চকরিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত ও পরিত্যক্ত বেশিরভাগ জায়গা বর্তমানে দখল হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের প্রভাব কিংবা স’ানীয়ভাবে দাপট দেখিয়ে কতিপয় প্রভাবশালী লোকজন দখলে নিচ্ছে পাউবো’র কোটি টাকা দামের জায়গা। পরে সুযোগ বুঝে এসব জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে স’ায়ী অবৈধ স’াপনা।
এতে করে উপজেলার চিরিঙ্গা, বদরখালী, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পশ্চিমবড় ভেওলা, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, বরইতলী, সাহাবিলের চোয়াঁরফাড়ি, ফাসিয়াখালীর দিগরপানখালী, বিএমচর ইউনিয়ন এবং চকরিয়া পৌরসভার ভাঙ্গারমুখ, এক নম্বর বাঁধ ও আশপাশ এলাকায় বেহাত হতে চলছে পাউবোর নিয়ন্ত্রণাধীণ বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পদ। দখলে নেওয়া বেশির ভাগ জায়গায় ইতোমধ্যে একাধিক বাণিজ্যিক মার্কেট, দোকানপাট ও বিপুল পরিমাণ জনবসতি গড়ে তোলা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অগোচরে বেশ কিছুদিন ধরে উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পালাকাটা মৌজার মাছঘাট এলাকায় পাউবো’র অধিগৃহণকৃত কোটি টাকা দামের জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে অবৈধ স’াপনা নির্মাণ করছেন প্রভাবশালীরা। অথচ ওই জায়গাটি কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড এলএ মামলা মূলে অধিগ্রহণ করেন। পরে ওই জায়গার অংশে জনস্বার্থে একটি স্লুইচ গেট স’াপন করেন।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমি শাখা সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের মাছঘাট এলাকায় জনস্বার্থে পানি চলাচল নিশ্চিত করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি স্লুইচ গেট নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এরই জের ধরে ১৯৯৪-৯৫ সালে ২৪ নম্বর এলএ মামলা মূলে পানি উন্নয়ন বোর্ড চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পালাকাটা মৌজার বিএস ৩৫২, ৩৫৩, ৩৫৪ ও ৩৯৯ আন্দর দাগের মালিক থেকে এক একর জায়গা অধিগ্রহণ করেন। ওইসময় জায়গার বিপরীতে ক্ষতিপূরণের সমুদয় টাকা মালিককে ফেরত দেওয়া হয়। আরো জানা গেছে, অধিগ্রহণের পর পাউবো ওই জায়গায় একটি স্লুইচ গেট স’াপন করেন। এরপর ২০০৯-১০ অর্থবছরের ২৩৯ নম্বর নথিমূলে অবশিষ্ট জিরো দশমিক ৮০ একর জায়গা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিধি মোতাবেক রাজস্ব পরিশোধ সাপেক্ষে পাঁচ বছর মেয়াদে ইজারা দেন স’ানীয় মাস্টার মো.ইয়াকুবের ছেলে ইকবাল ফারুক নামের একব্যক্তিকে।
অভিযোগে উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পালাকাটা মৌজার জায়গার ইজারাদার ইকবাল ফারুক বলেন, পাউবো থেকে বিধি মোতাবেক ওই জায়গা তিনি ইজারা নেওয়ার পর কিছুদিন শান্তিপূর্ণভাবে চাষাবাদ করেন। কিন’ কয়েক বছর ধরে স’ানীয় আবদুল হাকিম গংয়ের লোকজন পাউবোর ওই জায়গা দখলে নিতে চেষ্টা করে আসছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ইতোপূর্বে কয়েকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। বর্তমানে অভিযুক্ত পক্ষের লোকজন জায়গাটি দখলে নিয়ে সেখানে অবৈধ স’াপনা নির্মাণ কাজ করছেন। সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা থাকায় অভিযুক্ত প্রভাবশালী মহলের ভয়ে তিনি প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন।
জানতে চাইলে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান বলেন, বিধি মোতাবেক পাউবো’র লিজ নেওয়া জায়গায় স’ায়ীভাবে কোন ধরণের স’াপনা নির্মাণের নিয়ম নেই। তা ছাড়া চিরিঙ্গা ইউনিয়নের মাছঘাট এলাকায় যারা পাউবো’র অধিগ্রহণকৃত জায়গায় অবৈধ স’াপনা করছেন তারা তো ইজারাদার পক্ষের কেউ নন। জায়গা দখল কিংবা সেখানে স’াপনা নির্মাণের বিষয়টি তো ইজারদার আমাকে অবহিত করেনি। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস’া নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হবে। একই সাথে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস’া নেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।