চকরিয়া ও পেকুয়ায় গত ৩দিনের ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। একেবারে সন্নিকটে চলে আসা এবারের ঈদের আনন্দ একেবারে ম্লান করে দিতে পারে লাগাতার এই বৃষ্টি। ইতিমধ্যে চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গার বিপনী বিতানগুলোতে সওদা করতে আসা হাজারো নারী-পুরুষ চরম দুর্ভোগ মাড়িয়ে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা সারছেন। অবস্থা এমন হয়েছে যে, বিপনী বিতানগুলোতে মানুষের সমাগমে তিল ধারণের ঠাঁই পর্যন্ত হচ্ছেনা। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় বিপনী বিতানের বাইরেও যেতে পারছেনা।
এদিকে দুইদিনের ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ছাড়াও পৌরসভার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা হওয়া গ্রামীণ জনপদের মানুষগুলো।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দুইদিনের ভারী বর্ষণে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতবছরের পর পর চারটি ভয়াবহ বন্যায় ভেঙে খান খান হয়ে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলোর সংস্কার না হওয়ায় পাহাড়ি ঢলের পানি নিন্মাঞ্চলে ঢুকতে শুরু করেছে গতকাল সোমবার থেকে। এতে কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সুরাজপুর-মানিকপুর, কোনাখালী, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা, পশিম বড় ভেওলা, সাহারবিল, চিরিঙ্গাসহ অপেক্ষাকৃত নিচু ইউনিয়নগুলোর নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। একইভাবে সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে পেকুয়া উপজেলার মগনামা, রাজাখালী, উজানটিয়া ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নেরও নিন্মঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে সম্প্রতি আঘাত হানা ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর তা-বে ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ১০ হাজার পরিবার। তাদের নেই কোন বসতি, নেই কোন খাবারের সু-ব্যবস্থা। এই অবস্থায় ঈদ আনন্দ নেই বললেই চলে এসব পরিবার সদস্যদের।
চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন, বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার, লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছার, কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শওকত ওসমান, কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেনসহ এসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা বলেন, ‘দুইদিনের ভারী বর্ষণে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সারাদেশ থেকে ঈদ উদযাপনে আসা গ্রামের মানুষগুলো চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বর্ষণ অব্যাহত থাকায়। প্রায় একমাস ধরে ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা থাকা শিশুগুলোর মনে বাঁধ সেধেছে এই বৃষ্টি। পাহাড়ে এবং সমতলে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এবারের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে যেতে পারে। নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় এসব ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।’
পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ চৌধুরী রাজু বলেন, ‘একদিকে পূর্ণিমার প্রভাবে সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি, অন্যদিকে দুইদিনের লাগাতার ভারী বর্ষণে বিপর্যন্ত সাত ইউনিয়নের মানুষ। বেশি বেকায়দায় পড়েছেন সম্প্রতি আঘাত হানা ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুতে বসতবাড়ি হারানো অন্তত ১০ হাজার পরিবার। ইতিমধ্যে উপজেলার প্রায় ৩১ হাজার পরিবারকে ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হয়েছে।’
চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘গতবছর একাধিক ভয়াবহ বন্যায় তো মানুষ ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারেনি। মনে করেছিলাম এবারের রমজানের ঈদে গ্রামের মানুষ প্রাণভরে ঈদের আনন্দ উপভোগ করবে। কিন্তু প্রকৃতির বৈরী আচরণ এবং লাগাতার ভারী বর্ষণে হয়তো এবারের ঈদের আনন্দ ম্লান হতে পারে। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভার দুঃস্থ এবং ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুয় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৩০ হাজার পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে ভিজিএফ চাউল বিতরণ করা হয়েছে।