সাগরে কোন সরকার নেই। সাগরের পুলিশ, নেভি, কোস্টগার্ড সব আমরাই। তাই সাগরে মাছ ধরতে হলে আমাদেরকে ট্যাক্স (চাঁদা) দিয়ে লাইসেন্স (টোকেন) নিতে হবে। অন্যথায় ধরা পড়লে দিতে হবে মুক্তিপণ। কথাগুলো সুন্দরবন এলাকার জলদস্যুদের। গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরের শরণখোলায় মাছ ধরার সময় কুতুবদিয়ার ১৮ জেলেকে আটক করে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। এরমধ্যে ৬ জন জেলে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে মুক্তিপণ দিয়ে শনিবার রাতে কুতুবদিয়ায় ফিরে এসে জলদস্যুদের এ উক্তির কথা জানান। শনিবার রাতে মুক্তি পেয়ে ফিরে আসা জেলেরা হলেন– আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কুমিরার ছড়ার রত্নসেন কোম্পানির বোটের মাঝি সুজন ও সুভাষ, সাগর কোম্পানির বোটের মাহবুবুল হক প্রকাশ মাবুলু ও আজলা, শেখ কামালের বোটের নাছির মাঝি ও লেডু ড্রাইভার। কুতুবদিয়া উপজেলা ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন কোম্পানী জানান– গত ১২ জানুয়ারি বঙ্গোপসাগরের শরণখোলা এলাকা থেকে কুতুবদিয়ার ১২টি বোটের ১৮ মাঝিমাল্লাসহ জেলার বিভিন্নস্থানের অর্ধ শতাধিক মাঝিমাল্লাকে অপহরণ করে জলদস্যুরা। অপহরণের পর ট্রলার মালিকদের কাছে ফোন করে ২০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে জলদস্যুরা। মুক্তিপণ না দিলে মাঝিমাল্লাদের হত্যা করার হুমকিও দেয়। পরে বোটের মালিক ও অপহৃতদের আত্মীয়স্বজনেরা জনপ্রতি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে মুক্তিপণ দিলে ৬ জনকে ছেড়ে দেয় জলদস্যুরা। মুক্তিপণ না দেওয়ায় বাকী জেলেদের এখনও আটকে রাখা হয়েছে। ফিরে আসা জেলে শুভাষ ও সুজন জানান– গত ১২ জানুয়ারি মঙ্গলবার তাদেরকে জলদস্যুরা অপহরণ করে সুন্দরবন সংলগ্ন ভারতের জলসীমার কাছাকাছি নিয়ে রাখে। এরপর মুক্তিপণ পাওয়ার পর খুলনায় নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এসময় জলদস্যুরা জেলেদেরকে বলে সাগরে কোন সরকার নেই। সাগরের পুলিশ, নেভি, কোস্টগার্ড সব আমরাই। তাই সাগরে মাছ ধরতে হলে আমাদেরকে ট্যাক্স (চাঁদা) দিয়ে লাইসেন্স (টোকেন) নিতে হবে। অন্যথায় ধরা পড়লে দিতে হবে মুক্তিপণ। কুতুবদিয়া উপজেলা ফিশিংবোট মালিক সমিতির নেতা জয়নাল আবেদীন কোম্পানী আরো জানান– গত ১২ জানুয়ারি কুতুবদিয়ার বড়ঘোপের হাজী ছাবের কোম্পানীর ২টি বোটের মাঝি আফজল ও মাহবুবুল হক, একই এলাকার আবদুর রশীদ বইল্যা কোম্পানির ১টি বোটের ২ জন, সত্য বহদ্দারের ২টি বোটের ৪ জন, দিদার কোম্পানীর ১টি বোটের ২ জন, আলী আকবর ডেইল কুমিরার ছড়ার রত্নসেন কোম্পানীর ২টি বোটের মাঝি ও ড্রাইভার যথাক্রমে নুর হোছাইন, সুজন, সাজু, সুভাষ ও ওসমান, একই এলাকার শেখ কামালের ১টি বোটের মাঝি ও ড্রাইভার যথাক্রমে নাসির ও লেডু, আলমগীর কোম্পানীর ১টি বোটের মাঝি ও ড্রাইভার যথাক্রমে আব্দুর রহিম ও মিন্টু জলদাশসহ জেলার অন্যান্য এলাকার আরো কয়েকজন জেলেকে অপহরণ করে জলদস্যুরা। বর্তমানে জেলেরা জলদস্যুদের ভয়ে সাগরে মাছ ধরতে যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন।