আগামি ২০ মার্চের পৌরসভা নির্বাচনের জন্য চকরিয়া পৌরসভার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের প্রথম দিনে ‘ঝুলে’ থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এক সময়ের বিএনপির সমর্থনে পৌর চেয়ারম্যান হওয়া আনোয়ারুল হাকিম দুলাল ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী জসিম উদ্দিনের প্রার্থিতা অবশেষে বাতিল করা হয়েছে। তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকলেও বুধবার রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত সেটি ‘ঝুলিয়ে’ রাখা হয়েছিল।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মেছবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে দুইদিনের সময়সীমা ছিল। তাই বৈধ ও বাতিল হওয়া প্রার্থীদের তালিকা বৃহস্পতিবার প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্ত বিষয়টি সামগ্রিক ভাবে বিবেচনা করে রাতেই বৈধ ও বাতিল হওয়া প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, চকরিয়া পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমাদানকারি ৪ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী ও বিএনপি মনোনীত বর্তমান পৌর মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দারের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। অপর দুই প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত প্রার্থী আনোয়ারুল হাকিম দুলাল ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী জসিম উদ্দিনকে ঋণ খেলাপির কারণে প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তার মতে, এই পৌরসভায় সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন জমাদানকারি সকল প্রার্থীকেই বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বাছাইকালে দুইজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও বিকালে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জমা দেয়ায় তাদেরও বৈধ ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচন কার্যালয় সূত্র মতে, পৌরসভা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের প্রথম দিন হিসেবে বুধবার সকালে প্রাইম ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের ঋণ খেলাপি ও হালনাগাদ আয়কর বিবরণী দিতে না পারায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারুল হাকিম দুলাল এবং কৃষি ব্যাংকের ঋণ খেলাপী হওয়ায় জাতীয় পার্টি প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র ‘বাতিলে’র তালিকায় রাখা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ খেলাপি হিসেবে আনোয়ারুল হাকিম দুলাল ও জসিম উদ্দিনের তালিকা নির্বাচন কার্যালয়ে থাকার পরও রিটার্নিং কর্মকর্তা তাৎক্ষনিক ঘোষণা না দিয়ে সেটিকে ‘অপেক্ষমান’ রাখেন।
অপরদিকে মনোনয়নপত্র বাছাইকালে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তালিকায় আনোয়ারুল হাকিম দুলাল ও জসিম উদ্দিনের নাম রয়েছে। এছাড়াও আনোয়ারুল হাকিম দুলালের বিরুদ্ধে প্রাইম ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের ঋণ খেলাপি হিসেবে ব্যাংকের পক্ষ থেকে আপত্তি দেয়া হয়। এছাড়াও আনোয়ারুল হাকিম দুলাল মনোনয়নপত্রের সাথে আয়কর সার্টিফিকেট দিলেও তিনি হালনাগাদ আয়কর বিবরণী জমা দেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এই তিন কারণেই তাৎক্ষনিক ভাবে আনোয়ারুল হাকিম দুলালের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার কথা। কিন্তু নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মেছবাহ উদ্দিন সংশ্লিষ্ট আপত্তির পক্ষে কাগজ উপস্থাপনের জন্য তিনঘন্টা সময় দেন। একই সাথে জাতীয় পার্টি জসিম উদ্দিনকেও তিনঘন্টার সময় দেয়া হয়।
তবে যতটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে, আনোয়ারুল হাকিম দুলাল ও জসিম উদ্দিন নতুন করে কোন কাগজপত্র উপস্থাপন করেননি।
ইতিপূর্বে একাধিক আইনজীবী জানিয়েছিলেন, আনোয়ারুল হাকিম দুলালের মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যেহেতু তিনি যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করেননি। হালনাগাদ আয়কর বিবরণীও জমা দেননি। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, আনোয়ারুল হাকিম দুলাল তার মনোনয়নপত্রে সহায় সম্পদের অনেক তথ্য গোপন করেছেন। এনিয়েও অন্য প্রার্থীরা আপত্তি তুলেছেন বলেও জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র আইনজীবী জানান, কোন প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় চাহিদা মতো সবধরণের কাগজপত্র জমা দিতে হবে। জমা দেয়ার পর বাছাইকালে আপত্তির পর তা জমা দিলে হবে না। বিশেষ করে ঋণখেলাপি, বিল খেলাপিসহ সবধরণের খেলাপির ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগেই পরিশোধ দেখিয়ে কাগজপত্র জমা দিতে হবে। যা আনোয়ারুল হাকিম দুলালের বেলায় হয়নি।
এদিকে বুধবার বিকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল হাকিম দুলাল জানান, ব্যাংক ঋণের কারণে তার মনোনয়নপত্রটি স্থগিত রাখা হয়েছে।
তিনি মনে করেছিলেন, এটি সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বৈধতা পাবেন।