পুরনো বছরকে বিদায়, নতুন বছরকে বরণ ও ‘মেগা বিচ কার্নিভালকে’ কেন্দ্র করে গত তিন দিনে কক্সবাজারে পর্যটন সংশ্লিষ্ট খাতে প্রায় তিন’শ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায় ফিরে এসেছে চাঙ্গাভাব। এ বছর থার্টি ফাস্ট নাইটের পাশাপাশি ‘পর্যটন বর্ষ ২০১৬’ উপলক্ষে আয়োজিত মেগা বীচ কার্নিভালের আয়োজন থাকায় অন্য বছরের চেয়ে বেশী পর্যটক সমাগম ঘটে কক্সবাজারে। ফলে মুখে হাসি ফুটেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মাঝে।
গত ২/৩ বছর পর্যটক মৌসুমে (নভেম্বর মাস থেকে মার্চ) দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পখাত নেতিবাচক অবস্থায় পড়ে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পর্যটক খরায় ভোগে ‘পর্যটন নগরী কক্সবাজার’। ফলে পর্যটন শিল্পখাতে বিনিয়োগকারীদের গুণতে হয়েছিল বিশাল অংকের লোকসান। কিন্তু এবছর রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকায় থার্টি ফার্স্ট নাইট ও তিন দিনের মেগা বিচ কার্নিভাল ঘিরে কক্সবাজারে সমাগম ঘটে দেশী-বিদেশী লাখো পর্যটকের।
ইংরেজী বর্ষবরণ-বিদায় ও তিন দিনের মেগা বিচ কার্নিভালকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটে কক্সবাজারে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বেড়েছে পর্যটকের আনাগোনা। কক্সবাজারের সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল এখন পর্যটকে ভরপুর। আগত পর্যটকরা ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি কেনা-কাটা সারছেন ঐতিহ্যবাহী বার্মিজ মার্কেট ও শামুক-ঝিনুক মার্কেটসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট নানা বিপননী কেন্দ্র ও প্রতিষ্টানে। এছাড়া হোটেল-মোটেল রেস্তোরাতেও পর্যটকের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমের কারণে কক্সবাজার এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। ফলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা খাতে দেখা দিয়েছে চাঙ্গাভাব।
শুধু হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ-কটেজ কিংবা রিসোর্ট নয়। জমজমাট ছিলো সৈকত এলাকার বার্মিজ মার্কেটগুলোও। যেখানে ছিলো ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে বার্মিজ পণ্য ও আচার, বাদাম, শামুক-ঝিনুকের সৌখিন পণ্য এবং শুটকিসহ অনেক পণ্যের কেনাবেচায় সরগরম ছিলো এসব বিপনী বিতান।
সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট বিচে শামুক-ঝিনুক মার্কেটের দোকানী শামশুল আলম বলেন, গত তিন দিন ধরে আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটায় বিক্রিও বেড়ে গেছে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়েছে।
সৈকত ঝিনুক শিল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি কাশেম আলী জানান, বেচা-কেনা নিয়ে বেশ ভালো সময় পার করছেন। গত ২/৩ বছর পর থার্টি ফার্স্ট নাইট ও মেগা বিচ কার্নিভাল ঘিরে কয়েকদিনে বেচা-কেনা বেশ ভালোই হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরে পর্যটক মৌসুমে আশানুরূপ পর্যটক না আসায় এ বছরের পর থেকে ব্যবসা পরিবর্তন করবো ভাবছিলাম এমন কথা জানিয়ে শহরের উমে বার্মিজ মার্কেটের দোকানী ক্যাজলা রাখাইন বলেন, গত কয়েকদিনের বেচা-কেনায় আবারো আশায় বুক বেঁধেছি। প্রতিদিন অর্ধ-লক্ষাধিক টাকার বিক্রি হচ্ছে।
হোটেল কক্স-টুডে এর ম্যানেজার আবু তালেব বলেন, বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ এবং মেগা বিচ কার্নিভাল ঘিরে এ বছর বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। হোটেলের সবক’টি কক্ষ ৩ জানুয়ারী পর্যন্ত বুকিং রয়েছে। তবে সরকারি উদ্যোগে ভিন্নতর ও বৈচিত্রময় আয়োজনের কারণে এবারে আশাতীত পর্যটকের আগমন ঘটে। গত ৩ দিনে ব্যবসা ভালোই হয়েছে।
হোটেল ভিস্তা বে রিসোর্টের ব্যাবস্থাক ফাতেমা বেগম জানান, মেগা বিচ কার্নিভাল আয়োজন পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক দিক। এ ধরণের উদ্যোগ আরও অনেক আগেই নেয়া দরকার ছিলো। এবারে বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণের সঙ্গে ‘মেগা বিচ কার্নিভালের মতো বৈচিত্রময় নান্দনিক আয়োজন থাকায় বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটেছে। গত তিন দিনে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট খাতের যেসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্টান রয়েছে তাতে অন্তত তিন’শ কোটি টাকার মতো ব্যবসা হয়েছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য এটি অবশ্যই আশাবাদী দিক।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী বলছেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, মহেশখালী, ইনানী, টেকনাফ ও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে গত কয়েকদিনে বেড়াতে এসেছে ৫ লাখেরও বেশি পর্যটক।