তিনি বলেন, দেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবি ও আনসার আল ইসলামসহ বিচ্ছিন্ন কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন রয়েছে। তাদের সদস্য সংখ্যাও হাতেগোনা কয়েকজন। এর মধ্যে আনসুরুল্লার বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিন কারাগারে রয়েছেন। এই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও অর্থদাতা তেজিব করীম মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। রানা বস্নগার রাজীব হত্যা মালায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
জানা গেছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বেশিরভাগ সদস্য অভিজাত পরিবারের সন্তান। তাদের মধ্যে এক শিল্পপতির সন্তান রয়েছে। এছাড়া সাবেক সচিব ও বিচারপতির পরিবারের সন্তানও রয়েছে এই সংগঠনে। এছাড়া পান্থপথ এলাকায় কোটিপতি দুই ভাই তেজিব করিম ও রাজিব করিম এই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। রাজিব করিম বর্তমান ব্রিটেনের কারাগারে রয়েছেন। তেজিব মালয়েশিয়ায়। এদের মধ্যে তেজিব করিম ভ্রমণ ভিসায় এবং অন্যরা স্টুডেন্ট ভিসায় দেশত্যাগ করে। তেজিব করিমের শ্বশুর ড. আব্দুর রশিদ মূলত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রতিষ্ঠাতা। আরসিইউডি নামে একটি এনজিও এর আড়ালে তিনি এই জঙ্গিদের সংগঠিত করেন। তিনি গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে ও এনজিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর এই সংগঠনের হাল ধরেন মুফতি জসিমউদ্দিন। নাম দেয়া হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। রানা এই সংগঠনের সেকেন্ডম্যান হিসেবে কাজ করে। বস্নগার রাজিব হত্যার পরপরই তেজিব ও রানা মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।
জানতে চাইলে যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিজাত পরিবারের এই সদস্যরা পুলিশি তৎপরতা টের পেয়ে দ্রুত দেশত্যাগ করেন। মালয়েশিয়ায় তাদের সেকেন্ড হোম রয়েছে কিনা এবং তারা ওই দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের রিমান্ডে এনে এ ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। ওইসব তথ্য যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। ছাত্র ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়া সহজ হওয়ার কারণে জঙ্গিরা অনায়াশেই এই সুযোগ নিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আনসারুল্লা বাংলা টিম নিষিদ্ধ হওয়ার পর ওই দলের সদস্যরা আনসার আল ইসলামের ব্যানারে সংগঠিত হয়। মালয়েশিয়া থেকে এই সংগঠনের সদস্যদের অর্থ সহায়তা ও দল চালাতে নানা ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সংগঠনের সদস্যরা অপকর্মের পর পুলিশের কাছে পরিচিতি পাওয়ার আগেই তাদের ছাত্র ভিসায় মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে যাওয়ার আগে ও পরে সব ধরনের খরচ বহন করা হচ্ছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। এছাড়া দেশে অবস্থান করা জেএমবির সদস্যদের সংগঠিত করছে ফারদিন, রাজিব ও পিয়াস নামের তিন যুবক। সম্প্রতি এই সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের তিন সদস্য ক্রসফায়ারে নিহত ও কয়েকজন গ্রেপ্তার হওয়ার পর তারা দায়িত্ব পেয়েছে। এদের মধ্যে সজিব ও পিয়াস ঢাকার দুই জোনের এবং ফারদিন চট্টগ্রামের দায়িত্বে রয়েছেন। ফারদিন চট্টগ্রামের শিল্পপতি পরিবারের সন্তান এবং জেএমবির নতুন দলনেতা। প্রযুক্তি, বোমা-গ্রেনেড তৈরিসহ নানা বিষয়ে পারদর্শী ফারদিন। তার পরিচয় বেরিয়ে আসার পর থেকে সে পলাতক। তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে কিছু দিনের জন্য হলেও স্বস্তি পাবে গোয়েন্দারা।
ডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মিরপুরে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর মোস্ট ওয়ানটেড হিসেবে বোমা শাকিল ও সোহেলের নাম বেরিয়ে আসে। এরপর জেএমবির একটি গ্রুপের ধারণা হয়, পুলিশের অভিযানের বিষয়ে শাকিলের হাত রয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি ক্রসফায়ের নিহত হিরন ও নোমানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয় শাকিলের। হিরন নিহত হওয়ার দিন গ্রেপ্তার হওয়া তিন জঙ্গিকে রিমান্ডে এনে পুলিশ জানতে পারে ওই দ্বন্দ্ব থেকে শাকিলকে খুন করে হিরন। তার মরদেহ কয়েক খ- করে নদীতে ভাষিয়ে দেয়া হয়েছে বললেও সেই নদীর নাম ও স্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেনি গ্রেপ্তারকৃতরা। পুলিশ এই তথ্য গুরুত্বসহকারে নিয়ে তদন্ত করছে। শাকিলকে আড়াল করতে নতুন এই গল্প বানানো হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শাকিল ও সোহেলের ভারতে পলাতক সাজিদের অনুসারী।
ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, বেশ কয়েকটি হত্যাকা-ে জেএমবির সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে এসেছে। তারা আরো একাধিক ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে জেএমবির সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। সম্প্রতি চট্টগ্রামে স্নাইপার রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিরাও রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে নাশকতার জন্য অস্ত্রটি সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ঢাকার কোথায় এই রাইফেল ব্যবহারের কথা ছিল সে বিষয়েও ডিএমপিকে জানায় চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা। এরপর সেসব স্থানে আগাম ব্যবস্থা নেয়া হয়। পাশাপাশি ঢাকায় অবস্থান করা জেএমবির অন্য সদস্যদেরও সন্ধান করা হচ্ছে।