‘তোমরা যারা আজ গ্র্যাজুয়েট, তারা দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। এ সমাবর্তনে তোমাদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। তেমনি আবার দায়িত্বও অর্পন করা হচ্ছে। সে দায়িত্ব পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি। আমার বিশ্বাস ভবিষৎ কর্মজীবনে তোমাদের অর্জিত জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের সৎ এবং ইতিবাচক ব্যবহার করবে। একটি কথা তোমাদের মনে সদা জাগরুক থাকা চাই যে প্রকৃত জ্ঞান কল্যাণমুখী না হলে তা কখনোই জ্ঞান বলে বিবেচ্য নয়।’ গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ৪র্থ সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি উচ্চশিক্ষা পরিধি বৃদ্ধির বিষয়ে বলেন, ‘গবেষণা উচ্চশিক্ষার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। গবেষণার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় নতুন জ্ঞানের। সময়ের চাহিদা বিবেচনায় রেখে সরকার দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শতাধিক। বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে উচ্চশিক্ষার পরিধিও আজ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে উচ্চশিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে আমদের অবিরাম তৎপরতা চালাতে হবে। বাড়াতে হবে গবেষণার ক্ষেত্রও।’ গতকাল দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পশ্চিম পাশে তৈরি করা হেলিপ্যাডে রাষ্ট্রপতিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে। রাষ্ট্রপতি মঞ্চে আসন গ্রহণ করার পর চারটি ধর্মগ্রন্থ থেকে পবিত্র বাণী পাঠ করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিলে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সফলতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। এরপর সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান।
সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ চবির ৪র্থ সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বলেন, ‘স্বপ্ন না থাকলে সাফল্য আসে না। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল সুখী সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এ দেশকে গড়তে হলে তরুণ সমাজকে মূল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে হবে। দেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যেতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ–স্বাধীনতা, চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একসূত্রে গাঁথা। তাই আজ এই সমাবর্তন উৎসবে এসে নিজেকে ধন্য মনে করছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার। সে লক্ষ্য পূরণে আমাদের তরুণ সমাজকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। কারণ তরুণ প্রজন্মই জাতির প্রাণশক্তি, সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। তাদের অমিত সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে হবে। তাদের স্বপ্ন দেখাতে হবে।’
বাংলাদেশ আজ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয়, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তা সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে সরকার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।’
এবারের সমাবর্তনে পিএইচডি, এমফিল, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে মোট ৭ হাজার ১৯৪ জনকে সনদ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, চবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ জে এম নূরুদ্দীন চৌধুরী, সাবেক উপাচার্য ড. এম বদিউল আলম, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, সাবেক উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন, সাবেক উপ–উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শামসুদ্দিন ও প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম, ইউজিসি প্রফেসর ড. মো. আবদুল হাকিম, বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. কামরুল হুদা, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, সিএমপি পুলিশ কমিশনার জলিল মণ্ডল, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, চাকসু’র ভিপি নাজিম উদ্দিন, চবির বিভিন্ন অনুষদের ডিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রভোস্টবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যবৃন্দ সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মকর্তাবৃন্দ।