চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর ছরাপাড়া ও পূর্বশিয়াপাড়া এলাকার একই রাতে তিনটি বসতবাড়ীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতদল ঘরের দরজা ভেঙ্গে নগদ টাকাসহ অন্তত ২লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এসময় ডাকাতদলের গুলি ও পিটুনিতে মহিলাসহ তিনজন আহত হয়েছে।
আহতরা হলো-নেজাম ড্রাইভার (৩৫), তার বোন ইয়াসমিন আক্তার (২৫) ও অপর একজনের নাম পাওয়া যায়নি। আহতরা স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন। ১২ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার ভোর রাত তিনটার দিকে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে।
ডাকাতির ঘটনাটি জেনে চকরিয়া থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় নেজাম ড্রাইভারের বাড়ীতে ফেলে যাওয়া ডাকাত দলের ব্যবহৃত একজোড়া জুতা উদ্ধার হয়।
খুটাখালী ছরা পাড়ার বাসিন্দা মাস্টার জাফর আলাম বলেন, ১০-১২ জন মুখোশ পরিহিত সশস্ত্র ডাকাত ভোর রাত তিনটার দিকে গ্রামে হানা দেয়। তারা প্রথমেই এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লে বসতিদের মাঝে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ডাকাতরা পর্যায়ক্রমে নেজাম ড্রাইভার, মনজুর আলম ও নুরুল ইসলামের বাড়ীর দরজা ভেঙ্গে ডাকাতি করে। ডাকাতি হচ্ছে খবর পেয়ে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে ধাওয়া দিলে অপরাপর ঘরগুলো ডাকাত দলের খপ্পর থেকে রক্ষা পায়।
ডাকাত কবলিত গৃহকর্তা নেজাম ড্রাইভার বলেন, দরজা ভেঙ্গে আমার বাড়ীতে ডাকাতরা প্রবেশ করে। সাথে সাথে বন্দুকের বাট দিয়ে আমাকে ও আমার বোন ইয়াসমিনকে পিটিয়ে আহত করে। মুখোশ পরিহিত ডাকাতরা আমার বাড়ী থেকে নগদ ১২ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল সেট, একজোড়া কানের দুল, টর্চ লাইট ও কাপড় চোপড় নিয়ে যায়। একইভাবে অপর দুটি বাড়ী থেকেও নগদ টাকাসহ মালামাল লুট করে বলে জানা গেছে।
এদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে একই ইউনিয়নের পশ্চিম শিয়াপাড়ায় আলতাজ বেগম ও আকতার মেম্বারের বসতবাড়ীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদল এ সময় ঘরের মূল্যবান মালামালসহ তিন লাখ টাকারও বেশী সম্পদ লুট করেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ীর মালিকরা জানায়।
স্থানীয় এক সমাজসেবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, চিহ্নিত ডাকাত ও সন্ত্রাসী জসিম উদ্দিন, ফারুক, এনাম, আজিম, মুজিবসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র পুরো এলাকাকে জিম্মি করে রেখেছে। নতুন অফিস, বহলতলী, মেধা কচ্ছপিয়া এমনকি রামুর ঈদগড় ঢালায় বিভিন্ন সময় সংঘটিত ডাকাতি ও অপহরণের ঘটনার সাথেও এই চক্রটির সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র জানিয়েছে।
খুটাখালী শিয়াপাড়ার সাবেক এক জনপ্রতিনিধি অভিযোগ করেন, চক্রটির বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, অপহরণসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তাদের অনেকেই পলাতক আসামী। স্থানীয় প্রভাবশালী ও অসাধু পুলিশ সদস্যদের সাথের তাদের গভীর সখ্যতা রয়েছে। এদের সাথে ‘পুলিশ সোর্স’ পরিচয়ধারী কয়েকজন ব্যক্তির সম্পৃক্ততা রয়েছে। যে কারণে চিহ্নিত সহসাই ডাকাতি বন্ধ হচ্ছেনা। সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে নেমে আসে নির্যাতন ও নানা হয়রানী। যে কারণে চিহ্নিত চক্রটির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলতে সাহস পায়না।
এ প্রসঙ্গে খুটাখালী ইউপি চেয়ারম্যান আবুদর রহমান মুঠোফোনে বলেন, আমি চট্টগ্রামে রয়েছি। কয়েকটি বাড়ীতে ডাকাতি হয়েছে বলে এলাকার লোকজন আমাকে মোবাইলে জানিয়েছে। এলাকায় ফিরে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, এলাকাটি পাহাড়ী হওয়ায় বিভিন্ন সময় ডাকাতিসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়। পুলিশ পৌঁছার আগেই ডাকাতদল পালিয়ে যায়।
ওসি আরো বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বেকার একটি মামলার বিরোধের জের ধরে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপরও কারো লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।