চকরিয়ার উপকূলীয় ইউনিয়ন বদরখালীতে জমির বিরোধ নিয়ে প্রবাসী হেলাল উদ্দিন শিপু হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার একজন আসামীকেও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। মামলাটি দায়েরের ইতিমধ্যে দুইমাস পেরিয়ে গেছে। এরপরও কোন আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় এবং তারা বীরদর্পে এলাকা ঘুরে বেড়ানোর কারণে চরম নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে আলোচিত এই মামলার বাদী ছকিনা বেগম। তবে পুলিশ বলছে, মামলাটি প্রথমদিকে থানা পুলিশ তদন্ত করলেও বর্তমানে মামলাটি কক্সবাজার সিআইডি (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) পুলিশ তদন্ত করছে।
জানা গেছে, গত বছরের ৪ নভেম্বর দিবাগত রাতে বদরখালী ইউনিয়নের ২নং ব্লকের কুতুবদিয়া পাড়ায় বিরোধীয় জমির দখল নিতে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। বিরোধীয় জায়গাটি পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে দখলে বাঁধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া এলোপাতাড়ি গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় মৃত আবু তাহেরের পুত্র সৌদি প্রবাসী হেলাল উদ্দিন শিপু (২৮)। হত্যাকাণ্ডের দুইদিন পর বিএনপি ও জামায়াত দলীয় একাধিক প্রভাবশালী নেতা ছাড়াও ভাড়াটে সন্ত্রাসীসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ এবং আরো ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে প্রবাসী শিপুর মা ছকিনা বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করে। মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামীদের মধ্যে রয়েছে বদরখালী ইউনিয়নের ২নং ব্লকের বাসিন্দা ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম ইকবাল বদরী, তার ভাই জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউছুপ বদরী, জামায়াত নেতা সোহরাব মোস্তফা রিকন, নুরুল কাদের, ফজল কাদের, এম. হোছাইন আহমদ, এস্তেফাজুর রহমান, কফিল উদ্দিন, মনজুর আলম, শাহাদাত হোসাইন, গিয়াস উদ্দিন, আকতার হোছাইনসহ ৩০ জন।
প্রবাসী হেলাল উদ্দিন শিপুর পরিবারের দাবি, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর গ্রেপ্তার এড়াতে আসামীরা আত্মগোপনে চলে যায়। এর কয়েকদিন পর প্রভাবশালী আসামীরা এলাকায় বীরদর্পে চষে বেড়ায়। কিন্তু এতদিন পেরিয়ে গেলেও একজন আসামীকেও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। ইতিমধ্যে নানাভাবে মামলার বাদী ও পরিবার সদস্যদের হুমকি–ধামকি অব্যাহত রেখেছে আসামীরা। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে পরিবারের সদস্যরা। মামলার বাদী ছকিনা বেগম অভিযোগ করেন, মামলার প্রভাবশালী আসামীরা যখন এলাকায় এসে বীরদর্পে ঘুরছে, তখন তাদের গ্রেপ্তারের জন্য থানা পুলিশকে জানানো হলেও তারা কোন কর্ণপাত করেননি।
মামলাটির প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল আজম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আসলে এই মামলার কোন আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি, এই অভিযোগ সত্য নয়। ইতিপূর্বে আরেকটি ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তারকৃত আবুল হোছাইন ওরফে পাখি ডাকাতকে প্রবাসী শিপু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। পাখি ডাকাত এই মামলার এজাহারনামীয় ২৮ নম্বর আসামী।’ এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ইতিমধ্যে মামলাটি কক্সবাজার জেলা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) ন্যস্ত হয়েছে। মামলার যাবতীয় কাগজপত্রও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই থানা পুলিশের এখানে কিছুই করার নেই। এখন থেকে সিআইডি পুলিশের সঙ্গেই সকল বিষয়ে যোগাযোগ করতে হবে।’