আর মাত্র ৭ দিন পর আগামী ২০ মার্চ চকরিয়া পৌরসভার অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র কোন প্রার্থী নেই। প্রধান দুই দলের ধানের শীষ ও নৌকার প্রতীক নিয়ে রয়েছেন দুই প্রার্থী যথাক্রমে বিএনপির নুরুল ইসলাম হায়দার (বর্তমান মেয়র) ও আওয়ামীলীগের আলমগীর চৌধুরী। প্রত্যেক প্রার্থী নিজেদের পছন্দ প্রতীক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটযুদ্ধে নেমে শের্ষ মুর্হুতের নিঝুঁম প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। চকরিয়া পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের নিকট ব্যক্তির চেয়ে মূল্যয়ন পাচ্ছে প্রতীক। রাজনৈতিক দলের ব্যানারে এ প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে পৌরসভা নির্বাচন। তবে ক্ষমতাসীন দলের প্রতাপের কারণে সঠিকভাবে সাধারণ ভোটাররা ভোটাধিকার কতটুকু প্রয়োগ করতে পারে তা নিয়ে মাঠে-ঘাটে চলছে কল্পনা-জল্পনা ।
জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভার নির্বাচন চলতি মাসের ২০ মার্চ। আসন্ন এ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন পৌরসভার বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম হায়দার (ধানের শীষ) ও আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আলমগীর চৌধুরী (নৌকা)। দেশের এ প্রধান দুই দলের দুই প্রার্থী হলেও ব্যবধান রয়েছে একটাই। সেটা হলো ক্ষমতাসীন দল আর ক্ষমতাবিহীন দল। আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী ক্ষমতাসীন দলের আর নুরুল ইসলাম হায়দার ক্ষমতাবিহীন দলের। ফলে গেলো কয়েক দফা উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যালট ছেড়াছেড়ি, কেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ নানা অভিযোগ থাকায় সন্দেহ ও আশঙ্কা ভর করছেন চকরিয়া পৌরসভার সাধারণ ভোটারদের উপর, তারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কতটুকু ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন গোলঁক ধাঁধায় পড়েছেন। তবে আসন্ন এ নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে প্রার্থী হিসেবে ব্যক্তি প্রধান্য পাচ্ছেন না। প্রধান্য পাচ্ছে ধানের শীষ আর নৌকা প্রতীক। ভোটাররা ভোট দেবেন প্রতীক দেখে। মাঠ-ঘাট ও চা-দোকানের আড্ডা থেকে যা শুনা যায়, আওয়ামীলীগ গত সাত বছর ধরে ক্ষমতা থাকলেও কতিপয় নেতাকর্মীদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ অনেকটা অতীষ্ঠ। ফলে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভে সাধারণ মানুষ ব্যালটের মাধ্যমে বর্হিপ্রকাশ ঘটাতে পারে। অন্যদিকে এমনিতেই চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি-জামায়াতের দুর্গ হিসেবে খ্যাত। সেখানে আওয়ামীলীগের প্রার্থী যতই যোগ্য হোকনা-কেন সুষ্টু নির্বাচন হলে বিএনপির ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে যিনি প্রার্থী হচ্ছেন তার বিজয় ঠেকানো অসম্ভব হওয়ার সম্ভাবনা।
কয়েকজন ভোটার জানান, চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের টিকেট নৌকা নিয়ে প্রার্থী হওয়া আলমগীর চৌধুরী ব্যক্তি হিসেবে ভদ্র বিনয়ী লোভ লালসা কোন কিছু থাকে স্পর্ট করতে পারে নাই। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হওয়ায় দলে যারা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন সব বিতর্কই তার উপর বর্তাবে নির্বাচনে। অন্যদিকে বিএনপির টিকেট ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম হায়দার বিরোধী দলের ৫ বছর মেয়র ছিলেন। পৌর বিএনপির সভাপতি হিসেবে আছেন। তিনি নানা রকম দুর্ণীতি ও স্বজন প্রীতি করেছেন পৌরসভার দায়িত্ব নিয়ে। এর পরেও দলের ভেতরে বাইরে অনেক বিতর্কে জড়িয়ে থাকলেও সবতর্ক বাইরে রেখে মানসিক প্রশান্তির জন্য দলীয় লোকজন প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বাত্বক সহযোগিতা দিতে পারেন। কারণ শত শত মামলা, হামলার শিকার নেতাকর্মীরা কখনো আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে ভোট দেবে বলে জনশ্রুতি বলছেনা। বিএনপি বা ২০ দলপন্থী ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারলে নৌকা প্রতীক দেখলেই বিস্মিত হয়ে ধানের শীষে ভোট দিতে বাধ্য হবেন। অনেক সাধারণ ভোটারের বক্তব্য, বিএনপির প্রার্থীকে হামাগুড়িঁ দিয়ে ভোট করতে হবেনা, কেবল ধানের শীষের প্রতীক সম্বলিত পোস্টার ভোটারদের নিকট পৌঁছে দিলেই কাজ শেষ। সর্বশেষ আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ব্যক্তি বিষয় নন, প্রতীকই আসল ফ্যাক্টর। পাশাপাশি সুষ্টু নির্বাচন নিশ্চিতে শঙ্কায় ভোটাররা। তবে তৃণমূলে আলমগীর চৌধুরীর পক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি জাফর আলম, উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী ও সমর্থকেরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করে প্রচানায় অংশ নেওয়ায় নৌকার প্রার্থী জয় হচ্ছে বলে ও পৌরবাসীর মধ্যে আওয়াজ উঠেছে। চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৪২৩০৬ জন ভোটার। এ নির্বাচনে মেয়র পদে ২ জন, সংরক্ষতি নারী কাউন্সিলর পদে ২০জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৯জন প্রার্থী লড়ছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার প্রিয় চট্টগ্রামকে বলেন, আমি বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পেরিয়ে গত পাঁচ বছর পৌরসভার দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে আরেকবার নির্বাচিত করলে পৌরবাসীকে নাগরিক জীবনের শেষ স্বাধটা দেওয়া চেষ্টা করব। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী বলেন, আমি জনগণের কাছে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি, তারা আমাকে নির্বাচিত করলে চকরিয়া পৌরসভাকে ঢেলে সাজানো হবে। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে পক্ষ-বিপক্ষের কোন মানুষ যেন অধিকার ও ন্যায়বিচার বঞ্চিত না হয়। সেই সাথে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ক্ষেত্রে অগ্রণী কাজ করবো।