রোগী ও স্বজনদের পাঁচ দিনের ভোগান্তির পর মেয়রের আশ্বাস পেয়ে কর্মবিরতি স্থগিত করেছেন চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা।
রোববার বিকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে সংগঠনের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “সম্মানজনক সমাধানের বিষয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করছি।”
সাত দিনের মধ্যে মেয়রসহ সাংবাদিক ও বিএমএ নেতারা মিলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মুজিবুল হকের আগে ওই সমাবেশে বক্তব্য দেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
তিনি বলেন, “ডাক্তার ছাড়া আমাদের বাঁচার কোনো বিকল্প নাই। ফলে মানুষ ডাক্তারের কাছে আসতে বাধ্য। বাধ্য হয়ে আসলেও ডাক্তারদের সম্পর্কে মানুষের মধ্যে একটা বিপরীত ‘পারসেপশন’ আছে।
“অনেক সময় বাস্তবতা বুঝতে না পেরেও রোগীর স্বজনরা ডাক্তারদের ভুল বোঝে। ডাক্তারদের যেমন মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে ঠিক তেমনি মানুষকেও ডাক্তারের ওপর ভরসা রাখতে হবে।”
মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে কর্মবিরতি থেকে সরে আসতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান নাছির।
এর পরপরই বিএমএ চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি ধর্মঘট সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দেন।
চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে বোঝাপড়া তৈরিতে গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করেন চট্টগ্রামের মেয়র।
“মাঝেমধ্যে সাংবাদিকরাও রিপোর্টে একতরফাভাবে ডাক্তারদের ব্লেইম করে যান, যা ঠিক নয়। ডাক্তারদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও রাখতে হবে।”
বিএমএ নেতা মুজিবুল হক খান এসময় গণমাধ্যমের প্রতি চিকিৎসকদের ইতিবাচক বিষয়গুলো জনগণের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
সাংবাদিকদের সঙ্গ ‘দূরত্ব কমানোর’ জন্যও চিকিৎসকদের পরামর্শ দেন তিনি।
চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগের তদন্তে বিএমডিসিকে (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) প্রেস কাউন্সিলের মতো শক্তিশালী করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মুজিবুল হক।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) গাইকোনোলজি বিভাগের প্রধান শাহানারা চৌধুরী বলেন, “সম্পূর্ণ ভয়-ভীতি ছাড়া ডাক্তারি করতে না পারলে সঠিক চিকিৎসা প্রদান ব্যাহত হয়।
“পৃথিবীর সমস্ত দেশে অপারেশনের পরে কমপ্লিকেশন হতে পারে। এটা তো বিজ্ঞানসম্মত বিষয়। সব সময় আমাদের ব্লেইম করাটা ঠিক নয়।”
চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে বিশেষজ্ঞ তদন্তে দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ‘কোনো ধরনের হয়রানি’ না করার দাবি জানান বিএমএ নেতারা।
বন্দরনগরীর বেসরকারি হাসপাতাল ‘সার্জিস্কোপে’ গত ১০ জানুয়ারি সন্তান জন্ম দিয়ে মারা যান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র ছোট ভাই খায়রুল বশরের মেয়ে মেহেরুন্নেসা রীমা (২৫)।
চিকিৎসকের অবহেলায় রীমার মৃত্যু হয় অভিযোগ করে ওইদিন রাতে সার্জিস্কোপ হাসপাতাল ভাংচুর চালায় তার স্বজনরা।
পরে ১৯ জানুয়ারি খায়রুল বশর তার মেয়ের অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সিদ্দিকী রোজী ও তার স্বামী অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগ করেন।
আদালত অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে পাঁচলাইশ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে চট্টগ্রামে ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস’ ও চেম্বার বন্ধ রেখে বুধবার থেকে ধর্মঘট শুরু করে চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ’র চট্টগ্রাম শাখা।
তাদের এ কর্মসূচির কারণে নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হয় রোগীদের। এ পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভিড় বাড়ায় সেখানেও সেবা বিঘ্নিত হয়।
এর মধ্যে শনিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন থেকে সরে আসতে চিকিৎসক দম্পতির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের শর্ত দেন বিএমএ নেতারা।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরোয়ার, সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. শরীফ, বিএমএ চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি গোলাম মর্তুজা হারুণ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ জামিল চৌধুরী ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. বিশ্বজিৎ দত্ত বক্তব্য দেন।