোদাইল্যা সমিতির ঘেরটি লিজ দেয়া বা নেয়ার এবং নবায়নের কোন আইনগত ভিত্তিই সেই সময়ে ও বর্তমান নেই। এ নিয়ে বিগত ২০১২ সালে সমিতির পক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় কক্সবাজার সাব জজ আদালতে। পাশাপাশি ওই সময়ে মহামান্য রহাইকোর্টে রিট পিটিশন মামলা দায়ের করা হলে তা সমিতির পক্ষেই রুল নিশি জারি করেন। এদিকে মৎস বিভাগ আদালতের রায় অমান্য করে বিগত ২০১৪ সালে ফের নাবায়নের উদ্যোগ নিলে, নবায়ন প্রক্রিয়া বাতিলের জন্য আবারও হাইকোর্ট-এ রীট পিটিশন মামলা দায়ের করা হয় এব্ং হাইকোর্ট মৎস বিভাগের বিরুদ্ধে রুল নিশি জারি করেন। ফলে বর্তমানে ৬ মাসের জন্য গত ২২/০৯/২০১৫ সালে রুলের আলোকে মৎস অধিদপ্তরকে স্থগিতাদেশ প্রদান করেন হাইকোর্ট। যা এখনো বলবৎ রয়েছে। অন্যদিকে কোদাইল্যা সমিতি বিগত ১৯৮৩ সালে আদালতের রায় প্রাপ্ত হয়ে তা কার্যকরের জন্য কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে সিআর ৩৮/২০১৪ মামলা দায়ের করে।
অভিযোগ উঠছে, এসব তথ্য নির্ভর বিষয়টি জেনেও সরকারের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাবশালী কিছু লোক প্রতিনিয়ত কোদাইল্যা সমিতির ১০ হাজার মানুষের রুটি রুজির এই ঘেরটি জবর দখল করার জন্য অপচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সমিতির পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পত্র দেয়া হয়েছে। ওই অভিযোগে উপজেলার মাইজঘোনা গ্রামের দলিলুর রহমান, করাইয়াঘোনার মৌলভি মোনাফ, ঈদমনি গ্রামের নাজেম সওদাগর, বুড়িপুকুর গ্রামের জামাল উদ্দিন, চৌয়ারফাড়িঁর বদুরত, লামার চিরিঙ্গার শহিদুল ইসলাম ও মোঃ মুছা সহ সাতজনকে বিবাদ করা হয়েছে।
এদিকে অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১২ জানুয়ারী চকরিয়া থানার ওসির নির্দেশে থানার সেকেন্ড অফিসার রফিকুল ইসলাম দু পক্ষের মধ্যে শুনানী করেন। ওইসময় কোদাইল্যা সমিতির ডকুমেন্ট ব্যাথিত অপর পক্ষ চিংড়িঘেরের মালিকানার কাগজ পত্র দেখাতে পারেনি বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগী ৫২০ পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, চকরিয়ার কিছু প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে তাদের চিংড়িঘের দখলের জন্য হয়রানী করে যাচ্ছে। বর্তমানে ওই মহলের দায়ের করা মামলায় অনেক লোক পুলিশের ভয়ে বাড়ী ছাড়া হয়েছে।
জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.জহিরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি নিয়ে আইনী প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠভাবে তদন্ত পুর্বক দু পক্ষের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে আরো বৈঠকের ব্যবস্থা করা হবে।