২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা শুমারি হতে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত সম্ভাব্য ছয়টি জেলায় এ শুমারি অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে এর প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। ৪৯টি প্রশ্ন নিয়ে শীঘ্রই মাঠ জরিপ কাজ শুরু হবে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় থেকে এ ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। দেশে বর্তমান কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়া পাড়ায় অবস্থিত দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে প্রায় ৩৩ হাজার নিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক বাস করছে। এদেরকে শরণার্থী মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানা যায়।
চট্টগ্রামের পরিসংখ্যান কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অতীতে বিভিন্ন সময় ক্যাম্প বা এলাকা ভিত্তিক ক্ষুদ্র আঙ্গিকে রোহিঙ্গা শুমারি হলেও বড় পরিসরে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে শুমারি হয়নি। এবার বড় পরিসরে সেটা হতে যাচ্ছে। এতে করে দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ শুমারি সংক্রান্ত প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বিশ্ব ব্যাংক। ‘বাংলাদেশে অবস্থিত অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক শুমারি’ শীর্ষক এ প্রকল্পের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে আগামী মার্চে জরিপের ফল প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের তত্ত্বাবধানে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন এসব শরণার্থীদের একটি ডাটাবেইজ প্রণয়ন ও নিয়মিত হালনাগাদ করে থাকে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হক জানান, প্রথমবারের মত দেশের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও পটুয়াখালি জেলায় শুমারি অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর, উখিয়া, কক্সবাজার ও মহেশখালিতে শুমারির প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ ‘ফিল্ড টেস্ট’ সম্পন্ন হয়েছে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ওয়াহিদুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা শুমারির মাধ্যমে তারাই লাভবান হবে। কারণ শুমারির মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ নানা নাগরিক সুবিধা পাবেন। আর আমাদের কাছেও তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ হিসেব থাকবে।
চট্টগ্রাম পরিসংখ্যান কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা শুমারিতে তাদের সাহায্যের উৎস, পেশা, কাজ, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জাতীয়তাসহ মোট ৪৯টি প্রশ্ন রাখা হয়েছে। নির্ধারিত প্রশ্নের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা শুমারি করা হবে। রোহিঙ্গারা কখনো নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চায় না। আবার স্বীকারও করে না যে তারা মিয়ানমারের বাসিন্দা। ফলে তাদের পরিচয় শনাক্ত করাও একটু কঠিন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা যায়, মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গা ও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক সুযোগ সুবিধার আকর্ষণে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মিয়ানমার নাগরিকরা (রোহিঙ্গা) এ দেশে প্রবেশ করে। কিন্তু এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। আনুমানিক ৩ থেকে ৫ লাখ অবৈধ মিয়ানমারের নাগরিক কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামসহ এর আশপাশের জেলায় বাস করছে। সীমান্তে কড়াকড়ি সত্ত্বেও গড়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন মিয়ানমার নাগরিক দেশে অনুপ্রবেশ করছে বলে জানা যায়। এখানে ঢুকে তারা আবার অনেক ক্ষেত্রে বৈবাহিক সম্পর্কও গড়ে তুলছে। জানা গেছে, মিয়ানমার শরণার্থী ও অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিক সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রণীত জাতীয় কৌশলপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ২০১৪ সালেল ৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিকদের তালিকা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর কৌশলপত্র বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত সভায় পরিসংখ্যান ব্যুরোকে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে শুমারি অনুষ্ঠানের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই আলোকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রথমবারের মতো দেশে রোহিঙ্গা শুমারি।