আরফাতুল মজিদ : শখের ও স্বপ্নের পোল্ট্রি খামার গড়ে তুলে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে অনেকেই। পোল্ট্রি খামারের পাশাপাশি চাষ করা হচ্ছে রুই, কাতলা ও তেলাপিয়া মাছও। স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে পালন করা হয়েছে নেপালি ছাগল। রয়েছে রাজ হাঁসও। এভাবে সম্বনিত চাষ করে আনছার উল্লাহ খান নামে এক তরুণ উদ্যোক্তা কক্সবাজার চেইন্দা এলাকায় গড়ে তুলেছে ‘ওয়াই এমএ এগ্রোপার্ক’ নামের একটি খামার। বর্তমানে ওই খামার থেকে উৎপাদিত ডিম কক্সবাজার শহরের বাজার গুলোতে সরবরাহ হচ্ছে।
ওয়াই এমএ এগ্রোপার্ক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনছার উল্লাহ খান বলেন, মাত্র দুই বছর আগে চেইন্দা এলাকায় সাড়ে ১১ কানি জমি লাগিয়ত নেন ১৫ বছরের জন্য। কানির প্রতি বছরে লাগিয়ত দিতে হয় ১২ হাজার টাকা। লাগিয়ত ওই জমির একটি পুকুরে প্রথমে রুই ও তেলাপিয়া মাছের চাষ করা হয়। আর পুকুরের উপরে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি টিন শেড পোল্ট্রি খামার। সম্প্রতি বন্যায় পুকুরে চাষ করা মাছের ব্যাপক ক্ষতি হলেও পোল্ট্রি খামারে স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। বর্তমানে খামারে দুই হাজার লেয়ার মুরগী রয়েছে। গত দুই মাস ধরে এসব মুরগী ডিম দিয়ে যাচ্ছে। দৈনিক প্রায় দুই হাজার ডিম এই খামার থেকে শহরের বাজার গুলোতে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। ১০০ ডিম পাইকারি দামে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়।
তরুণ উদ্যোক্তা আনছার উল্লাহ খান বলেন, বর্তমানে আরো ৩ মণ রুই-কাতলা ও ২ মণ তেলাপিয়া মাছের পোনা ছাড়া হয়েছে পুকুরে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই দুই হাজার লেয়ার মুরগী তোলা হবে খামারে। মাছ চাষ ও পোল্ট্রি খামারের পাশাপাশি পরিকল্পনা রয়েছে ডেইরী ফার্ম ও ক্ষেত খামার করার। দুই বছরের মাত্রাই তেমন লাভবান না হলেও আগামীতে সম্বনিত চাষের মাধ্যমে নিজের শখ ও স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি লাভবান হওয়ার আশা করছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা।
ওয়াই এমএ এগ্রোপার্ক এর জেনারেল ম্যানেজার নুরুল হোসাইন বলেন, সঠিক পরিচার্য ও তদারকির মাধ্যমে খামারে ১০ টি নেপালি ছাগল পালন করা হচ্ছে। প্রতিটি ছাগলের দাম রয়েছে ১৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া রাজ হাঁসসহ প্রায় ৩০ টি হাঁসও ডিম দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, খামারে ৫ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কর্মচারীদের বেতন, মুরগী, মাছ ও ছাগলের খাবারসহ অন্যান্য খরচ পড়ছে মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। নিয়মিত পশু চিকিৎসক দিয়েও তদারকি করা হচ্ছে খামার। তাদের এই খামারের সম্বনিত চাষ দেখে অনেকেই এই রকম খামার গড়ে তুলছে।
উদ্যোক্তা আনছার উল্লাহ খানের সহধর্মিণী ওয়াই এমএ এগ্রোপার্ক এর চেয়ারম্যান কুনছুমা আক্তার বলেন, অনেক দিনের শখ ছিল এই রকম একটা খামার গড়ে তোলার। আর এখন সেই শখ পূরণ হওয়ার পথে। সকলের সহযোগিতা ও নিজের আন্তরিকতার অভাব না থাকলে সম্বনিত চাষের মাধ্যমে খামার গড়ে তোলা যায় না। এক্ষেত্রে কোন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসলে কিংবা ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে দেশের বেকার যুবকরা নিজের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে। এতে দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন দুয়ার খুলবে। পাশাপাশি দেশে বেকারত্বও দূর হবে।
পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, চেইন্দা এলাকায় ওয়াই এমএ এগ্রোপার্ক এর পোল্ট্রি খামার গড়ে তোলার জন্য পরিবেশ অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করেই খামারটিতে ডিম উৎপাদন হচ্ছে। এবং খামারের বর্জ্য গুলো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে জৈব সারও তৈরি করছে।