চরম অব্যবস্থাপনায় কক্সবাজার বইমেলায় বই প্রেমীদের ভীড় নেই : কক্সবাজার বই মেলার সমাপনী দিন আজ
ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
আপডেট সময়
বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৬
৩৩৭
বার পড়া হয়েছে
চরম অব্যবস্থাপনা ও বিতর্কিত ব্যাক্তির পরিচালনায় গত ৩১ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া কক্সবাজার বই মেলায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত বই প্রেমীদের ভীড় জমাতে পারেনি।মেলার আয়োজন অনুযায়ী বই বেচা-কেনা ছিল তুলনামূলক কম।
বই বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বিপুল সংখ্যক মানুষের আনাগুনা থাকলেও সেই তুলনায় বিক্রয় হচ্ছে না। দর্শনার্থীরা শুধু বইয়ের এপিট-ওপিট উল্টিয়ে চলে যাচ্ছে। যে কয়টি বই বিক্রয় হচ্ছে তা বইমেলা হিসেবে অতি নগণ্য।
কক্সবাজারের বই মেলায় দেশের ৪০ টি খ্যাতনামা প্রকাশনী অংশ নিয়েছে। রাখা হয়েছে প্রতিদিন সন্ধ্যায় গানের আসর, নাটক, নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর পরেও বই মেলা কিছুতেই জমাতে পারছেন না আয়োজকরা।ইমদাদুল হক মিলনের মতো বড়মাপের মানুষ দিয়ে উদ্বোধন করিয়েও মেলা জমছেনা।
মেলায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষ, সাহিত্যিক, প্রবন্ধক, গবেষকদের পদচারণা ছিল লক্ষণীয়। কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী বইমেলার গতকাল ছিল ৬ষ্ঠ দিন। আজ ৬ এপ্রিল বুধবার পর্যন্ত চলবে ‘চেতনা জাগরণে বই’ শিরোনামে কক্সবাজার বইমেলা। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত
বিরতিহীনভাবে চলে আসছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই মেলা। মেলায় দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিদিন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখায় যায়, কক্সবাজার বইমেলায় আগামী প্রকাশনী, পঙ্খিরাজ, মেরিট ফেয়ার প্রকাশন, অন্য প্রকাশন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি-কক্সবাজার, অঙ্কুর প্রকাশনী, কথা প্রকাশ, দি ইউনিভার্সেল একাডেমি, অয়ন প্রকাশন, অন্বেষা প্রকাশন, শিকড়, বিজ্ঞান একাডেমি, অন্যন্যা, শোভা প্রকাশ, দি স্কাই পাবলিশার্স, সিদ্দিকীয়া পাবলিকেশন্স, দি রয়েল পাবলিশার্স, বাংলা একাডেমি, আবিস্কার, দিব্য প্রকাশ, বিদ্যা প্রকাশ, তাম্রলিপি, আদর্শ, বিজয় প্রকাশ, কাকলী প্রকাশনী, ঝিনুক প্রকাশন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স, কলি প্রকাশনী, আহমদ পাবলিশিং হাউজ, অনিন্দ্য প্রকাশ, জিনিয়াস পাবলিকেশন্স, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমি সহ প্রায় নামকরা ৩৬টি প্রকাশনা স্টল স্থান পায়। প্রতিটি প্রকাশনা স্টলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ লেখকের বই লক্ষ্য করা যায়।
ঢাকা থেকে আগত বিজ্ঞান একাডেমির স্বত্বাধিকারী বাশার বলেন, ‘বিজ্ঞান একাডেমির বই স্টলে ছোটদের গোয়েন্দা, রহস্য, রূপকথা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, রোমাঞ্চকর, অ্যাডভেঞ্চার, শিকার কাহিনী, হাসি-আনন্দের গল্পসহ ও বাঙালী জাতির শ্রেষ্ঠ কবি-লেখক নিয়ে রচিত বই এবং যেকোন বয়সের বইপ্রেমীদের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বই নিয়ে স্টল সাজানো হয়েছে। তিনি জানান, কক্সবাজার বই মেলাই এই প্রথম এসেছি। গ্রাহক সংখ্যা অপ্রতুল হলেও বইপ্রেমীদের সংখ্যা মোটামুটি রয়েছে। তবে বিক্রয় কম।’
চরম অব্যবস্থাপনা ও প্রচারে অভাবে কক্সবাজারের বইমেলায় বই প্রেমীদের ভীড় জমছেনা্। কতিপয় ব্যাক্তি এই মেলার দায়িত্বে থাকায় কক্সবাজারের অনেক বইপ্রেমী মানুষ মেলায় যাচ্ছেনা্ এমন অভিযোগও রয়েছে।
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় রাতে দর্শনার্থীর দেখা মিলছে বেশি। সেই তুলনায় বই বেচা-কেনা হচ্ছে কম। কারণ মঞ্চে মেয়ে নাচিয়ে আর যা হবে হোক, বই বিক্রি হয়না। বইয়ে ক্রেতারা আলাদা ও সচেতন।
কথা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘বই মেলা হিসেবে বিক্রয় সংখ্যা অত্যন্ত কম। সন্ধ্যায় মানুষের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেলেও সেই তুলনায় বই বিক্রয় হচ্ছেনা। আশা করছি সমাপনী দিন হিসেবে বুধবার অন্যান্যদিনের তুলনায় ভাল হবে।’
এদিকে শাশ্বত বঙ্গ, শত জলঝরণার ধ্বনি, সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ, ভাষা আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু হত্যার ফাঁসির রায় : জেগে উঠো বাংলাদেশ, যে গল্পের শেষ নেই, আধুনিক জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা, রাজনীতির সেকাল ও একাল, শ্রেষ্ঠ বাঙালি, কালান্তর, লালনের পথ ও মত, গল্পগুচ্ছ, গল্পসমগ্র, চোখের বালি, নৌকাডুবি, শেষের কবিতা, গীতাঞ্জলী, সোনারতরী, রক্তকবরী, চিত্র, ক্ষনিকা সহ শ্রেষ্ঠ লেখকদের হাজারো বই নিয়ে সাজানো হয়েছে বই স্টলগুলো। এতে আরও ধর্মীয়, চিকিৎসা, কৃষি, বিজ্ঞান, সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রচুর সমাহার। এছাড়াও রয়েছে বৈদেশিক রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ লেখককের অনুবাদকৃত রচনাবলী ও সমগ্র, জীবনকথা, আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা, উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ, কবিতা, নাটক, রম্য-রচনা, ভ্রমন কাহিনী, জানা-অজানা গ্রন্থ।
বই কিনতে আসা কক্সবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সবুজ বলেন, ‘বই মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে প্রেরণা যোগায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আজকের দিনে পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাহ্যিক বই পড়া আমাদের জন্য আবশ্যক। সেই হিসেবে কক্সবাজার বই মেলার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বইয়ের সমাহার ঘটেছে। যা শিক্ষার্থীদের খুবই উপকারে আসবে।
এদিকে সপ্তাহব্যাপী কক্সবাজার বই মেলার সমাপণী দিন আজ বুধবার। বিকাল ৪টায় জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য সমাপণী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতি সত্তার কবি নুরুল হুদা। এতে সংশ্লিষ্ঠ সবাইকে যথা সময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আনোয়ারুল নাসের।