বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
টেকনাফ পৌরসভা নির্বাচনে নিজের চাচাকে নৌকার প্রার্থী করতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন বিতর্কিত সাংসদ আব্দুর রহমান বদি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন একজনকে নৌকা প্রতীক পাইয়ে দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করার অভিযোগ উঠেছে বদির বিরুদ্ধে।
ইতিমধ্যে চাচা হাজী মোহাম্মদ ইসলামকে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী করতে প্রয়োজনে অঢেল টাকা বিলি করবেন বলে জনসম্মুখে ঘোষণা দিয়েছেন সাংসদ বদি। কিন্তু আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বদির চাচা। এমনকি উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন আ’লীগের কোন ইউনিট কমিটিতে পর্যন্ত নেই তিনি।
এর আগেও এমপি বদির কারণে ইউপি নির্বাচনে টেকনাফের ৬টি ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। এবারও সাংসদের এই মিশনে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সূত্র জানায়, কোন না কোন বিতর্কিত বিষয় নিয়ে প্রায়ই আলোচনায় থাকেন উখিয়া-টেকনাফের সাংসদ আব্দুর রহমান বদি। বিভিন্ন সময় দুর্নীতি মামলা, ইয়াবা ও মানবপাচার বিষয়ে আলোচনায় থাকলেও এবার বদি আলোচনায় এসেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। ইউপি নির্বাচন থেকেই তার এই বিরোধীতা শুরু। পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে তিনি আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
টেকনাফ পৌর আ’লীগ সূত্র জানায়, ২১ এপ্রিল টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বদির চাচা হাজী মোহাম্মদ ইসলামকে দলীয় একক প্রার্থী ঘোষণার চেষ্টা করা হয়। বিএনপি নেতা ও আ’লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের আয়োজনে সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলম বাহাদুর ও তার ভাই সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ইউছুপ মনু বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে গুটিকয়েক নেতাকর্মী নিয়ে আসলেও সিংহভাগ নেতাকর্মী ছিলেন অনুপস্থিত। এমনকি পৌর আ’লীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী নিজেও জানেন না ওই বৈঠকের বিষয়ে।
তবে বৈঠকে নেতাকর্মীদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে চাচার পক্ষে স্বাক্ষর নিয়ে বদি রেজুলেশন পাস করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি অনেকের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায় করেছেন বলে জানা গেছে।
সাংসদ বদির নেতৃত্বে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তার চাচা হাজী মোহাম্মদ ইসলাম, ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার অভিযোগে আ’লীগ থেকে বহিষ্কৃত টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম, পৌর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল গফুর, বিএনপি নেতা হায়দার আলীসহ কয়েকজন নেতাকর্মী।
এ বিষয়ে হাজী মোহাম্মদ ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও আমি আ’লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাই নৌকা প্রতীক পাওয়ার চেষ্টা করছি। যদি কেন্দ্র থেকে নৌকা না পাই, তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়াবো।
এদিকে আ’লীগের দলীয় নিয়ম অনুযায়ী ইউপি ও পৌর নির্বাচনে জেলা পর্যায়ে নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করবেন ৬ জন। এর মধ্যে পৌর নির্বাচনে- পৌর আ’লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আ’লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচকরা প্রাথমিকভাবে দলীয় প্রার্থীর তালিকা করে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে পাঠাবেন। পরে কেন্দ্রীয় বোর্ড থেকেই দেয়া হবে দলীয় প্রতীকের মনোনয়ন।
দলীয় নিয়ম অনুযায়ী, মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সাংসদরা কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। এমনকি কোন ধরনের নির্বাচনী কার্যক্রমেও অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সাংসদ বদি। তাই ইউপি নির্বাচনের পর এবার পৌর নির্বাচনেও বিতর্কিত ভূমিকা পালন করছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ পৌর আ’লীগ সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এমন একজনকে পৌর আ’লীগের দলীয় একক প্রার্থী ঘোষণার বিষয়টি টেকনাফের ইতিহাসে আওয়ামী রাজনীতিকে কলঙ্কিত করেছে। পৌর মেয়র নির্বাচনে আ’লীগের যোগ্যতাসম্পন্ন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সাংসদ বদির চাচার মনোনয়ন লাভের জন্য সাজানো একটি সভা জননেত্রী শেখ হাসিনার নীতি আদর্শ ও সিদ্ধান্তকে ভূলুন্ঠিত করার প্রয়াস।
তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস কেন্দ্র একজন বিশ্বস্ত ও দায়িত্বশীল কর্মীকে মনোনয়ন দেবে। যার পেছনে দলীয় নেতাকর্মী ও পৌরসভার সাধারণ জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে।
টেকনাফ উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিগত ৫ বছর ধরে আ’লীগের কোথাও সদস্য পর্যন্ত ছিলেন না হাজী মোহাম্মদ ইসলাম। টেকনাফ উপজেলা আ’লীগকে গ্রাস করতে যারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে এটি তার অংশ। এর আগেও ইউপি নির্বাচনে সাংসদ বদি হস্তক্ষেপ করে ৬টি ইউনিয়নে নৌকা ডুবিয়েছেন। পুরো টেকনাফে শেখ হাসিনার নৌকা অচল করে নিজের নৌকা সচল করতে এবার কোটি টাকার মিশনে নেমেছেন তিনি।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, সাংসদের বর্ধিত সভা করার কোন এখতিয়ার নেই। কারণ আ’লীগের মনোনয়ন বোর্ডে সাংসদরা জড়িত নন। কিন্তু সব নিয়মনীতি ও নেত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে সাংসদ বদি বরাবরের মত এবারও আ’লীগের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছেন।
কক্সবাজার জেলা আ’লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, কেন্দ্র থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকায় মনোনয়ন বিষয়ে কোন কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দলের বাইরের কেউ নৌকা প্রতীক পাবেন না বলে দাবি করেন তিনি।