সামরিক বাহিনীকে ত্রিমাত্রিক রূপ দিতে অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম কিনছে বাংলাদেশ। গত সপ্তাহে চীনের দুটি ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুদ্ধজাহাজ নৌবাহিনীতে সংযোজন করা হয়েছে। এর আগে ডিসেম্বরে রাশিয়ান কমব্যাট ট্রেইনার ইয়াক ১৩০ বিমান ও মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ হেলিকপ্টার সংযোজন করা হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালের মধ্যে সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হতে যাচ্ছে ৩০০টি এপিসি। বেশিরভাগ যুদ্ধাস্ত্র চীনের কাছ থেকে সংগ্রহ করলেও অন্য দেশ থেকেও অস্ত্র কিনছে বাংলাদেশ।
স্টকহোমভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপরির হিসাব অনুযায়ী- ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সাতটি দেশ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। এগুলো হচ্ছে- চীন, ইতালি, পাকিস্তান, রোমানিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক ও যুক্তরাজ্য। আবার ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১১টি দেশ থেকে অস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ। এগুলো হলো- চীন, ইতালি, রাশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, জার্মানি, সার্বিয়া, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৪-০৯ সময়ে পাকিস্তান ও রোমানিয়া থেকে সরকার অস্ত্র সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়ে নতুন ছয়টি দেশ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা বলেন, অস্ত্র সরবরাহকারী দেশের মধ্যে চীন, ইসরায়েল, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সার্বিয়াসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে চীন থেকে বড় আকারে অস্ত্র সংগ্রহ করে থাকে। এর পেছনে রাজনৈতিক সম্পর্ক, দুই বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক, অস্ত্রের মূল্য, পেমেন্ট শর্তসহ বিভিন্ন বিষয় জড়িত। কিন্তু এর পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে আমরা বহুমুখী উৎস থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছি। আমাদের নতুন প্রয়োজনের মধ্যে রয়েছে, সুমদ্রসীমা রায়ের ফলে আমরা যে পরিমান জায়গা পেয়েছি তার সুষ্ঠু প্রতিরক্ষা এবং জাতিসংঘের শান্তিবাহিনীর জন্য যে সরঞ্জাম আমরা ভাড়া দেই সেগুলো ক্রয় করা।
সিপরির তথ্য অনুযায়ী- যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে দুটি যুদ্ধজাহাজ ও যন্ত্রাংশ বিশেষ সুবিধার আওতায় কিনেছে। বাংলাদেশ সার্বিয়া থেকে হালকা যান সংগ্রহ করেছে এবং ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ ক্রয় করেছে।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, নীতিগতভাবে বাংলাদেশ ইসরায়েল থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে না। এ কারণে ইউরোপের দেশগুলো থেকে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংকিয়াং এক অনুষ্ঠানে জানান, চীন দুটি যুদ্ধজাহাজ সরবরাহ করেছে। আরও তিনটি জাহাজ এ বছরই সরবরাহ করা হবে।
অন্য দেশ থেকে অন্ত্র সরবরাহের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রয়োজন অনুযায়ী অস্ত্র সংগ্রহ করে। তবে আমরা চাই সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়ুক। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, আমাদের অস্ত্রের মান ভালো এবং দামও তুলনামূলক কম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ডিসেম্বরে এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের সরকার বিমান বাহিনীতে যুক্ত করেছে এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান, এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার, অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র, এসএএম এফএম ৯০। যুদ্ধবিমানসহ সব ধরনের বিমান ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারহোলিংয়ের জন্য নির্মিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটক্যিাল সেন্টার এবং পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বঙ্গবন্ধু ও কক্সবাজার বিমান ঘাঁটি।