চকরিয়া ও মহেশখালী পৌরসভা নির্বাচনে সবকটি ভোট কেন্দ্রকে সমান গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা জোরদারে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়োজিত থাকবে জানিয়েছে প্রশাসন।
আগামী ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে কক্সবাজারের চকরিয়া ও মহেশখালী পৌরসভার নির্বাচন। শুক্রবার মধ্যরাতে ( রাত ১২ টা) শেষ প্রার্থীদের প্রচারণা।
এর মধ্যে চকরিয়া পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের ১৮ টি কেন্দ্র এবং মহেশখালী পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের ৯ টি কেন্দ্রই কয়েকজন প্রার্থী ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দাবি করলেও প্রশাসন বলছে, সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের লক্ষ্যে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর থাকবেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, সুষ্ঠভাবে ভোট গ্রহন ও কেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় মহেশখালীতে প্রতি ভোট কেন্দ্রে ২২ জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং র্যাবের ২টি টহল দল, ১ প্লাটুন বিজিবির সদস্য, ১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ও ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।
এছাড়া চকরিয়া পৌরসভার প্রতি ভোট কেন্দ্রে ২২ জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং র্যাবের ৪ টি দল, ১ প্লাটুন বিজিবি সদস্য, ১ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ও ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, কয়েকটি কেন্দ্রের ব্যাপারে কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগ করলেও প্রশাসন সুষ্ঠভাবে ভোট গ্রহণ ও নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নয়। সবকটি কেন্দ্রকে সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসন কাজ করছে।
তবে অভিযোগ উঠা ভোট কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ নয়, বরং প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে জানান তিনি।
গত কয়েকদিনে চকরিয়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীর সমর্থকেরা পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষ, হামলা, হাতাহাতির মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। এতে সাধারণ ভোটারদের মনে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে তারা চরম শঙ্কিত। সেই শঙ্কা আরেকটু বাড়িয়ে দেয় যখন ক্ষমতাসীনদলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও নেতারাও সুষ্ঠু ভোট ও কেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানান।
চকরিয়া পৌরসভার বিমানবন্দর পাড়ার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন (৩৫) বলেন, ‘প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীর সমর্থকরা পরস্পর প্রকাশ্যে যেভাবে হামলা শুরু হয়েছে, আমরা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবো কি না যথেষ্ঠ শংকায় আছি। পর্যাপ্ত র্যাব-বিজিবি না থাকলে ভোটারেরা কেন্দ্রে যাবে না।’
বিএনপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, গত ১২ মার্চ সকালে চকরিয়া পৌরসভার করাইয়াঘোনা এলাকায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী নুরুল ইসলাম হায়দারের স্ত্রী রিফাত সাবরিনা লাঞ্চিত করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা। ওই দিন রাতে পাঁচ-ছয় জন বিএনপি নেতার ঘরে পুলিশ হানা দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী পথসভায় হামলা ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে মেয়র প্রার্থী হায়দার সহ ২ জন আহত হন।
এর আগে ১১ মার্চ চকরিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে তিন ব্যক্তি আহত হন।
দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও পৌরসভা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম গত ৭ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে তার ওয়ার্ডের দুই কেন্দ্রেই নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
রেজাউল করিম বলেন, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও হালকাকারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দুইটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। একজন প্রার্থী এখন থেকেই আমার সমর্থক ভোটারদের হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। প্রতিরাতে ওই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছেন।
একই ওয়ার্ডের আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাউল হকও কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ভোটারেরা যাতে নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রশাসনের। আমরা চাই সুষ্ঠু ভোট হোক। ইতিমধ্যে এক প্রার্থীর কর্মকা- সুষ্ঠু ভোট নিয়ে ভোটারদের মাঝে শঙ্কা তৈরি করেছে।’
জানতে চাইলে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী নুরুল ইসলাম হায়দার সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এ সব কেন্দ্রে সার্বক্ষনিক র্যাব ও বিজিবি নিয়োজিত রাখতে হবে। এখনই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে ও প্রচারণায় বাধা সৃষ্টি করছেন। এতে নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠেছে। আল্লাহ-ই জানে নির্বাচনের দিন কি ঘটে?’
তবে আওয়ামীলীগের মেয়রপ্রার্থী আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘কেন্দ্রগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলবো না। তবে প্রশাসনকে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। যাতে ভোটারদের মনে কোনো ধরণের শঙ্কা তৈরী না হয়। ভোটাররা যাতে স্বত:স্ফুর্তভাবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন।’
পৌর নির্বাচনে মহেশখালীতে বড় ধরণের কোনো সহিংসতা না ঘটলেও প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় পরস্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি করায় ভোটারদের মাঝে সুষ্ঠভাবে ভোট প্রয়োগ ও কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে শংকা তৈরী হয়েছে। মহেশখালীতে মেয়র পদে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রার্থী থাকলেও ভোটযুদ্ধ হবে মূলত আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শক্ত অবস্থানের থাকায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে শংকা ও সংশয় আরও বেড়ে গেছে।
তবে নির্বাচনী মাঠে বিএনপির মেয়র প্রার্থী থাকলেও প্রচার-প্রচারণায় অন্য প্রার্থীদের চেয়ে পিঁছিয়ে রয়েছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘন করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেয়ায় সুষ্ঠভাবে ভোট গ্রহণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরওয়ার আজম।
তিনি বলেন, “স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে ভোটারদের নানা ভাবে প্রলোভিত করছেন। এর পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি কঠোর ভাষায় কথায় বলায় ভোট কারচুপিরও আশংকার সৃষ্টি হয়েছে।”
প্রতিদ্বন্ধি মেয়র প্রার্থী মকসুদ মিয়ার কর্মী-সমর্থকরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন সহ ভোটারদের নানাভাবে হুমকী-ধমকী দেয়ায় কেন্দ্র দখল করে ভোট ছিনতাইয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরওয়ার আজম।
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মকসুদ মিয়ার সাথে কথা হলে জানান, ভোটারদের হুমকী-ধমকী দেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। আওয়ামী লীগের নেতারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেয়ায় ভোট সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে না হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছেন না।
সুষ্ঠভাবে ভোট গ্রহণ ও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য তিনি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি অনুরোধ জানান।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, মহেশখালী পৌরসভার মোট ভোটার ১৭ হাজার ৯৬০ জন। এতে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৯ হাজার ৪১৭ জন এবং নারী ভোটার ৮ হাজার ৫৪৩ জন। নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৯টি ও কক্ষ সংখ্যা ৪২টি।
মহেশখালীতে মেয়র পদে প্রতিদ্ধন্ধিতা করছেন আওয়ামী লীগের ২ জন ও বিএনপির ১ জন প্রার্থী। নয়টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫০ জন এবং নারী কাউন্সিলর পদে ২০ জন প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন।
চকরিয়া পৌরসভায় মোট ভোটার ৪২ হাজার ৩০৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ২২ হাজার ২৬৫ জন এবং নারী ভোটার ২০ হাজার ৪১ জন। নয়টি ওয়ার্ডে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৮টি ও কক্ষ সংখ্যা ১২২টি।
চকরিয়ায় মেয়র প্রার্থী রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ২ জন। নয়টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলার পদে ৪৯ জন এবং নারী কাউন্সিলার পদে ২০ জন প্রার্থী রয়েছেন।