চট্টগ্রামে চিকিৎসকেরা চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। চিকিৎসা সেবার জন্য সবাইকে ছুটতে হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ অন্যান্য বিশেষায়িত হাসপাতালে।
তিন সহকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে চিকিৎসকেরা গতকাল বুধবার বিকেল থেকে বেসরকারি হাসপাতাল এবং ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখছেন না।
চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার এই কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে চমেক কর্তৃপক্ষ আজ বৃহস্পতিবার কর্তব্যরত সব চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করেছে। হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে বিএমএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে ল্যাব ও ক্লিনিক সমিতির নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে কর্মসূচির কিছু কিছু বিষয় শিথিল করা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিকিৎসকেরা বেসরকারি হাসপাতালে সিসিইউ এবং আইসিইউ সেবা দিতে পারবেন। এ ছাড়া জরুরি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলো করতে পারবে বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান বলেন, ‘আমরা জটিল রোগীদের কথা চিন্তা করে যেসব ক্লিনিকে আইসিইউ এবং সিসিইউ সেবা রয়েছে সেই সেবাগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছি। এ ছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারবে। ক্লিনিক এবং ল্যাব সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে আমরা এই হাসপাতালের সকল চিকিৎসকের ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিন সহকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিএমএ শনিবার দুপুরে নগরে মানববন্ধন এবং বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের কারণে আজ চট্টগ্রাম মেডিকেলের বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরাও স্বাভাবিকের চেয়ে এদিন রোগীর সংখ্যা বেশি বলে জানান।
হাসপাতালের অন্তর্বিভাগেও অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ রোগী ভর্তির সংখ্যা বেশি ছিল। সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় রোগী ভর্তি ছিল ৫৬০ জন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল সোয়া তিনটা পর্যন্ত ২২৫ জন ভর্তি হয় বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান।
একইভাবে হাসপাতালে হৃদ্রোগ বিভাগের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. রিজোয়ান রেহান বলেন, প্রতিদিন হৃদ্রোগ বহির্বিভাগ থেকে গড়ে ১০-১২ জন রোগী অন্তর্বিভাগে ভর্তি করানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ৩০ জন।
বেসরকারি হাসপাতাল এবং রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোর সামনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বার বন্ধ এবং জরুরি পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া অন্যান্য সেবা বন্ধ রয়েছে মর্মে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে নগরের মিস্ত্রি পাড়ার ব্যবসায়ী মীর নাছিরকে বিকেল চারটার দিকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
মীর নাছিরের স্বজন মো. রাশেদ বলেন, ‘হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন সিএসসিআর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সুস্থ হয়ে গত সপ্তাহে বাসায় ফেরেন। কিন্তু আজ আবার অসুস্থ হওয়ার পর বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়ে এখানে এসেছি।’
তিনি বলেন, রোগীদের জিম্মি করে এরকম আন্দোলন কারও জন্য ভালো নয়।
মো. আবদুর রহিম নামে হৃদ্রোগ বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী বলেন, চেম্বারে সিরিয়াল চেয়ে না পেয়ে বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু এত রোগীর চাপের কারণে ডাক্তারেরা ভালো করে সময় দিতে পারেনি।